Web bengali.cri.cn   
রানা প্লাজা ট্রাজেডির এক বছর : অশ্রু শুকায়নি স্বজনহারা মানুষগুলোর
  2014-04-28 16:54:47  cri

২৪ এপ্রিল, বাংলদেশের পোশাক শিল্পের ইতিহাসে ভয়াবহতম একটি দিন। এক বছর আগে ২০১৩ সালের এ দিনটিতে সাভারে রানা প্লাজার ৯ তলা ভবন ধসে পড়ে। মারা যান ১ হাজার ১৩৫ জন শ্রমিক। আহত হন প্রায় সমানসংখ্যক মানুষ। এতিম হয়ে পড়ে কয়েক শত শিশুকিশোর। রানা প্লাজা ও গার্মেন্টস মালিকদের অনিয়ম আর লোভের বলি হন দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি পোশাক শিল্পের কয়েক হাজার শ্রমিক। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ইতিহাসে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনার পর শ্রম-নিরাপত্তার প্রশ্নে দেশেবিদেশে প্রবল সমালোচনার ঝড় ওঠে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে। টনক নড়ে পোশাক শিল্প মালিক, সরকার ও বিদেশী ক্রেতাদের। উদ্যোগ নেওয়া হয় শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও পূনর্বাসনের। আইনের আওতায় আনা হয় ভবন ও কারখানা মালিকদের। তবে, এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো শুকায়নি স্বজনহারা মানুষগুলোর অশ্রু। পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নয়ন ও শ্রমিকদের নিরাপত্তায় বেশ কিছু কাজ হলেও এখনো বাকি রয়ে গেছে অনেক কিছু।

ক্ষতিপূরণ পাননি অনেকে, পূনর্বাসনের ব্যবস্থা হয়নি বেশির ভাগ শ্রমিকের:

রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহত ১ হাজার ১৩৫ জন শ্রমিকের মধ্যে ৯০৯ জনের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ২২ কোটি ১১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এখনো কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি ২২৬ শ্রমিকের পরিবার। দুর্ঘটনার পর প্রায় ২হাজার ৪০০ জনকে ধ্বংসস্তুপ থেকে উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে আহত হন ১ হাজার ১৬৭ জন- যাদের অনেকেই সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যান। কিন্তু তাদের অনেকেই কোনো সহায়তা পাননি। হয়নি তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা।

আন্তর্জাতিক সংস্থা একশন এইড-বাংলাদেশ পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে দুর্ঘটনায় আহত ৭৩ দশমিক ৭ শতাংশ শ্রমিক এখনো কোনো নিয়মিত কাজ পাননি। একশন এইড- বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন।

পূনর্বাসনে উচ্চ পর্যায়ের জাতীয় কমিটি গঠনের দাবি:

রানা প্লাজা ধসে পঙ্গু শ্রমিকরা যাতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে সেজন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন- বিজিএমইএ। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন আহত ৭৭৭ শ্রমিককে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়া হয়েছে।

তবে, বেসরকারি থিঙ্কট্যাঙ্ক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির এক গবেষণা প্রতিবেদনে সরকার ও বিজিএমইএ'র সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় প্রাথমিকভাবে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাদের পূনর্বাসনে দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ হয়নি। এজন্য সরকারি-বেসরকারি সংগঠনগুলোর সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেছে সিপিডি। এ সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে সরকারের পক্ষ থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের স্থায়ী জাতীয় কমিটি গঠনের পরামর্শ দেন সিপিডি চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান।

আর সরকারের পাশাপাশি মালিকপক্ষ ও বিদেশী ক্রেতারা যদি দায়িত্ব পালন করেন তবে দ্রুত এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে মনে করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শিরিন আক্তার।

ঠিক পথে হাটছে না ইইউ ও বিদেশী ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড এন্ড অ্যালায়েন্স:

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন বিদেশী ক্রেতারা পোশাক শিল্পে পরিবেশ উন্নয়ন ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে চাপ দেয়। তবে, ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স ঠিক পথে হাটছে না বলে অভিযোগ করেছেন গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি তারা চট্টগ্রামে পরিদর্শনে গিয়ে ৪টি কারখানা বন্ধ করে দেয়। এতে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে কারখানায় ভাঙচুর করে। মালিকপক্ষের অভিযোগ কর্মপরিবেশ উন্নয়নের জন্য সময় না দিয়ে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক তহবিলে সহযোগিতা করতে বিদেশী ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে পোশাকখাত সংশ্লিষ্ট তিনটি প্রতিষ্ঠান বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ।

পোশাক খাতে অগ্রগতি হয়েছে, কিন্তু করতে হবে আরো অনেক:

রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক শিল্প খাতে কিছু অগ্রগতি হয়েছে। সরকার ১৪০টি শ্রমিক ইউনিয়নকে রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে। আন্তার্জাতিক শ্রমসংস্থা-আইএলও'র সহযোগিতায় কারখানাগুলোতে নিরাপত্তা পরিদর্শনের জন্য পরিদর্শক নিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে। রানা প্লাজা ট্রাজেডির বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে এসব বিষয়ে বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। তবে, বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা, উপযুক্ত মজুরি দেওয়া, কারখানা পরিদর্শনে আরো পরিদর্শক নিয়োগ, বিশেষ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে শ্রমিকদের ইউনিয়ন করার অধিকার দেওয়াসহ শ্রমিকবান্ধব উদ্যোগ নিতে হবে।

বিচারের অপেক্ষায় রানা প্লাজা ধসে ক্ষতিগ্রস্তরা

রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় এখনো বিচার শুরু হয়নি এর মালিক সোহেল রানার। এ ঘটনায় ভবন ও কারখানা মালিকদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার দুদক সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, রানার বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। দুদক ও সিআইডি যৌথভাবে তদন্ত করছে। খুব শিগগির তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। তারপর শুরু হবে তার বিচার কাজ।

মাহমুদ হাশিম, ঢাকা থেকে।

মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040