

১৯৮৪ সালের পর প্রথমবারের মতো নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় বসছে বিজেপি। আর প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন দলটির কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা নরেন্দ্র মোদি। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। আগামী ২২ মে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে পারেন।
ভারতের ভাবী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশের নেতাদের অভিনন্দন:
বিজেপি ক্ষমতায় এলে এবং হিন্দুত্ববাদী নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কী দাঁড়াবে এ নিয়ে সংশয় ছিল আগাগোড়াই। এরই মধ্যে ভারতের ভাবী প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ রাজনৈতিক নেতারা অভিনন্দন জানিয়েছেন মোদিকে। তারা সবাই আশা প্রকাশ করেছেন ভারতে নতুন সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক বজায় থাকবে।
বিজেপির জয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপির ভিন্ন ভাবনা:
ভারতে জাতীয় নির্বাচনে কংগ্রেস জয়ী হলে আওয়ামী লীগ আর বিজেপি জয়ী হলে বিএনপি লাভবান হবে-এমন একটা ধারণা রয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমন্ডলে। কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সুসম্পর্ক বিএনপির মাথাব্যাথার কারণ ছিল। বিএনপি নেতারা এখন মনে করছেন বিজেপির জয়ের ফলে তাদের সুবিধা হবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারে না থাকায় কংগ্রেস এখন আর বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। ফলে আন্দোলন বেগবান করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচন আদায় করা তাদের পক্ষে সহজ হবে।
তবে, বিএনপির এ জাতীয় বক্তব্যকে নাকচ করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিজেপি ক্ষমতায় আসায় বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হবে বলে যারা ভাবেন তারা বোকার স্বর্গে বাস করেন। আওয়ামী লীগ কারো লেজুড় হয়ে থাকবে না বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলির সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদও মনে করেন কংগ্রেস বা বিজেপি- ভারতে যেই ক্ষমতায় থাকুক না কেন বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির কূটনৈতিক সম্পর্কে কোনো পরিববর্তন আসবে না।
ভারত নিজ স্বার্থেই সুসম্পর্ক চাইবে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা:
ভারতের নিজের স্বার্থেই মোদি সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমন, বাংলাদেশের বড় বাজার ধরে রাখা, ট্রানজিট ও বন্দর সুবিধা পেতে ঢাকার সঙ্গে দিল্লির সব সরকারই ভালো সম্পর্ক চাইবে। মোদি সরকারও তার ব্যতিক্রম হবে না।
নিরাপত্তা ও সামরিক বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অবঃ) আব্দুর রশীদ মনে করেন, সরকার পরিবর্তনের ফলে দুদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন হবে না। কথিত বাংলাদেশীদের ভারত থেকে বিতাড়নের বিষয়ে মোদি যে সব বক্তব্য দিয়েছে তা স্রেফ নির্বাচনী বক্তব্য বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশ্লেষক অধ্যাপক এম শহিদুজ্জামান মনে করেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে বিজেপির ভালো সম্পর্ক না থাকায় ঢাকার ব্যাপারে দিল্লির দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা অন্যরকম হতেই পারে। এজন্য দুদেশের সরকারকে সরকার ও দলীয় পর্যায়ে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটানোর উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
তবে, বিজেপি ক্ষমতায় আসায় তিস্তার পানি চুক্তি, ছিটমহল বিনিময় ও সীমান্ত হত্যা বন্ধ করার মতো অনিস্পন্ন বিষয়গুলোর মীমাংসার পথ আরো দীর্ঘায়িত হবে বলে মনে করছেন সবাই।
মাহমুদ হাশিম, ঢাকা থেকে।

| ||||



