1013zhongyin.mp3
|
অনুকূল পরিবেশ আর বিদ্যমান সুবিধাজনক নীতির কারণে চীনের অনেক শিল্প-প্রতিষ্ঠানই ভারতের গুজরাট রাজ্যে বিনিয়োগ করেছে। গত মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ভারত সফরকালে দু'দেশের মধ্যে যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, সেখানে গুজরাটে একটি বিশালাকৃতির চীনা শিল্প পার্ক স্থাপনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ শিল্প পার্ক স্থাপনের কথা বলা হচ্ছে মূলত ভারতে চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো বিনিয়োগে উত্সাহিত করতে। এদিকে, ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন যে, চীন-ভারত সম্পর্ক 'সি চিন পিং-নরেন্দ্র মোদি যুগে' প্রবেশ করেছে। তাদের ধারণা, সি চিন পিংয়ের সফরের পর দু'দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা আরো সম্প্রসারিত হবে।
গুজরাটের আহমেদাবাদ দিয়েই শুরু হয়েছিল চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ভারত সফর। গুজরাটে হিন্দু ধর্মের প্রভাব ব্যাপক। এখানে ফাইভ স্টার হোটেল ছাড়া অন্য কোথাও মদের দোকান চোখে পড়ে না। কিন্তু ভারতের অর্থনীতিতে গুজরাটের অবদান অনেক। জিডিপিতে ভারতের প্রথম সারির রাজ্যগুলোর তালিকায় আছে গুজরাটের নাম।
চীনের যেসব কোম্পানি ভারতে বিনিয়োগ করেছে, 'তেবিয়ান ইলেক্ট্রিসিটি অ্যাপারেটাস স্টক কোম্পানি লিমিটেড' সেগুলোর অন্যতম। এ কোম্পানির বোর্ড চেয়ারম্যান চাং সিন গুজরাটের সবুজ জ্বালানি শিল্প পার্কের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, "গত দু'বছরে আমাদের কোম্পানি ভারতের জাতীয় গ্রিড করপোরেশন, ভারতের জাতীয় তাপ-বিদ্যুত্ কোম্পানি ও রাজ্য বিদ্যুত্ কোম্পানির কাছ থেকে মোট ১৮টি ট্রান্সফর্মার সাবস্টেশন এবং দুই শতাধিক বড় যন্ত্রের ফরমায়েশ পেয়েছে। এ ছাড়া, কোম্পানিটি ছয়টি ট্রান্সফর্মার সাবস্টেশন এবং শহরের একশ কিলোমিটার বিদ্যুত লাইন সংস্কারের কাজ পেয়েছে। এ থেকে আমাদের কোম্পানির ওপর ভারতীয় জনগণের আস্থা প্রতিফলিত হয়।"
'তেবিয়ান ইলেক্ট্রিসিটি অ্যাপারেটাস স্টক কোম্পানি লিমিটেড'-এর সবুজ জ্বালানি শিল্প পার্ক হচ্ছে ভারতে মোদি সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর চীনের সাথে দেশটির প্রথম অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রকল্প। চাং সিন বলেন, গুজরাট রাজ্যের অনুকূল বিনিয়োগ পরিবেশ এবং স্থানীয় সরকার ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জোরালো সমর্থনের কারণেই তিনি এখানে শিল্প পার্ক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেন।
শ্রীমতি আননদিবেন প্যাটেল গুজরাটের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী। তিনিই এ রাজ্যের প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী। তার আগে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদি নিজে। মোদি চলতি বছরের মে মাসে লোকসভা নির্বাচনের পর ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র প্রার্থী হিসেবে দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হন। এর পরপরই প্যাটেল গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তিনি চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে গুজরাটে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, 'তেবিয়ান ইলেক্ট্রিসিটি অ্যাপারেটাস স্টক কোম্পানি লিমিটেড'-এর সবুজ জ্বালানি শিল্প পার্ক স্থানীয় অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করবে এবং স্থানীয় যুব সমাজের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াবে। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "গুজরাট সৌরশক্তিসহ দূষণমুক্ত জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায়ও সচেষ্ট হওয়া উচিত। আমরা আশা করি, তেবিয়ান কোম্পানির দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পও যথা শিগগির সম্ভব শুরু হবে।"
চীন-ভারত অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি অনুসারে, গুজরাট ও মহারাষ্ট্র রাজ্যে দুটি চীনা শিল্প পার্ক প্রতিষ্ঠা করা হবে। আশা করা যায় যে, তখন আরো বেশি চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠান ভারতে যাবে। প্রস্তাবিত এ দুটি শিল্প পার্কে বিনিয়োগের মোট পরিমাণ ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি।
গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক কার্তিক এম ভাট বললেন, "চীনা শিল্প পার্ক প্রতিষ্ঠা থেকে লাভবান হবে আহমেদাবাদ শহর, গুজরাট রাজ্য ও গোটা ভারত। গুজরাটে অনেক শিল্প পার্ক রয়েছে। কিন্তু চীনা কোম্পানিগুলো প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভারতের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে। ভারতের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে মূল্যবান অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান আয়ত্ত করতে পারবে বলে আশা করা যায়।"
মুম্বাইয়ে চীনের কনসল জেনারেল লিউ ইয়ো ফা বলেছেন, ভারতের যোগাযোগ, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প ও আধুনিক গ্রামসহ নানা প্রকল্পের ব্যাপারে চীনের আগ্রহ আছে। চীন ভারতের রেল যোগাযোগ খাতে আরো বিনিয়োগ করতে চায়।
ভারতের চীন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ শ্রীকান্থ কোন্ডাপাল্লি মনে করেন, রেলপথসহ বিভিন্ন অবকাঠামো খাতে দু'দেশের সহযোগিতার সম্ভাবনা অপার। তিনি বলেন, "আমরা দু'দেশের মধ্যে অবকাঠামো খাতে আরো সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি। এ সহযোগিতা হতে পারে দ্রুতগতির সড়ক, সাধারণ রেলপথ, দ্রুতগতির রেলপথ ইত্যাদি খাতে। তা ছাড়া, ভারতের বিদ্যুত্ এবং টেলিযোগাযোগ খাতে চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগেরও অনেক সুযোগ আছে।"
গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কার্তিক এম ভাট মনে করেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চীন-ভারত সহযোগিতার ভবিষ্যত উজ্জ্বল। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সফরের পর দু'দেশের নেতারদের সম্পর্ক আরো জোরদার হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, "প্রতিবেশী হচ্ছে সবচেয়ে ভালো অংশীদার। চীন ও ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ আদান-প্রদানের ঐতিহাসিক উদাহরণ আছে। ভারতের নতুন সরকার চীনের সাথে সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়। দু'পক্ষের উচিত সহযোগিতা আরো জোরদার করা।" (ইয়ু/আলিম)