|
এখানে প্রাসঙ্গিক একটি তথ্য দিয়ে রাখি। 'তুয়ান উ' উত্সবের সময় চীনারা লবনাক্ত ডিম ও 'সিউন হুয়ান' নামের একধরণের বিশেষ মদ খেয়ে থাকেন। লবনাক্ত ডিম হচ্ছে লবন-মেশানো পানিতে হাঁসের ডিম রেখে পরে সেই ডিম থেকে তৈরি এক ধরনের খাবার। অন্যদিকে, 'সিউন হুয়ান' সিউন হুয়ান নামের ওষুধ মেশানো একধরণের মদ। লবনাক্ত ডিম ও সিউন হুয়ান মদ খাওয়ার উদ্দেশ্য হলো পরিবার-পরিজনদের বন্য পশু ও ভুতের হাত থেকে রক্ষা করা। আমার পক্ষে অবশ্য এই বিশেষ মদের স্বাদ নেয়ার কোনো উপায় নেই।
শিশির. 'তুয়ান উ' উত্সবের দিন ঐতিহ্যিক খাবার খাওয়া ছাড়া, বাড়ি-ঘরের গেটে 'আই ছাও' ও 'ছাও ফু' নামে দুই ধরনের ঔষধি গাছের পাতা ঝুলানোর রীতিও আছে । এই দুই ধরনের পাতা ঝুলানোর উদ্দেশ্যও জীবজন্তু ও ভুতকে তাড়ানো। অন্য দিকে, 'তুয়ান উ' উত্সব পালিত হয় গরমকাল। সে-সময় বৃষ্টি বেশী, বায়ুতে আদ্রতা বেশী, নানা ধরনের বিষাক্ত পোকা বেশী, মানুষ সহজেই অসুস্থ হয়। এই দুটি ওষুধি গাছের পাতার গন্ধ পোকা তাড়াতে সাহায্য করে। পোকা না-এলে রোগবালাইও কম হয়।
সুবর্ণা. আচ্ছা, বন্ধুরা, 'তুয়ান উ' উত্সবের কিছু রীতিনীতি জানার পর এখন গানের পালা। গানের নাম 'তুয়ান উ উত্সব স্মরণে' ।
শিশির. 'তুয়ান উ' উত্সবের সময় চীনারা বাচ্চাদের জন্য নানা আকারের সুগন্ধযুক্ত থলি তৈরী করেন। এ-সব থলির কোনোটা বাঘের মত, কোনোটা লাউয়ের মত। দেখতে খুব সুন্দর । রঙীন কাপড়ের তৈরি এ-সব থলির মধ্যে নানা ধরনের সুগন্ধী মশলা রাখা হয়। কোনো কোনো অঞ্চলে নিরাপত্তা ও সুখশান্তি নিশ্চিত করার জন্য বাচ্চারা বাঘের মাথার আকারের জুতা পরে অথবা বাঘের ছবিওয়ালা কাপড় পরে ।
আলিম. দক্ষিণ চীনের ইয়াংসি নদী অববাহিকা অঞ্চলে ড্রাগন নৌকার প্রতিযোগিতাও 'তুয়ান উ' উত্সবের একটি প্রধান রীতি। এই রীতিও চীনের প্রাচীন দেশপ্রেমিক কবি ছু ইউয়ানের আত্মহত্যার সাথে সম্পর্কিত । এক রুপকথায় বলা হয়েছে: গ্রামবাসীরা ছু ইউয়ানকে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখে, নৌকা চালিয়ে তাকে বাঁচাতে চেয়েছিল । কবি ছু ইউয়ানের আত্মহত্যার সময় আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়ছিল। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও গ্রামবাসীরা তাকে উদ্ধার করতে পারেনি। তার মৃতদেহ যাতে মাছ না-খেতে পারে, সেজন্য গ্রামবাসীরা নদীতে আঠাল ভাত ছড়িয়ে দেয়। পরবর্তী কালে, চীনের অনেক অঞ্চলে 'তুয়ান উ' উত্সবের সময় ড্রাগন নৌকা প্রতিযোগিতার আয়োজন হতে শুরু করে এবং 'চুন চি' খাওয়ার প্রচলনও শুরু হয়। কাঠের তৈরি নৌকার সামনে কাঠের তৈরি ড্রাগনের মাথা লাগানো হয় এবং কয়েক ডজন ড্রাগন নৌকা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। নদী তীরে দর্শকরা চিত্কার করতে করতে তাদের উত্সাহ দেন, সর্বত্রই আনন্দের পরিবেশ বিরাজ করে।
শিশির. হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন। ঢাক-ঢোল আর করতালের ধ্বনির মধ্যে ড্রাগন নৌকা প্রতিযোগিতা দেখা একটি দারুণ মজার ব্যাপার। আলিম ভাই, বাংলাদেশে কি ড্রাগন নৌকা প্রতিযোগিতা দেখা যায়?
আলিম. শিশির, আপনি জানেন, বাংলাদেশে বহু প্রাচীনকাল থেকে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা হয়ে আসছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এ-ধরণের প্রতিযোগিতা প্রতিবছরই অনুষ্ঠিত হয়। কখনো কখনো এক গ্রামের সঙ্গে অন্য গ্রামের বা এক এলাকার সঙ্গে অন্য এলাকার নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা হয়। আজকালতো জাতীয় পর্যায়েও নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। বাংলাদেশে নৌকা বাইচ একটি প্রাচীন ক্রীড়া। তবে, বাংলাদেশে যেসব নৌকা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় সেগুলো ড্রাগন আকৃতির নয়। এসব নৌকার সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে: নৌকাগুলো লম্বা হয়। কোনো কোনো এলাকায় এগুলোকে ডিঙ্গি নৌকা নামে ডাকা হয়।
সুবর্ণা. আচ্ছা, বন্ধুরা, 'তুয়ান উ' উত্সবের ড্রাগন নৌকা প্রতিযোগিতার রীতিনীতির পরিচয় জানার পর এখন গানের পালা। গানের নাম 'ড্রাগন নৌকা প্রতিযোগিতা'। গানের মাধ্যমে আপনারা ড্রাগন নৌকা প্রতিযোগিতার সরগরম পরিবেশ অনুভব করতে পারেন।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |