|
প্রাচীনকালে ইয়াংশান পাহাড়াঞ্চলের মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার সময় অবশ্যই পানির বড় জালা যৌতুক হিসেবে দিতে হতো।
"আমার চারজন পুত্রবধু আছে। তারা আমার বাড়িতে আসার সময় প্রত্যেকে দুটি করে পানির জালা নিয়ে এসেছিল।"
বর্তমানে গ্রামে কলের পানির প্রচলন হয়েছে। তবে প্রাচীনকালের ইতিহাসের স্বাক্ষী হিসেবে এসব পানির জালা এখানে রাখা হয়েছে।
পুরনো বাসভবন ছাড়াও এ গ্রামে এক পুরনো পাথর শবাধার আছে। রোংথাং গ্রামের পাথর শবাধার হলো চীনের সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শবাধারের অন্যতম। এ গ্রাম থেকে পশ্চিম দিকে গিয়ে ছিং রাজবংশের কুয়াংস্যু আমলের নির্মিত পুরনো দরজা অতিক্রম করে পাথরের গলিপথে হেঁটে হেঁটে প্রায় ২০০ মিটার এগুলে রাস্তার পাশে রাখা পাথর শবাধার দেখা যায়। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২ মিটার; দেখলে মনে হয় কাঠ দিয়ে তৈরি। বিভিন্ন দিকের উচ্চতা প্রায় ১০ মিলিমিটার উঁচু পাথর বোর্ড। উপর দিকে গোটা পাথর দিয়ে খোদাই করা। গ্রামবাসী ওয়াং বাও কুই আমাদের জানান: "এখানে মাটির খুবই অভাব। পাতলা মাটির স্তরের নিচে সবই আগ্নেয়গিরির লাভার স্তর। এ কারণে স্থানীয় মানুষের পুর্বপুরুষদের সমাহিত করার সময় ভৌগলিক অবস্থা অনুযায়ী আগ্নেয়গিরির পাথর দিয়ে শবাধার তৈরি করে নিজেদের মাটিতে রাখতো। পাথর শবাধারে কবর দেয়া প্রাচীনকালের এক ধরনের সমাহিত করার পদ্ধতিতে পরিণত হয়।"
এ ধরনের পাথর শবাধার গ্রামে কতগুলো আছে, তা সঠিকভাবে হিসাব করা হয় নি। এখানকার পূর্বপুরুষেরা দীর্ঘকাল ধরে পাথরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। পাথর-বাড়িতে বড় হয়ে মৃত্যুবরণের পর অগ্নিগিরি পাথর দিয়ে তারা তৈরি শবাধারে থাকেন। তাদের রক্তে মেলবন্ধন করা আগ্নেয়গিরি পাথরের অনুভবে তারা অনেক মুগ্ধ হতেন।
আগ্নেয়গিরির মধ্যে সবচেয়ে রহস্যময় ও বৈশিষ্ট্যময় ভৌগলিক অংশ হল তার লাভার গুহা। গ্রামবাসীরা জানান, রোংথাং গ্রামের কাছাকাছি মাটির নিচে অনেক আগ্নেয়গিরির লাভার গুহা রয়েছে। পর্যটকরা সেখান অনুসন্ধান করতে পারেন। ভূতাত্বিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এসব গুহা একটি আগ্নেয়গিরি লাভা গুহার জাদুঘরের মতো। এদের মধ্যে সিয়ানরেন গুহা ও উওলোং গুহা সবচেয়ে মনোহরণীয়। বিভিন্ন গুহার মধ্যে সংযোগ রয়েছে; বড় গুহার মধ্যে ছোট গুহা রয়েছে, যা খুবই মজার।
রোংথাং গ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থিত উওলোং গুহা বিভিন্ন ছোট গুহা নিয়ে গঠিত। সেখানে প্রবেশ করল মনে হয় গোলকধাঁধার মতো। এর আরেকটি নাম বাহাত্তর গুহা। একানব্বই বছর বয়স্ক চোং ছাও ইউয়ান আমাদের জানান, জাপান-বিরোধী প্রতিরোধ যুদ্ধ চলাকালে গ্রামবাসীরা জাপানি শত্রুদের আক্রমণ এড়াতে এ গুহায় আত্মগোপন করতেন।
