Web bengali.cri.cn   
প্রসঙ্গ: চীনে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে আনার প্রচেষ্টা
  2014-09-08 15:34:25  cri


চীনে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ দিন দিন কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। এ প্রচেষ্টারই অংশ হিসেবে গত ৩০ আগস্ট পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত হয় দু'দিন ব্যাপী 'নিম্ন কার্বন উন্নয়ন সংক্রান্ত কৌশলগত ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের আলোচনা'। চীনের জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের উপ-মহাপরিচালক শিয়ে চেন হুয়া আলোচনা সভায় বলেন, চীনে প্রতি বছর বিশ্বের যে-কোনো দেশের তুলনায় বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ হয়। বস্তুত চীনে এই গ্রিন হাউস গ্যাসটির মাথাপিছু নিঃসরণের পরিমাণও বিশ্বের গড় পরিমানের চেয়ে বেশি। চীনের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার লক্ষ্যে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে আনার উপায় অন্বেষণ করাই ছিল এবারের আলোচনা সভার মূল লক্ষ্য।

প্রাপ্ত উপাত্ত অনুসারে, ২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সারা বিশ্বের গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনের গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২.২ শতাংশ। এ দশ বছরে পৃথিবীর ইতিহাসে গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ বেড়েছে সবচে দ্রুত গতিতে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যদি গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসের যথাযথ ব্যবস্থা না-নেওয়া হয়, তবে একবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে পৃথিবীর পৃষ্ঠতলের গড় তাপমাত্রা ৩.৭ থেকে ৪.৮ ডিগ্রি বাড়বে, যার পরিণতি হবে ভয়াবহ।

বিষয়টির গুরুত্ব সম্পর্কে চীন সচেতন আছে এবং দেশটি পরিস্থিতির উন্নয়নে কাজও করে যাচ্ছে। ফলে, চীনে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ কমেছে। এ প্রসঙ্গে চীনের জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের উপ-মহাপরিচালক শিয়ে চেন হুয়া বলেন, "চীনের ইউনিট জিডিপি কার্বন নির্গমনের মাত্রা স্পষ্টভাবে হ্রাস পেয়েছে। ২০১৩ সালে চীনে ইউনিট জিডিপি কার্বন ডাই-অক্সাইডের নির্গমনের পরিমাণ ২০০৫ সালের চেয়ে ২৮.৫৬ শতাংশ হ্রাস পায়। সহজ করে বললে, এটি ২৫০ কোটি টন কার্বন ডাই-অক্সাইড কম নির্গমনের সমান।"

চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক লি ওয়েই সভায় জানান, চীন অর্থনৈতিক উন্নয়ন চায়, দূষণ কমাতে চায় এবং কার্বন নির্গমনের পরিমাণ গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে নামিয়ে আনতে চায়। তিনি বলেন, "২০১৩ সালে চীনে সালফার ডাই-অক্সাইড আর অক্সিনাইট্রাইড নির্গমনের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ২ কোটি ৪০ লাখ ৪০ হাজার টন এবং ২ কোটি ২২ লাখ ৭০ হাজার টন।" এ বছর চীনের অধিকাংশ শহরেই বায়ু দূষণের মাত্রা উচ্চ ছিল বলেও জানান তিনি।

আলোচনা সভায় অংশগ্রহণকারীরা একমত হন যে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া হতে হবে পরিবেশবান্ধব। চীনের জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের উপ-মহাপরিচালক শিয়ে চেন হুয়া বলেন, আজকের শিল্পোন্নত দেশগুলো একসময় শিল্পায়নের খাতিরে অনিয়ন্ত্রিতভাবে গ্রিন হাউস গ্যাসের নিঃসরণ ঘটিয়েছিল। চীন তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করবে না। তিনি বলেন, "আমরা দৃঢ়ভাবে প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সভ্যতা বিনির্মাণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবো, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন খাতে নিম্ন কার্বন নীতি মেনে চলবো, উন্নয়নের পদ্ধতি রূপান্তর করবো, জ্বালানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে জ্বালানি সাশ্রয়ের নীতি মেনে চলবো, জ্বালানির কার্যকারিতা উন্নত করার প্রচেষ্টা চালাবো, এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন করবো।"

সভায় রাষ্ট্রীয় পরিষদের উপদেষ্টা লিউ ইয়ান হুয়া বলেন, "২০১৩ সালে চীনের চাহিদার ৬০ শতাংশ পেট্রোলিয়াম ও ৩০ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করতে হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২০ সালে দেশের চাহিদার ৭০ শতাংশ পেট্রোলিয়াম আর ৫০ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করতে হবে। যদি চীনের পেট্রোলিয়াম আর প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহলাইনে কোনো ত্রুটি দেখা দেয়, তাহলে দেশটিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।"

সম্প্রতি কয়েকটি শিল্পোন্নত দেশ নিম্ন কার্বন উন্নয়ন আর জ্বালানি রূপান্তরের লক্ষ্যে কাজ করছে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করেন, চীনের উচিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পারমাণবিক শক্তি এবং প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্রে আরো উন্নতি করা।

ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হো চিয়ান খুন বলেন, "২০৩০ সালে জার্মানিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের হার দাঁড়াবে ৩০ শতাংশ এবং ২০৫০ সালে তা ৬০ শতাংশে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে, শিল্পায়ন পর্যায়ে রয়েছে বলে চীনের জ্বালানি চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে উৎপাদিত নতুন জ্বালানি দিয়ে দেশে জ্বালানির সম্পূর্ণ চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। তাই চীনে রাসায়নিক ও পেট্রোলিয়াম জ্বালানির চাহিদাও বাড়ছে। এ অবস্থায় পারমাণবিক শক্তি এবং প্রাকৃতিক গ্যাসসহ নিম্ন কার্বন জ্বালানি উন্নয়ন চীনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।" (ইয়ু/আলিম)

মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040