Web bengali.cri.cn   
বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগ
  2014-04-08 18:32:44  cri

একটি দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগ। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়লে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বাড়ে, বাড়ে রাজস্ব আয়। বিদেশি বিনিয়োগের ফলে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে। সাধারণত একটি দেশ বিদেশি বিনিয়োগকে নতুন নতুন অবকাঠামো নির্মাণে ও অন্যান্য নতুন প্রকল্পে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে। বিদেশি বিনিয়োগের সাথে একটি দেশে নতুন প্রযুক্তি আসার সুযোগ সৃষ্টি হয়, সুযোগ সৃষ্টি হয় দেশের কর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণের। বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লক্ষণীয় উন্নতি করেছে। সরকার বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বেশ কয়েকটি ইপিজেড বা এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন স্থাপন করেছে। এসব জোন বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রেসেসিং জোন অথরিটি বা বেপজা কর্তৃক পরিচালিত হয়।

প্রাপ্ত উপাত্ত অনুসারে, বাংলাদেশে সবচে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আসছে যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি দেশ থেকে। এ ছাড়া, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, সউদী আরব, নেদারল্যান্ডস, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ফিনল্যান্ড থেকেও দেশটিতে বিনিয়োগ এসেছে বা আসছে। কিন্তু উল্লেখ করার মতো বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের তিন দিকে সীমান্ত যেই দেশের, যেই দেশ বাংলাদেশকে স্বাধীনতাযুদ্ধে সহায়তা করেছিল, সেই বন্ধুরাষ্ট্র ভারত থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিমাণ খুবই কম। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে গত বছরের জুন পর্যন্ত মোট ভারতীয় বিনিয়োগ এসেছে মাত্র ২৮৮ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে শতভাগ ভারতীয় বিনিয়োগ প্রকল্প ৮৬টি এবং যৌথ বিনিয়োগ প্রকল্প ১৯৮টি। বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগের একটা বছরওয়ারী চিত্রও এখানে তুলে ধরা যেতে পারে। ২০০৯ সালে বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগ এসেছে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ডলার, ২০১০ সালে ২ কোটি ৭ লাখ ডলার, ২০১১ সালে সাড়ে তিন কোটি ডলার, ২০১২ সালে ২ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। আর ২০১৩ সালে বিনিয়োগ এসেছে ৪ কোটি ২০ লাখ ডলারের। তুলনা করার জন্য উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেব অনুসারে ২০১৩ সালে বাংলাদেশে মোট ১৭০ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে এবং কোনো একক বছরে এটি সর্বোচ্চ বিনিয়োগ। অর্থাত ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মোট বিদেশি বিনিয়োগের মাত্র ২.৪৭ শতাংশ এসেছে শত কোটি জনসংখ্যার প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে।

প্রশ্ন হচ্ছে কেন এমনটি হচ্ছে? সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার এক হোটেলে ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এবং বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত 'বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ: সুযোগ ও সম্ভাবনা' শীর্ষক একটি সেমিনারে এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ সরন। তিনি বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগের পথে বাধা হিসেবে দু'দেশের মধ্যে তথ্যের ঘাটতি এবং ভুল ধারণা ও ভুল তথ্যের কথা তুলে ধরেছেন; বলেছেন, বিনিয়োগ বাড়াতে হলে এ সমস্যা দূর করতে হবে। ভারতীয় হাইকমিশনার আরো জানিয়েছেন, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগের জন্য ভালো ও উপযুক্ত পরিবেশ আছে এমন দেশ খুঁজছেন। বিনিয়োগের জন্য ভালো পরিবেশ বলতে তিনি বুঝিয়েছেন উপযুক্ত অবকাঠামো, বিদ্যুত ও গ্যাস-সংযোগ, সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ইত্যাদিকে। এসবের নিশ্চয়তা পেলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আরো উত্সাহী হবেন বলেও তিনি সেমিনারে উল্লেখ করেন। এর আগেও ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক সভায় তিনি বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগ সম্প্রসারণের ব্যাপারে আশাবাদ প্রকাশ করেছিলেন।

