বিদ্যুত্ ও অবকাঠামোসহ বেশ কিছু খাতে বাংলাদেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান কমেছে। বিশ্বব্যাংকের শাখা সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্স কর্পোরেশন- আইএফসির জরিপে পাওয়া গেছে এমন তথ্য। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বিরোধীদলের আন্দোলনের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি আবারো খারাপ হতে পারে।
৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের ১ হাজার ৪৪২ জন ব্যবসায়ীর ওপর দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে জরিপ চালায় আইএফসি। এতে দেখা গেছে ৪০ শতাংশ ব্যবসায়ী রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাকে এক নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। ২০০৭ এর নির্বাচনের আগে মাত্র ১২ শতাংশ ব্যবসায়ী একে এক নম্বর সমস্যা বলেছিলেন। ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের লিড অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, জরিপের তথ্য অনুযায়ী ৬ বছরে রাজনৈতিক অস্থিরতাকে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে তিন গুণের বেশি ব্যবসায়ী।
নির্বাচনের পর ৬ মাস পার হলেও বিনিয়োগের মন্দা দশা এখনো কাটেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্যসমাপ্ত সান্মাষিক মুদ্রানীতি বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। সাড়ে ১৬ শতাংশ ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জিত হয়েছে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। সুদ হার কমানোর পরও ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বাড়েনি। ব্যাংকগুলোতে পড়ে রয়েছে বিপুল পরিমাণ অলস অর্থ। মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির পরিমাণও কমেছে এসময়ে।
বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, বিনিয়োগে মন্দা দশা না কাটলেও ধীরে ধীরে পরিস্থিতর ইতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে। দেশে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি অবকাঠামো, যোগাযোগ, জ্বালানি ও বিদ্যুত্ খাতে উন্নতি করতে পারলে রাজনৈতিক অস্থিরতার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
অনেক নেতিবাচক অবস্থার বিপরীতে আইএফসির জরিপে ইতিবাচক অগ্রগতির খবর রয়েছে বাংলাদেশের বিদ্যুত্ খাতে। ২০০৭ সালে যেখানে ৪৩ শতাংশ ব্যবসায়ী বিদ্যুৎ ঘাটতিকে ব্যবসা-বাণিজ্যের বড় বাধা বলে মনে করতেন, এখন সেখানে ২৮ শতাংশ একে বাধা মনে করছেন। জরিপে দেখা গেছে গত ৫ বছরে বাংলাদেশে বিদ্যুত্ উত্পাদন বেড়েছে দ্বিগুণ। গত ১৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ৭ হাজার ৪১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদিত হয়েছে। বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবির তথ্য মতে ওই দিন বাংলাদেশে কোনো লোডশেডিং ছিল না- অর্থাত্ বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদন ছিল সমান সমান। রোজার মাসেই তিন তিন বার রেকর্ড হয়েছে বিদ্যুত্ উত্পাদনে।
তবে, বিশ্বব্যাংকের ঢাকাস্থ লিড অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হাসান মনে করেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশ সাফল্য লাভ করলেও তা যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রেও বাংলাদেশকে আরো অগ্রগতি অর্জন করতে হবে এবং স্থির ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ উত্পাদন নিশ্চিত করতে হবে।
আইএফসির প্রতিবেদনে দেশের বিদ্যুত্ পরিস্থিতির যথার্থ প্রতিফলন ঘটেছে বলে মনে করেন বিদ্যুত্ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। বিদ্যুত্ উত্পাদনে ধারাবাহিকতা ধরে রাখার বিষয়ে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি জানান, বেশ কিছু নতুন কেন্দ্র অচিরেই উৎপাদনে আসবে। চলতি বছরের ডিসেম্বরেই বাংলাদেশে বিদ্যুত্ উত্পাদন ১২ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বিদ্যুত্ প্রতিমন্ত্রী। আর তা সম্ভব হলে দেশের বিনিয়োগে মন্দা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবে এমন আশা করাই যায়।
মাহমুদ হাশিম, ঢাকা থেকে।
| ||||