Web bengali.cri.cn   
চা-শিল্পের জীবন্ত জাদুঘর—পুয়ার
  2013-02-20 15:59:48  cri
আলিম: সুবর্ণা, আমি চীনের বিখ্যাত 'পুয়ার' চা সম্পর্কে শুনেছি। এই চা-য়ের সাথে কি 'পুয়ার' জেলার কোনো সম্পর্ক আছে? সুবর্ণা: আলিম ভাই, আপনি ঠিকই ধরেছেন। 'পুয়ার' চায়ের সাথে 'পুয়ার' জেলার সম্পর্ক আছে। আপনি জানেন, চীনা চা বিশ্ববিখ্যাত এবং চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন রকমের চা উত্পাদিত হয়। লাল চায়ের জন্য বিখ্যাত 'পুয়ার চা' এই পুয়ার জেলাতেই উত্পন্ন হয়। ইউয়ুননান প্রদেশের পুয়ার জেলায় ২৬টি জাতির বাস এবং প্রতিটি জাতি নিজ নিজ 'চা দেবতা'-র উপাসনা করে। যেমন, বুলাং জাতি নিবীড় বনে বসবাস করে; প্রতি বছরের এপ্রিল মাসে তারা চা-দেবতার উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তাদের দেবতা হচ্ছে প্রায় দু'হাজার বছরের পুরাতন একটি উঁচু চা গাছ। বুলাং জাতির লোকেরা আমাদের সংবাদদাতাকে জানিয়েছে, উঁচু চা গাছটির নাম 'পায়ারলেং' এবং এটির বয়স ১৮০০ বছর। প্রতি বছর বুলাং জাতির লোকেরা এ-গাছের উপাসনা করে এই আশায় যে, এই দেবতার কৃপায় চা বাগানের ফসল ভালো হবে।

আলিম: প্রায় দু'হাজার বছরের পুরনো চা-গাছ! আশ্চর্য! আমার কিন্তু এক্ষুনি গাছটি দেখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সেটাতো আর সম্ভব নয়। তবে, এই মুহূর্তে শ্রোতাদের সঙ্গে মিলে একটি গান শোনা খুবই সম্ভব। গানটি লেখা হয়েছে এই পুয়ার চা নিয়েই। গানের কথাগুলোকে বাংলা করলে মোটামুটি এমন দাঁড়াবে: সুর্যালোকে চায়ের পাতা শুকানোর পর/ গরম পানিতে সেদ্ধ করে তৈরি হয় পুয়ার চা/ পানের জন্য/ লানছাং নদীর সাথে চায়ের সুগন্ধ চলে যায় দূর-দূরান্তে/ এতো মানুষের স্বর্গ/ নাম তার ইউয়ুননান/ এখানে চা ও ঘোড়ার পুরনো পথ/ কালের গল্প শুনিয়ে যায় ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে....

সুবর্ণা: পুয়ার জেলার আশেপাশে নিবীড় বনের ৪০টি জায়গার প্রায় ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে হাজার বছরের পুরনো চা গাছ বেঁচে আছে। দীর্ঘকালের গবেষণা ও পরীক্ষার পর স্থানীয়রা পুরনো চা গাছ লালন-পালন করার মাধ্যমে চা পাতার উত্পাদন বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। 'ওয়া' জাতির চা-কর্মীরা জানিয়েছে, নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগ করার পর, বর্তমানে একটি চা গাছ থেকে একবারে ২.৫ কেজি চা পাতা উত্পাদিত হয়, যা আগের তুলনায় অনেক বেশি। তবে বিশ্বে 'পুয়ার চা'-এর যে ব্যাপক চাহিদা আছে, তা কিন্তু এদিয়ে পূরণ হয় না।

আলিম: শুনেছি, এই ব্যাপক চাহিদা মেটানোর জন্য পুয়ার শহরে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অধিক ফলনশীল চা গাছ লাগানো শুরু হয়। সমস্যা হচ্ছে, এ ধরনের চা গাছ অধিক উত্পাদনে সক্ষম হলেও, তুলনামূলকভাবে স্বল্পায়ু হয়ে থাকে। এ ছাড়া, কৃত্রিম প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে উত্পাদিত চা পাতার গুণগতমানও পুরনো চা গাছের পাতার মতো অতো ভালো নয়। তাই, উত্পাদিত চা-য়ের মান উন্নত করার জন্য পুয়ার শহরের পৌর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ২০০৮ সাল থেকে তারা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে 'পুয়ার চা' চাষ করতে শুরু করে। পুয়ার চা গবেষণাগার চায়ের গুণগতমান পরীক্ষা করে থাকে এবং এভাবে তারা চায়ের পুষ্টিউপাদান ও স্বাদসহ বিভিন্ন তথ্য সঠিকভাবে জানতে সক্ষম।

সুবর্ণা: ২০১০ সাল থেকে পুয়ার শহর আধুনিক চা বাগানগুলোকে প্রাকৃতিক চা বাগানে রূপান্তরের কাজ শুরু করে। প্রাকৃতিক, সবুজ ও অর্গানিক চা বাগানের মাধ্যমে চায়ের গুণগতমান উন্নত করা হয়েছে এবং বর্তমানে চা বাগানগুলোতে একইসাথে অন্তত ৬ প্রকারের চা গাছ লাগানো হচ্ছে। এসব বাগানে সঠিক মানদন্ড অনুযায়ী পরিমিত কীটনাশক ব্যবহার করা হয় যাতে চা-এর পুষ্টিগুণ ও স্বাদ ঠিক থাকে। প্রাকৃতিক চা বাগানে বিভিন্ন ধরণের চা গাছ নির্দিষ্ট দূরত্বে লাগানো হয় যাতে গাছগুলো যথেষ্ট সূর্যালোক পায়। এতে গাছগুলো পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকেও রেহাই পায়। ওদিকে, চা গাছে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার কর হয় না বলে সেগুলো থেকে উত্পাদিত চা পাতা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও অনুকূল।

আলিম: আচ্ছা, চা পাতার কিছু তথ্য জানার পর এখন গান শোনার পালা। চা নিয়ে লেখা এই গানটির কথাগুলোকে বাংলা করলে মোটামুটি এমন দাঁড়াবে: চায়ের কাপের গরম ধোঁয়া আস্তে আস্তে বিলীন হয়েছে/ তুমি চলে গেছ বহু দূরে/ আমার অনেক কথা বলা হয়নি/ অথচ তোমাকে আর খুঁজে পাচ্ছি না....


1 2 3
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040