Web bengali.cri.cn   
বাংলাদেশের সমুদ্র জয়: খুলে গেলো অপার অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দুয়ার
  2014-07-14 19:13:20  cri

বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রসীমা নিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরোধ ছিল দীর্ঘ তিন দশকের। এ বিরোধের মূল বিষয় ছিল দুদেশের জলসীমা শুরুর স্থান নির্ধারণ। দীর্ঘ তিন দশক ধরে বহু বৈঠক করেও এবিষয়ে সমাধানে আসতে পারেনি দুদেশ। ২০০৯ সালে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের বিষয়টি নিয়ে নেদারল্যান্ডসের আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে যায় বাংলাদেশ। সমঝোতা না হওয়ায় ২০১১ সালে একই আদালতে মামলা করে। ২০১২ সালে আদালতে পাল্টা দাবি তুলে ভারত। দুদেশের যুক্তিতর্ক উপস্থান শেষে গত বছরের ডিসেম্বরে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখে আদালত।

গত ৭ জুলাই আদালত মামলার রায় বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে। ৮ জুলাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রায়টি প্রকাশ করেন। আদালতের রায়ে বঙ্গোপসাগরের বিরোধপূর্ণ ২৫ হাজার ৬০২ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে বেশির ভাগ এলাকা- ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটার পেয়েছে বাংলাদেশ। বঙ্গোপসাগরে ভারতের দাবি করা ১০টি তেলগ্যাস ব্লকের অল্প কিছু অংশ ছাড়া সবকটিই পেয়েছে বাংলাদেশ। ভারত এবং এর আগে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র বিরোধ মীমাংসায় বঙ্গোপসাগরে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল মহীসোপানের তলদেশ পর্যন্ত মোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকার সকল প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ প্রায় মূল ভূখণ্ডের সমান জলসীমার মালিক হলো এবং এতে দেশের সামনে এক অপার অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গেছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী এ রায়কে দুদেশের বিজয় বলে অভিহিত করেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবর উদ্দীন দিল্লিতে সংবাদ সম্মেলনে জানান, তার দেশ আদালতের রায় মেনে নিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তিন দশকের সমস্যার সমাধান হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আন্তর্জাতিক আদালতের রায় মেনে নেওয়ায় ভারতকে সাধুবাদ জানায় বাংলাদেশ সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে ভারতের কাছ থেকে বঙ্গোপসাগরে সমুদ্রসীমার ন্যায্য অধিকার আদায় করতে সক্ষম হয়েছে তার সরকার। এ সম্পদ এখন দেশের জনগণের কল্যাণে কাজে লাগানো হবে। সরকারের অবহেলায় তালপট্টিসহ বঙ্গোপসাগরের প্রায় ৬ হাজার বর্গকিলোমিটার জায়গা হাতছাড়া হয়েছে-বিএনপির এমন অভিযোগ নাকচ করে দেন প্রধানমন্ত্রী।

ভারতে সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিয়ে আন্তর্জাতিক সিলিশি আদালতের রায়ে বাংলাদেশ লাভবান হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান, অধ্যাপক কাওসার আহমেদ বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতের রায় ন্যায়সঙ্গত হয়েছে। এতে বিশাল সমুদ্র এলাকার সকল প্রকার সম্পদের ওপর বাংলাদেশের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মৎস ও জলজ সম্পদ আহরণের পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরে ১০টি তেলগ্যাস ব্লকে অনুসন্ধানে বাংলাদেশের আর কোনো বাধা নেই। তবে, এই বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য দক্ষ জনশক্তি এবং সুশাসন দরকার বলে মনে করেন অধ্যাপক কাওসার।

তবে, সমুদ্রসীমায় ন্যায্য অধিকার আদায়ে বাংলাদেশ পুরোপুরি সফল হয়েছে বলে মনে করেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি মনে করেন তালপট্টিসহ সমুদ্রের আরো এলাকা আদায়ে সরকারের আরো করার ছিল। তবে, শুধু মৎস্য সম্পদ আহরণে সীমাবদ্ধ না থেকে সম্পদের বহুবিধ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক ইমতিয়াজ।

আর বহিঃশত্রুর হাত থেকে সমুদ্রসম্পদ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর জোর দেন সমুদ্র আইন বিশেষজ্ঞ নূর মোহাম্মদ। এসব সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে একটি পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠারও পরামর্শ দেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী স্বীকার করেন, বিশাল এলাকার এ সমুদ্র সম্পদ রক্ষা ও আহরণে বাংলাদেশ এখনো পুরোপুরি সক্ষম নয়। তবে, এরই মধ্যে এ সক্ষমতা অর্জনে কাজ শুরু করেছে সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত সচিব, অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার এডমিরাল খুরশেদ আলম জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর শিগগির বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার মানচিত্রের গেজেট প্রকাশ করা হবে।

মাহমুদ হাশিম, ঢাকা থেকে।

মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040