|
আলিম. না, সুবর্ণা; বাংলাদেশে এ-ধরণের দৃশ্য দেখা যায় না। তবে, আপনি জানেন যে, বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। গ্রামাঞ্চলের যেদিকেই তাকাবেন, খালি সবুজ আর সবুজ। ক্ষেতে যখন সোনালী ফসল ফলে, তখন সে-দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। সে যাক, শুনেছি লোংশেং বেড়াতে গেলে বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতির রীতিনীতি সম্পর্কে জানতেও পর্যটকরা আগ্রহবোধ করেন। আমরা এখানে সেসব জাতি সম্পর্কে কিছু তথ্য শ্রোতাদের জানাচ্ছি। ইয়াও জাতির লোকেরা বসবাস করে---তেমন একটি গ্রামের নাম হুয়াংলুও। এ-গ্রামের ইয়াও জাতির লোকরা গান গাইতে পছন্দ করে। এ-গ্রামের আরেকটি নাম 'বিশ্বের সবচে লম্বা চুলের গ্রাম'। কারণ এ-গ্রামের ৩০০ বাসিন্দার মধ্যে শতাধিক নারীর চুলের দৈর্ঘ্য ১.৪ মিটারেরও বেশি। আর সবচে লম্বা চুলের দৈর্ঘ্য ২ মিটারেরও বেশি, যা গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড-এ অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। এ-গ্রামের নারীদের লম্বা চুলের নাচ দেখার মতো। অনেক পর্যটক এখানে এসে এই বৈশিষ্ট্যময় নাচ দেখেন।
সুবর্ণা. হ্যাঁ, অনেক পর্যটক দূর-দূরান্ত থেকে লোংশেং এসে এ মজার নাচ উপভোগ করেন। তবে, মনে রাখতে হবে যে গ্রামের মেয়েরা পেশাদার নৃত্যশিল্পী নয়। তারা প্রতিদিন কৃষিকাজ বা হস্তশিল্পকর্ম করে। কিন্তু আন্তরিকতা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে তারা এই বৈশিষ্ট্যময় নাচ আয়ত্ত করেছে। পর্যটকদের সামনে তারা পালাক্রমিকভাবে নাচ প্রদর্শন করে। নাচের পাশাপাশি তারা নিজেদের হস্তশিল্পকর্মও পর্যটকদের কাছে বিক্রি করে। প্রতিদিন হুয়াংলুও গ্রামে দুই থেকে তিন বার নাচের প্রদর্শনী হয়। পর্যটনের মৌসুমে প্রতিদিন ছয় থেকে সাত বার পর্যন্ত প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। তখন সকাল ৮টা থেকে রাত পর্যন্ত চলে নাচের আসর। তখন প্রতি মাসে নৃত্যশিল্পীরা হাজার ইউয়ান আয় করেন।
আলিম. হ্যাঁ, প্রতি বছর এ-গ্রামের ইয়াও জাতির লোকেরা নাচের মাধ্যমে ৮০ হাজারেরও বেশি পর্যটককে অভ্যর্থনা জানায়। বছরে গ্রামবাসীদের আয় হয় ২৫ লাখেরও বেশি ইউয়ান। এতে, গ্রামবাসীদের জীবনমানও অনেক উন্নত হয়েছে।
সুবর্ণা. শ্রোতাবন্ধুরা, চলুন এখন শোনা যাক একটি গান। গানের মধ্যে ইয়াও জাতির লোকদের আন্তরিকতা অনুভব করা যাবে। চলুন একসাথে গানটি শুনি।
আলিম. বন্ধুরা, সুন্দর গানটি শোনার পর, চলুন আমরা হুয়াংলুও ইয়াও জাতির গ্রাম থেকে বের হয়ে যাই এবং সেখান থেকে প্রায় ১৫ মিনিটের বাস জার্নি করে লোংশেংয়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থানে পৌঁছাই। এটি লোংচি চুয়াং জাতির পুরনো গ্রাম। এ গ্রামটি যেন সিঁড়ি ক্ষেতের আড়ালে লুকিয়ে আছে; দেখতে দারুণ সুন্দর আর শান্ত। এখানে সিঁড়ি ক্ষেত ছাড়া চুয়াং জাতির প্রাচীনকালের খোদাই সংস্কৃতি ও ভালভাবে সংরক্ষিত মাচান ঘর দেখা যায়। ২০১১ সালের জুন মাসে এ পুরনো গ্রাম আনুষ্ঠানিকভাবে পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হয়। এর দুই বছরের মাথায় গ্রামের মানুষের জীবনমান অনেক উন্নত হয়ে ওঠে।
সুবর্ণা. স্থানীয় গ্রামবাসীরা ছোট ছোট দোকান চালায়। সেখানে তারা বিক্রি করে হস্তশিল্পকর্ম ও স্থানীয় অঞ্চলের খাদ্যদ্রব্য। এতে তারা দুটো অতিরিক্ত পয়সা আয় করে। পর্যটন এলাকা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, গ্রামবাসীরা নিজেদের চাষ-করা মরিচ ও ফল পর্যটকদের কাছে বিক্রি করতে পারছে। পর্যটকরাও স্থানীয় খাবারের স্বাদ নিতে পারছেন এবং যাবার সময় স্বজনদের জন্য উপহার হিসেবে বিভিন্ন জিনিস কিনে নিয়ে যান। এতে গ্রামবাসীদের আয়ও অনেক বেড়েছে। গ্রামবাসীরা মনে করে, পর্যটন স্থানে পরিণত করার পর গ্রামের রাস্তাঘাট আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে, গ্রামের সুন্দর দৃশ্যের কথা দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এটা গ্রামবাসী ও পর্যটকদ---উভয়ের জন্যই ভালো।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |