

বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড়- ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকার বাজেট ঘোষিত হয়েছে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের জন্য। ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ৫ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত জাতীয় সংসদে এ বাজেট পেশ করেন। চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেট ২৮ হাজার ১৫ কোটি টাকা বেশি।
নতুন বাজেটে সরকারে রাজস্ব আয় দেখানো হয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ৯৪ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি ৬৭ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা। সরকারের আয়ের এক লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকা আসবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড –এনবিআর থেকে। বাকি ৩৩ হাজার কোটি টাকা আসবে এনবিআর বহির্ভূত সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে। ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ঋণ নেয়া হবে ৩১ হাজার ২২১ কোটি টাকা। আর বৈদেশিক ঋণ ও সহায়তা বাবদ পাওয়া যাবে ২৪ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। বাজেটের এক লাখ ৭০ হাজার ১৯১ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রাত্যহিক খরচ, বেতনভাতা ও ঋণ পরিশোধে। আর ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, জনতুষ্টির বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাজেটে সবচেয়ে বেশি ৩০ দশমিক ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ভৌত অবকাঠামো খাতে। এ খাতে রয়েছে কৃষি, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, যোগাযোগ, পদ্মা সেতু প্রকল্প। এরপরই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৫ দশমিক ১৬ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সামাজিক অবকাঠামো খাতে। গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মানবসম্পদ উন্নয়নে। সমাজের অতি দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠির জন্য সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এখাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬ দশমিক ১ শতাংশ। বাজেটকে বিনিয়োগ ও জনবান্ধব বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতি ৬ এর মধ্যে থাকবে বলে আশা করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে কর ও শুল্ক হার কমানোর চাল, চিনি, চার স্ট্রোক অটোরিক্সার ইঞ্জিন, দেশীয় এলপিজি সিলিন্ডার, সম্প্রচার যন্ত্রপাতি, সিমকার্ড, আসবাবপত্র, যন্ত্রাংশ, শিশুদের খেলনা, কাগজ ও সিরামিকের দাম কমবে। আর আমদানি করা ভোজ্যতেল, সিগারেট জর্দা, গুল, বিড়ি, বিদেশি মোবাইল সেট, কোমল পানীয় ও মাইক্রোবাসের দাম বাড়বে। এবারের বাজেটে সাধারণ ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি। তবে, নারী, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বিত্তশালীদের জন্য রাখা হয়েছে সুপার ট্যাক্সের বিধান।
এদিকে, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, সিপিডি ও ইকনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামের বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন ও সেমিনার অর্থনীতিবিদরা বাজেটকে উচ্চাভিলাসী হিসেবে অভিহিত করেছেন। বাজেটে পদ্মা সেতুর মতো বড় বড় অনুৎপাদনশীল খাতে বিপুল অংকের অর্থ বরাদ্দ দেওয়ায় সরকারে ব্যয় বাড়বে বলে মনে করেন তারা। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারাকাত বলেছেন, বাজেটে যে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জন সহজ হবে না। সিপিডির ডিস্টিঙ্গুইসড ফেলো বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যও জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। এছাড়া ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণ ও সহায়তার এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা সরকারকে সমস্যায় ফেলবে বলে মনে করেন তিনি। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান রাজস্ব আয় নিয়ে সরকারকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন। তা না হলে মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। অর্থমন্ত্রী কৌশলে বাজেটে কালো টাকাকে সাদা করার বিধান রেখেছেন বলেও মন্তব্য করেন কেউ কেউ।
অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কার জবাবে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত জোর দিয়ে বলেন, বাজেটে কালো টাকা সাদা করার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। বাজেট উচ্চাভিলাসী হয়েছে বলে স্বীকার করলেও তা বাস্তবায়নের ক্ষমতা সরকারের রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও সম্ভব বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী।
মাহমুদ হাশিম, ঢাকা থেকে।

| ||||



