Web bengali.cri.cn   
চীনের প্রেসিডেন্টের ভারত সফর: বাংলাদেশের গণমাধ্যমে উচ্চ মূল্যায়ন
  2014-09-29 18:15:14  cri

দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি দেশ মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও ভারত সফরের শেষপাদে ১৭ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর ভারত সফর করেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং। চীনের প্রেসিডেন্টের ভারত সফর নিয়ে এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ছিল ব্যাপক আগ্রহ। তার মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা সফর নিয়েও বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। তবে, বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে শি চিন পিংয়ের ভারত সফরের খবর।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিজ রাজ্য গুজরাট সফরের মধ্য দিয়ে চীনের প্রেসিডেন্টের সফর শুরুর খবর থেকে আরম্ভ করে দুই নেতার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে ১২টি চুক্তি স্বাক্ষর, আগামী ৫ বছরে ভারতে চীনের ২ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ, দুই নেতার যৌথ সংবাদ সম্মেলন, নয়াদিল্লিতে প্রেসিডেন্ট শির ভাষণ, প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি ও কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে তার সাক্ষাতের খবর- সবই সবিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে। তার সফর নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন, সংবাদ ভাষ্য ও নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকগুলোত। এগুলোতে চীনের প্রেসিডেন্টের ভারত সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফলপ্রসু হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে এ সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য ভারত সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কোনো কোনো নিবন্ধে।

প্রেসিডেন্ট শি'র ভারত সফর নিয়ে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ইংরেজি জাতীয় দৈনিক 'নিউ এজে' বিশ্লেষণমূলক নিবন্ধ লিখেছেন নয়াদিল্লির সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের সিনিয়র ফেলো শ্রীনাথ রাঘাবান। 'ইন্ডিয়া টকস ট্রেড এন্ড পিস উইথ চায়না'- নামক নিবন্ধটিতে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ভারত চীনের বিনিয়োগকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। সফরের আগে চীনের কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট শি ভারতে ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। তবে সফরকালে ৫ বছরের জন্য চুক্তি হয়েছে ২০ বিলিয়িন ডলার বিনিয়োগের। নিবন্ধকার লিখেছেন, স্পষ্টত চীন দেখতে চাচ্ছে ভারত দিক থেকে নেবার যোগ্যতা রয়েছে কী না। প্রধানমন্ত্রী মোদি শি'কে গুজরাটে স্বাগত জানিয়ে নিজেদের সক্ষমতা দেখাতে চেয়েছেন। চীন ভারতের কোম্পানিগুলোর জন্য বাজার সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে তা বাস্তবায়িত কতটুকু হয় তাও দেখার বিষয়। শি'র সড়ক ও মেরিটাইম সিল্ক রোড প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার বিষয়ে ভারত সরকারকে জোরালে অংশগ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে নিবন্ধে। বলা হয়েছে মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা এ বিষয়ে গভীর আগ্রহ দেখিয়েছে। ভারত অংশ নিক বা না নিক, চীন এ পথ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। ভারত অংশ না নিলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আর যোগ দিলে নিশ্চিতভাবে লাভবান হবে। তবে, ভারত যে বিসিআইএম বা বাংলাদেশ, চীন, ইন্ডিয়া, মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর প্রতিষ্ঠায় আগেই সম্মত হয়েছে সে বিষয়ে প্রশংসা করা হয়েছে।

চীন-ভারত বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য বিরোধপূর্ণ সীমান্ত সমস্যার মীমাংসা জরুরি বলে, প্রধানমন্ত্রীর মোদির বক্তব্যকে সমর্থন করা হয় নিবন্ধে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি সীমান্ত সমস্যা সমাধানের যে আশারবাণী শুনিয়েছেন তাকেও চীনা নেতার সদিচ্ছার নিদর্শন স্বাগত জানানো হয়েছে নিবন্ধে।

বাংলাদেশের প্রধান অর্থনীতি বিষয়ক ইংরেজি দৈনিক 'ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেসে' বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন লিখেছেন বার্তা সংস্থা রয়টার্সের নয়াদিল্লি ব্যুরোর ক্রিস্টা মাহর। 'চায়না জয়েনস ন্যাশনস আইয়িং ইন্ডিয়াস সিভিল নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর'- নামে প্রতিবেদনে তিনি বলেন, শির সফরের সময় চীনের কাছ থেকে নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর কেনার বিষয়ে আলাপাআলোচনা শুরুর বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে। দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রীকান্ত কন্ডাপালিনিকে উদ্ধৃত করে তিনি লিখেছেন, এখাতে ১০-১৫ বছরে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার দেবে ভারত। এবিষয়টি কার্যকর হতে কয়েক বছরের লাগবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও রাশিয়ার সঙ্গে পাল্লা দেবে চীন ভারতের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার এ খাতটিতেও প্রবেশ করতে যাচ্ছে।

'চাইনিজ ড্রাগন মিটস দ্য ইন্ডিয়ান এলিফ্যান্ট'- নামে অন্যতম প্রধান ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে কলাম লিখেছেন চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশ্লেষক আশফাকুর রহমান। এ সফর থেকে দুদেশ কী পেল তা বিশ্লেষণ করেছেন তিনি। তার মতে প্রেসিডেন্ট শি'র সফর দুদেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করছে। এনেছে নতুন আশা, শান্তি ও সমৃদ্ধির স্বপ্ন। বাণিজ্য-বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি হস্তান্তরসহ স্বাক্ষরিত ১২টি চুক্তিকে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন। তবে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে হলে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্কের বিষয়টি নিয়েও ভারতকে ভাবতে হবে বলে মনে করেন সাবেক এই রাষ্ট্রদূত।

মাহমুদ হাশিম, ঢাকা।

মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040