সিয়ানরেন গুহা থেকে উওলোং গুহার দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। এ গুহার পরিবেশ ভালো। আমরা গুহার পথ ধরে ভিতরে ২০ মিটার হেঁটেছি; গুহার উপরে আকাশ দেখেছি। সেখানে গোল আকারের গুহায় নিবিড় গাছ দেখা যায়। আমরা ডান দিকে গিয়ে আরেকটি গুহা প্রবেশ করি। হাজার লোক ধরে এমন একটি বিরাট গুহার হল দেখেছি। এ হল অতিক্রম করে বিভিন্ন শাখা-গুহা দেখা যায়। এসব শাখা গুহায় প্রবেশ করলে ভিতরে একটি বিস্তীর্ণ জায়গা দেখা যায়। এসব গুহা অতিক্রম করলে মন আশ্চর্য্য হয় এবং অনুসন্ধানের উত্তেজনা জাগে। গ্রামবাসী চোং সিয়াও ই আমাদের জানান, "এ গুহায় শীতকালে গরম এবং গ্রীষ্মকালে ঠাণ্ডা। আমাদের ছোটবেলায় কোনো বৈদ্যুতিক পাখা ছিল না। আমরা স্কুল শেষে দুপুরবেলায় এখানে খানিকটা ঘুম দিতাম। খুবই আরাম লাগতো; মনে হতো যেন শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে শুয়ে আছি। শীতকালে এখানে খুব গরম। আমরা এখানে লুকোচুরি খেলতাম। এদিক থেকে ওদিক দৌড়াদৌড়ি করতাম। খুব মজা লাগতো।"
এখান থেকে সামনে গেলে আরও বেশি লাভা গুহা দেখা যায়। গ্রামবাসীরা বলেছেন, এখানে বিভিন্ন গুহার মধ্যে যে সংযোগ রয়েছে, তা একটি প্রাকৃতিক পথ। এ পথ ধরে গ্রামবাসীরা কৃষিভূমিতে যেতে পারে এবং অবসর কাটাতে পারে। লাভার গুহায় কোনও পরিবর্তন করা হয়নি; এর ভিতরে আদি দৃশ্য বজায় রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক পর্যটক ক্যামেরা নিয়ে গ্রামে এসে ছবি তুলছেন। হাইনান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জনাব চিয়াও এবার বন্ধুদের সঙ্গে এ জায়গটি ভ্রমণ করতে এসেছেন। তিনি বলেন, "আমি বন্ধুদের নিয়ে এ জায়গাটি ভ্রমণ করতে এসেছি। এখানকার দৃশ্য খুবই বৈশিষ্ট্যময়; সবই অগ্নিগিরি পাথর ও ইতিহাসের ধারণাসম্পন্ন।"
শানসি প্রদেশ থেকে আসা পর্যটক রেন লিনলিন বলেন, "আমরা অনুসন্ধান করার জন্য এখানে এসেছি। এটা একটি অতি আশ্চর্য্যজনক স্থান। আমরা কখনও ভাবিনি হাইখৌ শহরের কাছে এ ধরনের পুরনো গ্রাম পাওয়া যাবে। এ জায়গাটি খুব ভালো; পাশে লাভার গুহাও আছে। আমার মনে হয়, পর্যটন সম্পদের সঙ্গে মিলিয়ে এ জায়গাটির উন্নয়ন করা উচিত, যাতে আরও বেশি লোক এখানটা ভ্রমণ করতে পারে।"
রোংথাং গ্রামের মতো হাইখৌ পাথর পাহাড় অঞ্চলে আরও কয়েকটি কয়েক শ' বছরের পুরনো গ্রাম বজায় রাখা হয়েছে। এসব আদি জীবনযাপনের ধারণা ও স্থাপত্য বজায় রাখা গ্রামে প্রবেশ করে ইতিহাস অনুভব করার মতো।
(সুবর্ণা/এসআর)
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |