

জুন মাসে সমাপ্ত পূর্ববর্তী ষাম্মাসিক মুদ্রানীতির ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শনিবার বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে সংবাদ সম্মেলনে জুলাই-ডিসেম্বর অর্ধের জন্য এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। এতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ১৬ শতাংশ এবং সার্বিক প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ২ থেকে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
চলতি ষাম্মাসিক মুদ্রানীতি ঘোষণার আগে গভর্নর আতিউর রহমান জুন, ২০১৪ তে শেষ হওয়া মুদ্রানীতি সাফল্য সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন। বলেন, বিগত মুদ্রানীতি ঘোষণাপত্রের প্রাক্কলন ও প্রক্ষেপণ মোতাবেকই এগিয়েছে। জানান, মে, ২০১৪ পর্যন্ত রিজার্ভ মুদ্রার প্রবৃদ্ধি মুদ্রানীতি প্রোগ্রামে নির্ধারিত ১৬ দশমিক ২ শতাংশ সিলিংয়ের মধ্যে সীমিত রাখা গেছে। এসময়ে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ- যা নির্ধারিত ১৬ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম। গড় ভোক্তা মূল্যস্ফীতি নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশে- যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশের চেয়ে কিছু বেশি। পূর্ববর্তী মুদ্রানীতিতে সার্বিক প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫ দশমিক ৮ থেকে ৬ দশমিক ১ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাথমিক প্রাক্কলনে তা দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ১ এ।
গভর্নর ড. আতিউর জানান, আগের মুদ্রানীতি ঘোষণাপত্রের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী অর্থনীতির বহিঃখাতের স্থিতিশীলতা অব্যাহত ছিল। এসময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ১০০ কোটি ডলারে- যা দিয়ে দেশের ৬ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
আর্থিক খাতে বিগত অর্থবছরের গতিধারার প্রেক্ষাপটে নতুন অর্থবছরের প্রথম ষাম্মাসিক মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে বলে জানান ড. আতিউর। এতে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ডিসেম্বর ২০১৪ নাগাদ রিজার্ভ মুদ্রা ও ব্যাপক মুদ্রার প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৫ ও ১৬ শতাংশ। বৈদেশিক উৎসের আমদানি অর্থায়নসহ বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপিত হয়েছে সাড়ে ১৬ শতাংশ। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। বিভিন্ন উৎপাদনমুখী খাতে অর্থায়ন সুলভ করার জন্য মুদ্রানীতি প্রোগ্রামের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান সমর্থন উদ্যোগগুলো জোরদার করা হয়েছে। যেমন রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল ১২০ কোটি ডলার থেকে বাড়িয়ে ১৫০ কোটি ডলার করা হয়েছে। চাহিদা বাড়লে ভবিষ্যতে এ তহবিলের আকার আরো বাড়ানো হতে পারে। বর্ধিত হারে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে স্থানীয় মুদ্রাবাজার থেকে চলতি মূলধনের পাশাপাশি মেয়াদি ঋণ গ্রহণও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোকে উৎসাহিত করার নীতি অব্যাহত রাখবে।
ড. আতিউর আশা প্রকাশ করেন, নতুন এই মুদ্রানীতি মুদ্রা ও পুঁজিবাজারের স্বস্তিকর স্থিতিশীলতা বজায় রেখে এবং মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রেখে দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান ও উন্নয়ন প্রয়াসে আস্থা ও উৎসাহ যোগানে অবদান রাখবে। এবারের মুদ্রানীতি গতবারের মতোই সতর্ক ও বিনিয়োগবান্ধব বলে মন্তব্য করেন গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন এই মুদ্রানীতিকে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের লিড অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, অর্থনীতি ও আর্থিকখাতের বাস্তবতা মাথায় রেখেই নতুন এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য ফলপ্রসু হবে বলে মন্তব্য করেন ড. জাহিদ।
মাহমুদ হাশিম, ঢাকা থেকে।

| ||||



