|
চিয়াং. থানচে মন্দির পেইচিং শহরের পশ্চিমাঞ্চলের মেনথৌকৌ এলাকার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি পুরনো মন্দির। এটি ১৭০০ বছরের একটি প্রাচীন মন্দির। পেইচিং-এর কেন্দ্র থেকে মন্দিরটির দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। ৩০৭ সালে থানচে মন্দির নির্মিত হয়। নির্মাণের পর এ-মন্দিরের নাম 'চিয়াফু মন্দির' রাখা হয়েছিল। কিন্তু মন্দিরের পেছনে ড্রাগন হ্রদ ও পাহাড়ে চে গাছ থাকার কারণে লোকজন মন্দিরকে থানচে মন্দির বলে ডাকতে শুরু করে।
সুবর্ণা. প্রাচীনকালে পেইচিংয়ের নাগরিকদের মধ্যে এ-কথা খুবই প্রচলিত ছিল যে, থানচে মন্দির নির্মাণের পর পরই পেইচিং শহর গড়ে তোলা হয়। থানচে মন্দিরের ভেতরের আয়তন ২.৫ হেক্টর; মন্দিরের বাইরের বন ও পাহাড়সহ মোট আয়তন ১২১ হেক্টরেরও বেশি। কথিত আছে, পেইচিংয়ের রাজপ্রাসাদের কক্ষ ৯৯৯৯টি এবং থানচে মন্দিরের সমৃদ্ধকালে অর্থাত্ ছিং রাজবংশের আমলে মন্দিরটির কক্ষের সংখ্যা ছিল ৯৯৯টি। মন্দিরটি পেইচিং রাজপ্রাসাদের কাঠামোর অনুকরণে নির্মিত হয়। বর্তমানে থানচে মন্দিরে কক্ষ আছে মোট ৯৪৩টি; এগুলোর মধ্যে ৬৩৮টিতে প্রাচীনকালের মিং ও ছিং রাজবংশের স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য বজায় রয়েছে।
চিয়াং. বন্ধুরা, থানচে মন্দিরের সুন্দর দৃশ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার আগে এখন আপনাদের জন্য একটি গান প্রচার করবো। গানের নাম 'মন্দির'। গানের কথা অনেকটা এমন: পাহাড়ের মধ্যে পবিত্র স্থান আছে/ সেখানে সন্ন্যাসীদের বসবাস এবং তপস্যা/ বাইরের যাত্রী ও পর্যটক পবিত্র মন্দিরে প্রার্থনা করে/ মন্দিরের ভেরতে কোনো দুশ্চিচিন্তা ও বিরক্তি নেই/ শান্ত মন্দির-হল আর পবিত্র বুদ্ধের মূর্তি দেখে শ্রদ্ধায় বিগলিত হয় মন.....
সুবর্ণা. থানচে মন্দিরের স্থাপত্যে প্রাচীন চীনের স্থাপত্যের সৌন্দর্য্য প্রতিফলিত হয়েছে। মন্দির-হলের মাঝখানে একটি লম্বা ও সোজা লাইন আছে; এর দু'পাশে বাম ও ডান দিকে ছোট কক্ষগুলো একই আকার ও একই সংখ্যায় দাঁড়িয়ে আছে। এভাবে গোটা স্থাপত্য এলাকাটি দেখতে সুশৃঙ্খল। স্থাপত্যগুলোর মধ্যে আছে: প্যাগোডা, প্যাভিলিয়ন, ভবন ও পবিত্র মন্দির। মন্দিরের বাইরে দুই তলার প্যাগোডা প্রাঙ্গণ, গুহা এবং ড্রাগন হ্রদও দেখা যায়। ১২১ হেক্টর আয়তনের মধ্যে প্রাকৃতিক দৃশ্য ও পুরনো স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য সুষমভাবে সংমিশ্রিত হয়েছে। বসন্তকাল, গ্রীষ্মকাল, শরত্কাল ও শীতকালে এবং ভোরবেলা ও সন্ধ্যাবেলায় থানচে মন্দিরের দৃশ্য অসাধারণ।
চিয়াং. হ্যাঁ, প্রাচীনকালের ছিং রাজবংশের আমল থেকেই থানচে মন্দিরের দারুণ প্রাকৃতিক দৃশ্য মানুষকে আকৃষ্ট করে আসছে। এখানকার পুরনো গাছ, সুন্দর রঙয়ের ফুল, পরিস্কার হ্রদ ও ঐতিহ্যবাহী মন্দিরের স্থাপত্য-সৌন্দর্য পর্যটকদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। প্রাচীনকালের মিং রাজবংশে থানচে মন্দির বিদেশি সন্ন্যাসীদের সঙ্গে এতদঞ্চলের সন্নাসীদের ধর্মীয় সম্পর্ক সৃষ্টির গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমে পরিণত হয়। জাপান ও ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সন্ন্যাসীরা এখানে এসে বৌদ্ধ ধর্মের সাধনা করেন। মিং রাজবংশের ওয়ানলি আমলে রাজা চু ই চুনের নির্দেশে থানচে মন্দিরের ব্যাপক সংস্কার করা হয়। তখন মন্দিরের মঠের অধ্যক্ষ রাজপ্রাসাদে গিয়ে রাজা ও তাঁর আত্মীয়স্বজনদের বৌদ্ধ শাস্ত্র পড়ে শোনাতেন। এতে থানচে মন্দির ও রাজপ্রাসাদের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |