ঘূর্ণিঝড়, সিডর, আইলা, জলোচ্ছাস, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি দিনকে দিন বাড়ছে। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হয়ে বাংলাদেশকে এ ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। শিল্পোন্নত দেশগুলোর লোভের বলি হয়ে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি স্বীকার করতে হচ্ছে বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবির আশঙ্কা, ভবিষ্যতে এ ক্ষয়ক্ষতি আরো ব্যাপক আকার ধারণ করবে। মঙ্গলবার ঢাকায় 'দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি নিরূপণ ও মোকাবিলা' শীর্ষক সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন এডিবির টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট বিন্দু লোহানি। রিপোর্টে বলা হয়েছে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারলে ২০৫০ সালে বাংলাদেশ তার মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপির ২ শতাংশ হারাবে। আর এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২১০০ সালে গিয়ে ক্ষতির পরিমাণ জিডিপির ৯ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়াবে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে ২১০০ সালে বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়বে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ পর্যন্ত। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যেতে পারে এক মিটারের মতো। এতে বাংলাদেশে ব্যাপক হারে বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং খরা পরিস্থিতি দেখা দেবে। বাংলাদেশের ৪৭ হাজার বর্গকিলোমিটার উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। খুলনা ও ঢাকার ১৪ শতাংশ ভূমি জলমগ্ন হতে পারে। এতে বিপুল সংখ্যক মানুষ জলবায়ু শরণার্থীতে পরিণত হবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে সুন্দরবনসহ বনভূমি ও জলাভূমি। দেখা দেবে পানির সংকট, নষ্ট হবে জমির উর্বরতা। খাদ্যশস্য উৎপাদন হ্রাস পেয়ে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার পরিস্থিতি তৈরি হবে।
এডিবি রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ এ ঝুঁকি মোকাবিলার বিষয়টি বহুলাংশে নির্ভর করবে বিশ্ব সম্প্রদায় বিশেষ করে উন্নত দেশগুলো বিষয়টিকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে তার ওপর। যদি বর্তমান পরিস্থিতি বহাল থাকে তবে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে এখন থেকে ২১০০ সাল পর্যন্ত ৭ হাজার ৩০০ কোটি ডলার ব্যয় করতে হবে- যা দেশগুলোর জিডিপির দশমিক ৮৬ শতাংশ। কিন্তু যদি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ্বসম্প্রদায় সমন্বিতভাবে কাজ করে এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে পারে তাহলে দেশগুলোর লোকসান গুণতে হবে অর্ধেকের চেয়ে অল্প কিছু বেশি ৪ হাজার কোটি ডলারের মতো।
এডিপি রিপোর্টে বাংলাদেশের করণীয় সম্পর্কেও পরামর্শ তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কৃষিখাতে মোট শ্রমশক্তির অর্ধেক নিয়োজিত রয়েছে। এ স্পর্শকাতর খাতটিকে রক্ষায় বাংলাদেশকে ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হবে। খরা, বন্যা ও লবনাক্ততা সহনশীল শস্য উদ্ভাবন এবং প্রচলন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে রিপোর্টে। কৃষির বহুমুখীকরণ, সেচকাজে ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের পানির ব্যবহার বাড়ানো, বন্যাসহনশীল অবকাঠামো নির্মাণ এবং বিকল্প জীবিকা উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এডিবি রিপোর্টে।
এডিবি ভাইস প্রেসিডেন্ট বিন্দু লোহানি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ব্যাপক শস্যহানি, ভূমিবিলীন হওয়া, ভূগর্ভস্থ পানি বিষাক্ত হওয়া, বড় একটা জনগোষ্ঠী বাস্তুহারা হওয়া কোনো ভয়াল কল্পকাহিনী নয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া না হলে এটা নির্মম এক বাস্তবতা হিসেবে দেখা দেবে। এডিবি ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশসহ যেসব দেশ এবং যে দরিদ্র জনগোষ্ঠী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের জন্য সমন্বিত নিরাপত্তাজাল কর্মসূচি নিতে হবে এবং বিলম্ব না করেই নিতে হবে এ উদ্যোগ।
মাহমুদ হাশিম, ঢাকা থেকে।
| ||||