Web bengali.cri.cn   
অনিশ্চয়তায় বাংলাদেশের জিএসপি
  2014-02-17 17:14:22  cri

বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা বা জিএসপি ফিরে পাবে কিনা – তা নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি। জিএসপি ফিরে পাওয়ার শর্ত পূরণে কিছুটা অগ্রগতি হলেও তা 'যথেষ্ট নয়' বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটিতে এক আলোচনায় দেশটির ব্যুরো অব ইন্টারন্যাশনাল লেবার অ্যাফেয়ার্সের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি এরিক বিয়েল বলেন, জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে বাংলাদেশকে আরো কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, "গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের জন্য যে কর্মপরিকল্পনা দেওয়া হয়েছিল, সে অনুযায়ী যথেষ্ট অগ্রগতি বাংলাদেশ দেখাতে পারেনি।"

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি পুনর্বহাল বিষয়ে শুনানি হবে আগামী মে মাসে। তার তিন মাস আগেই সিনেট কমিটিতে 'বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সমঝোতা ও শ্রমিক অধিকার পরিস্থিতি' শিরোনামে এই আলোচনা হলো। কমিটির চেয়ারম্যান রবার্ট মেনেনদেজের সভাপতিত্বে এই আলোচনায় বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের শ্রম পরিবেশের পাশাপাশি গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ও তার পরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়।

এরিক বিয়েলের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল, এলায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেইফটির পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান এলেন টাউসার এবং বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আকতার শুনানিতে অংশ নেন।

ঢাকার আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড এবং সাভারের রানা প্লাজা ধসে ১৩ শ'র বেশি শ্রমিক নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে গত বছরের ২৭ জুন যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে। তখন বাংলাদেশ জানানো হয়, কারখানা ভবনের কাঠামো ও অগ্নি নিরাপত্তা, কর্ম পরিবেশের উন্নতি এবং শ্রমিকদের সংগঠণ করার সুযোগসহ তাদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য ১৬টি শর্ত পূরণ হলে তবেই এ সুবিধা ফেরত দেয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কখনো জিএসপি সুবিধা না পেলেও, পোশাক কারখানার কর্ম পরিবেশ নিয়েই জিএসপি স্থগিত হয়।

সর্বশেষ আলোচনায় এরকি বিয়েল বলেন, বাংলাদেশ তার ওপর আরোপিত কর্মপরিকল্পনার কিছু বিষয়ে উন্নতি করেছে। তবে কর্মপরিকল্পনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে এখনো অনেক কাজ করতে হবে, যা বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, কারখানারগুলোর জন্য প্রশিক্ষিত অগ্নি ও ভবন পরিদর্শক নিয়োগের বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশ যাতে এ বিষয়গুলো এগিয়ে নেয়, সেজন্য আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।

শুনানিতে বিয়েল বলেন, শর্ত পূরণে গত জুলাইয়ে বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধন করলেও শ্রমিকদের সিবিএ করার ওপর বিধিনিষেধ শিথিল করসহ কর্মপরিকল্পনার কয়েকটি বিষয় আমলেই নেয়া হয়নি।

সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার শতাধিক ট্রেড ইউনিয়নকে কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দিলেও সেগুলো আদৌ মাঠে কার্যকর হবে কি-না যুক্তরাষ্ট্র সেদিকে নজর রাখবে বলেও জানান এই মার্কিন শ্রম কর্মকর্তা। তার মতে, বাংলাদেশের আগের ট্রেড ইউনিয়নগুলোও কার্যকর ভূমিকা নিতে পারেনি।

সম্প্রতি বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে দেখা করার পর ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনাও একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, জিএসপি ফিরে পেতে বাংলাদেশ বেশ কিছু কাজ করেছে, তবে আরো অনেক কাজ বাকি।

তবে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের দাবি, জিএসপি ফিরে পেতে ১৬টি শর্তের মধ্যে ১৩টি পূরণ করা হয়েছে। বাকি তিনটি আরো দুই মাসের মধ্যেই পূরণ করা সম্ভব। যেসব শর্ত পূরণ হয়নি সেগুলো হলো পোশাক কারাখানার জন্য ২০০ জন পরিদর্শক নিয়োগ, ইপিজেড এলাকায় ট্রেড ইউনিয়নের সুযোগ এবং ১৯টি পোশাক কারখানায় শ্রমিক নির্যাতনের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া।

অবশ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, আমেরিকা প্রকাশ্যে শর্তপূরণের কথা বললেও, তারা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে বিবেচনায় নিচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে হলে বাংলাদেশকে আমেরিকার রাজনৈতিক বিষয় বুঝতে হবে এবং সেটি হলো ৫ জানুয়ারির নির্বাচন। তিনি বলেন, আমেরিকা চায় বাংলাদেশে আরেকটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং তার জন্য সংলাপ। সেটা নিশ্চিত না হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা জিএসপি সুবিধাকে চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে। এই সময়ে তাদের কথা-বার্তাতেও তা স্পষ্ট হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

ড. হেলাল বলেন, ৬ এপ্রিল টিকফার প্রথম রাউন্ডের আলোচনা হবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে। টিকফা দু'দেশের মধ্যে একটি বাণিজ্যিক ফোরাম হলেও এটা বাণিজ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে বলে তিনি মনে করেন না। এখানেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয় গুরুত্ব পেতে পারে। তাই তার মতে, আলোচনা শুরু হলেই তা বোঝা যাবে।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, জিএসপি নিয়ে আমেরিকা যা করছে তা ভুল। এ জন্য তিনি বিএনপির 'প্ররোচনাকেও' দায়ী করেন। তিনি বলেন, এই সরকার পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। সুতরাং মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা নেই। (এসআর)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040