

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৬ থেকে ১১ জুন চীন সফর করেন। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াংয়ের আমন্ত্রণে এ সফরের প্রধান বিষয় ছিল দুদেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি। সফরকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী খুনমিংয়ে দ্বিতীয় চীন-দক্ষিণ এশিয়া এক্সপো উদ্বোধন করেন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। পরে বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং ও প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে বিদ্যুৎ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ দুদেশের মধ্যে বেশ কটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এসব প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৫০০ কোটি ডলার। বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪০ বছর পূর্তির প্রাক্কালে শেখ হাসিনার সফল এ চীন সফরকে দুদেশের সম্পর্কের ইতিহাসে মাইলফলক হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ সরকার।
চীনে ৬ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউননান প্রদেশের রাজধানী খুনমিং যান। সেখানে দ্বিতীয় চীন-দক্ষিণ এশিয়া এক্সপো উদ্বোধন করে বলেন, এ মেলা চীনের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটন বৃদ্ধি এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক করিডোরকে অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। চীনকে বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু ও প্রধান উন্নয়ন সহযোগী হিসেবেও অভিহিত করেন তিনি।
খুনমিং থেকে ৮ জুন বেইজিং যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। বৈঠকে দুদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত সহযোগিতা বিষয়ে অনেকগুলো চুক্তি ও সমঝোতাস্মারক স্বাক্ষরিত হয়। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় গার্মেন্টসপল্লী স্থাপন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, রাজশাহী ওয়াসা পানি পরিশোধনাগার প্রকল্প, চট্টগ্রামের কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর দ্বিতীয় রেলসড়ক সেতু নির্মাণ, চট্টগ্রাম-রামু-কক্সবাজার এবং রামু-গুনধুম দ্বৈতগেজ রেললাইন স্থাপন প্রকল্প, ইস্টার্ন রিফাইনারি ইউনিট ২ ও সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্প। এসব প্রকল্পে ব্যয় হবে ৫০০ কোটি ডলার যা চীন সরকার ঋণ ও সহায়তা হিসেবে দেবে বাংলাদেশকে। এছাড়াও সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে সম্মত হয় দুদেশ।
শেখ হাসিনার চীন সফর শেষে ১১ জুন দেশে ফিরে তার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম এ সফরকে শতভাগ সফল বলে দাবি করেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরকে অত্যন্ত সফল ও ফলপ্রসু হিসেবে উল্লেখ করেন। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি ও সমঝোতাস্মারকের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, চীনে প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর আশ্বাস দিয়েছেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে চীনের আর্থিক সহায়তার কথাও তুলে ধরেন পররাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকে দুদেশের সার্বিক সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন।
চীন সফরের সাফল্য ও গুরুত্ব তুলে ধরতে নিজেই সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার গণভবনে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং ও প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াংয়ের সঙ্গে তার বৈঠক অত্যন্ত ফলপ্রসু হয়েছে। চীনা নেতারা বাংলাদেশকে উন্নয়ন সহায়তার পাশাপাশি পাট ও পাটজাত পণ্য আমদানি বাড়াতে এবং দুদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। শিক্ষাবৃত্তি ও ভাতা বাড়ানোর বিষয়েও চীনা নেতারা আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। সার্বিকভাবে তার চীন সফরের ফলে দুদেশের সম্পর্ক আরো জোরদার হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মাহমুদ হাশিম, ঢাকা থেকে।

| ||||



