|
পুরনো গ্রামে ভ্রমণকারী পর্যটকরা দুই-তিন ইউয়ান গ্রামের প্রবীণদের দিতে পারেন; তাঁরা পর্যটকদের জন্য পথ নির্দেশনা করবেন। আমরা পাথরের দরজা অতিক্রম করে একটি পাথরের গলিপথ ধরে গ্রামের ভিতরে যাই। আমাদের পায়ের নিচে দেখতে পাই বহু ক্ষুদ্র গর্তবিশিষ্ট অগ্নিগিরি-পাথর কয়েক বছর ধরে মানুষের ব্যবহারের ফলে মোটামুটি মসৃণ হয়েছে। রাস্তার দুই পাশে আলাদা আলাদাভাবে বিভিন্ন পরিবারের প্রাঙ্গণ ও বাড়ি দেখা যায়। এসব বাড়ি ও দেয়াল পুরনো অগ্নিগিরি পাথর দিয়ে গাঁথা। বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় এসব পাথর দেয়াল সামান্য। তবে কাছে আসলে দেখা যায়, প্রত্যেকটি পাথরের আকার ভিন্ন রকম; পাথরের ফাঁকার মধ্যে কোনো মাটি নেই। ভিতর থেকে দেখলে পাথরের মধ্যে আলো দেখা যায়; দেখতে একটি বড় আকারের চালুনির মতো। ভ্রমণকালে আমরা দেখেছি এসব পুরনো পাথর বাসভবনের মধ্যে কেউ কেউ বিভিন্ন বড় আকারের শৃঙ্খল পাথর দিয়ে দেয়াল বানানো, যেটা দেখতে অতি সুন্দর। কেউ কেউ ভিন্ন আকারের পাথর দিয়ে দেয়াল গেঁথেছে। এ সম্পর্কে গ্রামবাসী ওয়াং বাও কুই আমাদের জানান,
"সাধারণ পরিবারের বাড়ি নিয়মিত আগ্নেয়গিরির পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এগুলো দেখতে আদি ও জরাজীর্ণ। ধনী পরিবার যখন বাড়ি নির্মাণ করে, সবসময় বড় সাইজের আগ্নেয়গিরির পাথর বাছাই করে এবং তা স্পর্শ করে দেখার পর দেয়াল তৈরি করে। এ জন্য এ সব দেয়াল দেখতে সুন্দর লাগে।"
কোনও লোক বাস করে না এমন একটি পুরনো বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বিশাল প্রাঙ্গণের ভিতরে আমরা দরজার স্তম্ভের ওপর খোদাই করা সুন্দর ছবি দেখতে পাই। এ থেকে বোঝা যায় এখানে একটি ধনী পরিবার ছিল। প্রাঙ্গণের দরজার ছাদের নিচে দুই পাশে দুটি মসৃণ পাথর চেয়ার আছে। গ্রামবাসীরা আমাদের জানান, এ বাড়িতে একটি ধনী পরিবার বাস করতো। এ বাড়িতে কোনও অতিথি আসলে, তখন যদি বাড়ির কর্তা না থাকতেন তাহলে অতিথি এ পাথর চেয়ারে বসে অপেক্ষা করতে পারতেন। যখন কৃষিকাজ থাকতো না তখন প্রতিবেশীরা এখানে এসে এ পাথর চেয়ারে বসে কথাবার্তা করতে পারতো।
পাথর দেয়াল ছাড়াও, বাসার সামনে ও পিছনে রাখা পানির বড় জালা দেখে বোঝা যায় বাড়ির কর্তা সম্পর্কে যেসব কথা বলা হচ্ছে সেগুলো সত্যি ছিল। সাতাশি বছর বয়স্ক ম্যাডাম ছেন পি আর হলেন পাথর গ্রামে বসবাসকারী প্রবীণদের অন্যতম। তাঁর প্রাঙ্গণের মধ্যে দশটিরও বেশি পানির বড় জালা একলাইনে রাখা আছে। তিনি বলেন, "প্রাচীনকালে কখনও ইয়াংশান পাহাড়াঞ্চলে পানির অভাব হলে, লোকজনকে কয়েক কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের নিচে নেমে পানি নিতে হতো। সেজন্য স্থানীয় লোকসংগীতে এক কথা আছে যে, 'পানি তেলের মতো দামি; মেয়ে বিয়ে দেওয়ার সময় হবু স্বামীর বাড়ির পানির বড় জালার সংখ্যা হিসাব করতে হবে'। কোনও মেয়েকে যখন বিয়ে দিতে হবে, তখন পাত্রের বাসার পানির বড় জালার সংখ্যা হিসাব করতে হবে। যদি পানির জালার আকার বড় ও সংখ্যা বেশি হয় এবং প্রাঙ্গণের দেয়াল মসৃণ হয়, তাহলে ধরে নেওয়া যায় সে পরিবার ধনী। পানির বড় জালার সংখ্যা বেশি থাকলে, মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর তার আর কষ্ট করে পানি আনার দরকার হবে না।"
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |