চিনান উচ্চ ও নতুন প্রযুক্তি পার্কের নানান সুবিধাজনক নীতির কারণে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান এখানে ব্যবসা করার জন্য এসেছে। ২০১৩ সালের জুলাই মাসে 'এডওয়ার্ড আরগো জীবন বীমা কোম্পানি লিমিটেড' চিনান উচ্চ ও নতুন প্রযুক্তি পার্কে এর সদরদপ্তর প্রতিষ্ঠা করে। এটি চীন ও জার্মানির যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত একটি জীবন বীমা কোম্পানি। এ কোম্পানির প্রধান নিবন্ধক ছিয়ান চিয়ান জুন জানালেন, কোম্পানির বিনিয়োগকারী ও অংশীদার হিসেবে জার্মানরা খুবই সাবধানী এবং তারা ব্যবসাসংক্রান্ত প্রাক-তদন্ত করার পাশাপাশি ব্যবসা সম্পর্কে পূর্বধারণাও দিতে সক্ষম। তিনি বলেন, "অবশেষে তাঁরা শানতুং প্রদেশকে বেছে নিয়েছে। এর কারণ, তারা শানতুংয়ের অর্থনৈতিক সুপ্ত শক্তি আর বিনিয়োগ-পরিবেশের প্রতি আস্থাশীল। শানতুংয়ে এক বিশাল বীমাবাজার আছে। চলতি বছর প্রদেশটিতে আর্থিক খাতে ব্যাপক সংস্কার সাধিত হয়েছে। এখানকার বাজারও সত্যিকার অর্থেই বিশাল। যদি আপনার আধুনিক প্রযুক্তি থাকে, ব্যবসা সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকে, থাকে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, তবে এ বাজারে টিকে থাকা সম্ভব।"
ছিয়ান চিয়ান জুন ঠিকই বলেছেন। অনেক বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান চিনানকে বেছে নিয়েছে সঙ্গত কারণেই। চলতি বছর চিনান রপ্তানিমুখী অর্থনীতির উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে এবং বিদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য খুলে দিয়েছে আরো কিছু সুযোগ-সুবিধার দরজা। প্রদেশটি বিদেশিদের জন্য উন্মুক্ত প্লাটফর্ম তৈরি করেছে এবং শুল্ক বিভাগে 'একবার আবেদন, একবার পরীক্ষা, একবার মুক্ত' নীতি চালু করেছে। এসবই করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোর সময় ও ব্যয় কমানোর মহত উদ্দেশ্যে।
এ ছাড়া, চিনান 'আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর'-এর ধারণা কাজে লাগিয়ে, সার্বিক শুল্কমুক্ত এলাকা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তারা শুল্কমুক্ত পণ্যের সংখ্যা বাড়িয়েছে; শিল্প এলাকা প্রতিষ্ঠা এবং সংযোজন ও প্রক্রিয়াকরণ থেকে শুরু করে গবেষণা, নকশা তৈরি, সফট্ওয়্যার নির্মাণকাজে অগ্রগতি অর্জন করেছে; এবং আধুনিক পণ্য স্থানাস্তর পদ্ধতি উন্নত করছে।
চিনান সার্বিক শুল্কমুক্ত এলাকার উন্নয়ন কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ওয়াং ইয়ান বলেন, "সত্যি কথা বলতে কি, গত বছর শুল্কমুক্ত এলাকা প্রতিষ্ঠার অনুমোদন পাওয়ার পর মাত্র ৮০টি শিল্প-প্রতিষ্ঠান এ এলাকায় ব্যবসা করছিল। গত বছর আমাদের ৫.২ বর্গকিলোমিটার শুল্কমুক্ত এলাকায় মোট বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৬০০ কোটি ইউয়ান রেনমিনপি। আর আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮০ কোটি মার্কিন ডলার। শাংহাই, চেনতু, ছোংছিং-এর তুলনায় এটা আসলে তেমন কিছুই নয়। সার্বিক শুল্কমুক্ত এলাকার নিজের বৈশিষ্ট্য আছে। এ এলাকায় উত্পাদিত সব পণ্যই শুল্কমুক্ত। এখানে কিছু লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়, যা নিকটবর্তী অঞ্চলের শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অনুকূল। এটা গোটা সমাজের জন্যও ভালো।"
আগে চীনা জনগণের ধারণা ছিল, উপকূলীয় অঞ্চলের শহরগুলো বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য ভালো জায়গা। কিন্তু আজকাল সে ধারণায় পরিবর্তন ঘটছে। কারণ, চিনানের মতো চারিদিকে ভূভাগ পরিবেষ্টিত শহরগুলোও বিনিয়োগের ভালো জায়গায় পরিণত হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরো বেশি 'মেড ইন শানতুং' পণ্য বিদেশে রপ্তানি হবে এবং আরো বেশি বিদেশি পণ্য শানতুং প্রদেশে আসবে, এমন সম্ভাবনাই বেশি। এ প্রবণতা স্থানীয় শিল্প আর জনসাধারণের জীবনের ওপর ইতিবাচক ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের ধারণা। (ইয়ু/আলিম)
| ||||