পঙ্কজ সরন বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টির কথা বলেছেন। একই সেমিনারে বাংলাদেশের বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান এস এ সামাদও বলেছেন এক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জের কথা। শুধু ভারতীয় বিনিয়োগ নয়, অন্যান্য দেশ থেকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও এ চ্যালেঞ্জগুলো বিদ্যমান। তিনি বলেছেন বিনিয়োগ পরিবেশের কথা; বলেছেন অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, রাজনৈতিক অস্থিরতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, পর্যাপ্ত ও উপযুক্ত প্রণোদনার অভাব, তথ্যঘাটতি ও সুশাসনের অভাবের কথা। অবশ্য পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেছেন যে, সস্তা শ্রম, প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসা-পরিবেশ, ভালো ভৌগোলিক অবস্থান, চীনের সাথে সংযোগ বা কানেকটিভিটি, বিনিয়োগের জন্য সরকার কর্তৃক ঘোষিত ভালো প্যাকেজ ও বিভিন্ন প্রণোদনা ইত্যাদির কারণে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে একটি ভালো বিনিয়োগক্ষেত্র।

বাংলাদেশে দেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ দীর্ঘকাল ধরেই একধরনের স্থবিরতায় ভুগছে। এর মধ্যেও তৈরি পোশাকশিল্পের অগ্রগতি, বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ক্রমবর্ধমান হারে পাঠানো বিদেশি মুদ্রা ইত্যাদির কারণে দেশে বেশ কয়েক বছর ধরে প্রায় ৬ শতাংশ হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে। এদিকে মধ্যম আয়ের দেশ হবার লক্ষ্যমাত্রাও ঠিক করেছে দেশের সরকার। তবে এ লক্ষ্য অর্জনে চাই ৮ শতাংশ হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা। বাকি দুই শতাংশ প্রবৃদ্ধির জন্য যে-বিনিয়োগ প্রয়োজন, সেটি আসতে হবে বিদেশ থেকে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান মহোদয় এমনটিই মনে করেন।

বিদেশি বিনিয়োগের জন্য অন্যান্য অনেক কিছুর মধ্যে চাই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের নিশ্চয়তা। সেমিনারে বাংলাদেশের বিদ্যুত বিভাগের সচিব মনোয়ার ইসলাম জানালেন, গত পাঁচ-ছয় বছরে দেশে বিদ্যুত খাতের অনেক উন্নতি হয়েছে এবং গত পাঁচ মাস ধরে চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ করা হচ্ছে। বিতরণব্যবস্থায় রয়ে যাওয়া কিছু কিছু সমস্যা অদূর ভবিষ্যতে থাকবে না বলেও তিনি প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি জানান, বর্তমানে উত্পাদিত বিদ্যুতের ৪০ শতাংশ আসছে বেসরকারি খাত থেকে এবং সরকারি পরিকল্পনা অনুসারে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণের হার আরো বাড়ানো সম্ভব।

বর্তমানে বাংলাদেশে একধরনের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও বিরাজ করছে। এখন সবদলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে এই স্থিতিশীল পরিবেশ একটা স্থায়ী রূপ নেবে বলেও আশা করা যায়। এমনই এক প্রেক্ষাপটে, দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে আরো বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার প্রসঙ্গটি আলোচিত হচ্ছে। দৃশ্যত ভারত প্রত্যাশিত মাত্রায় বিনিয়োগ করলেই এক্ষেত্রে বাংলাদেশের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ হতে পারে। এখন দেখার বিষয়, ভারত ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। অতি সম্প্রতি 'জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশান' বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সবচে ভালো দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশকে ১৫ নম্বরে স্থান দিয়েছে। দেশটিতে বিনিয়োগ পরিবেশও দিন দিন উন্নত হচ্ছে। এমতাবস্থায় ভারতসহ অন্যান্য অনেক দেশই বাংলাদেশে প্রত্যাশিত মাত্রায় বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী হবে বলে আশা করা যেতেই পারে। (আলিম)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040