|
0619lvyou
|
সিআন শহর চীনের একটি বিখ্যাত ও ঐতিহাসিক শহর। প্রাচীনকালে চীনের ১৩টি রাজবংশ আমলে সিআন দেশের রাজধানী ছিল। বিভিন্ন রাজবংশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্মৃতি আজো বহন করছে সিআন শহর। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা আপনাদের নিয়ে এই বৈশিষ্ট্যময় ঐতিহাসিক শহরে বেড়াতে যাবো এবং স্থানীয় অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করবো।
আলিম. আচ্ছা, সিআন শহর কিন্তু আমাদের শ্রোতাবন্ধুদের কাছেও পরিচিত। কারণ, এর আগের এক অনুষ্ঠানে আমরা এ-শহরের পরিচয় খানিকটা তুলে ধরেছিলাম। প্রাচীনকালে ছিন রাজবংশ আমলের সৈন্য ও ঘোড়ার টেরাকোটা সি'আন শহরের সবচে বিখ্যাত দর্শনীয় বস্তু। এই টেরাকোটাকে বিশ্বের 'অষ্টম আশ্চর্য' হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
সুবর্ণা. হ্যাঁ, ২০১১ সালে আমি সি'আন ভ্রমণ করেছি। শহরের কেন্দ্র থেকে পূর্ব দিকে হাইওয়েতে প্রায় আধা ঘন্টা গাড়ি চালিয়ে ছিন রাজবংশ আমলের সৈন্য ও ঘোড়ার টেরাকোটা জাদুঘরে যাওয়া যায়। এ-দর্শনীয় স্থানের চীনা নাম 'বিংমাইয়োং'। প্রতিদিন দেশ বিদেশের অনেক পর্যটক স্থানটি পরিদর্শনে আসেন। খৃষ্টপূর্ব ২২১ সালে প্রাচীনকালের ছিন রাজবংশের রাজা ছিনশিহুয়াং প্রথমবারের মতো গোটা চীনকে এক করে একটি অখণ্ড রাষ্ট্র গঠন করেছিলেন। এসময় তিনি নিজের জন্য একটি বড় আকারের সমাধিও নির্মাণ করেন। এসব সৈন্য ও ঘোড়ার টেরাকোটা রাজা ছিনশিহুয়াং-এর জীবিতকালেই নির্মাণ করা হয়। এসব মূর্তির আকার প্রমাণ আকৃতির মানুষ ও ঘোড়ার চেয়ে একটু বড়। সৈন্যদের মূর্তিগুলোর চেহারা ও দেহভঙ্গিও ভিন্ন ভিন্ন। দেখলে মনে হয়, সত্যি সত্যি কোনো সৈন্য সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রাজা ছিনশিহুয়াংয়ের সমাধির পূর্ব দিকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে একটি গ্রাম ছিল। গ্রামের নাম 'শিইয়াং গ্রাম'। ১৯৭৪ সালের মার্চ মাসে এ-গ্রামের বাসিন্দা ইয়াং চি ফাসহ প্রায় ১০ জনেরও বেশি লোক কুয়া খনন করার সময় এই চমত্কার বিস্ময়কর ঐতিহাসিক প্রত্নবস্তু খুঁজে পান। তখন তারা মাটির ৪.৫ মিটার নিচে অবস্থিত এই বড় সমাধিতে বহু টেরাকোটা দেখে অবাক হন এবং তখনই বিষয়টির দিকে বিশ্বের প্রত্নতত্ত্ববিদদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়।
আলিম. আচ্ছা, ছিন রাজবংশ আমলের সৈন্য ও ঘোড়ার টেরাকোটার কিছু তথ্য জানার পর এখন এ-সম্পর্কিত একটি গান শুনলে কেমন হয়? ...চলুন শোনা যাক গানটি।
আলিম. সুন্দর গানটি শোনার পর ছিন রাজবংশ আমলের সৈন্য ও ঘোড়ার টেরাকোটা অর্থাত্ 'বিংমাইয়োং' সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য জানাই। বিংমাইয়োং জাদুঘরটি কয়েকটি প্রদর্শনী এলাকা নিয়ে গঠিত। এগুলোর মধ্যে ছিন রাজবংশ আমলের সৈন্য, ঘোড়া ও সমরাস্ত্রসহ বিভিন্ন টেরাকোটা দেখা যায়। প্রতি বছর জাদুঘরটি পরিদর্শন করতে আসেন গড়ে প্রায় ২০ লাখ পর্যটক। ছিন রাজবংশ আমলে নির্মিত সৈন্য ও ঘোড়ার মূর্তি এবং তামার তৈরি ঘোড়ার-গাড়ি দেখে বোঝা যায় যে এ-কাজে তত্কালের শিল্পীরা কতো দক্ষ ছিলেন। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা তা দেখে অবাক হন।
সুবর্ণা. বিংমাইয়োং ছাড়া শ্যানসি ইতিহাস যাদুঘরও সি'আন শহরের আরেকটি অতি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। এ-জাদুঘরে সংরক্ষিত বিভিন্ন ধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তুর সংখ্যা ৩.৭ লাখেরও বেশি। এসব প্রত্নদ্রব্যের মধ্যে রয়েছে প্রস্তরযুগের পাথড়ের তৈরি যন্ত্রপাতি এবং প্রাচীনকালে চীনের বিভিন্ন রাজবংশ আমলের তামার পত্র, চীনা মাটির ভাস্কর্য এবং দেয়াল-ছবি ইত্যাদি। যাদুঘরের সবচে আকর্ষণীয় দর্শনীয় প্রত্নদ্রব্য হচ্ছে সোনা ও মূল্যবান পাথর দিয়ে তৈরি একটি পাত্র যেটি গরুর মাথার আকৃতির। ১৯৭০ সালে সি'আন শহরের দক্ষিণ উপকন্ঠ এলাকার হোচিয়া গ্রামে এটি আবিস্কৃত হয়। এই পাত্রটি অবিকল গরুর মাথার মতো দেখতে; এমনকি গরুর চোখ দুটিও মনে হবে জীবন্ত। এই পাত্রটি সম্ভবত প্রাচীনকালের কোনো রাজা ব্যবহার করতেন। পাত্রটি চীনে আবিস্কৃত হলেও, এর ডিজাইনে গ্রিসের প্রভাব স্পষ্ট। সাধারণত লোকেরা বলিদান অনুষ্ঠানে দেবতার কাছে শ্রদ্ধা নিবেদন করার সময় এ-ধরনের পাত্র ব্যবহার করে। অনেকে মনে করেন, প্রাচীনকালে বিদেশ থেকে চীনের থাং রাজবংশের রাজাকে এটি উপহার হিসেবে প্রদান করা হয়েছিল। এই উপহার তত্কালে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |