|
ছুই পরিবারের লোক্যাস্ট প্রাঙ্গণে প্রবেশ করার পর দীর্ঘ আকারের ডিজাইন দেখা যায়, এর আশেপাশে উচুঁ দোয়াল দেখা যায়। বিভিন্ন দিকের রুম সুশৃঙ্খলভাবে ঝুলে থাকে। প্রথম পর্যায়ের প্রাঙ্গণ ঘনক আকারের। দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রাঙ্গণের স্টাইল শ্যানসি প্রদেশের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। প্রাঙ্গণের ভিতরে ও বাইরের ছাদের উচ্চতা সমান নয়, ভিতরের ছাদ একটু নিচু, যার ফলে বৃষ্টি পড়ার সময় বৃষ্টির পানি প্রাঙ্গণের ভিতরে পড়ে যায় এবং একটি বিশেষ পাত্রে তা ধরে রাখা যায়। এর কারণ হল শ্যানসি প্রদেশের আবহাওয়ায় বৃষ্টি খুবই কম, বৃষ্টি স্থানীয় অঞ্চলের লোকদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। এ সম্পর্কে যাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ওয়াং ইয়োং ছাও বলেছেন, "আমাদের রীতিনীতিতে বৃষ্টির পানি খাওয়া যায় এবং এ পানি বাইরে পড়বে না।"
কুয়ানচোং অঞ্চলের প্রাচীনকালের বাসভবনের সবচেয়ে স্পষ্ট বৈশিষ্ট্য হল গুণগতমানের ইট খোদাই, কাঠ খোদাই এবং পাথর খোদাই। যাদুঘরের মধ্যে স্থাপন করা ইয়ান চিং মিং'র বাসভবন খুবই বৈশিষ্ট্যময়।
"শ্যানসি প্রদেশের কাদা মাটির পরিমাণ বেশি, প্রাচীনকাল থেকে ইট তৈরীর ইতিহাস রয়েছে। এ কারণে ইট খোদাইয়ের দিকটি অনেক উন্নত হয়েছে। হস্তশিল্পীরা মালিকের সমাজের অবস্থান হিসেবে বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন খোদাই করেন।
ছিং রাজবংশের ডক্টর ও বিশেষজ্ঞ ইয়ান চিং মিং'র বাসভবন শ্যানসি প্রদেশের তালি জেলা থেকে আনা দুটি প্রাঙ্গণের ৭ রুমের চক মেলানো বাড়ি। দরজার পাশে দুটি ইট খোদাই রয়েছে। একটি মাছ ও শাপলা ফুল, এর অর্থ হল প্রতি বছরের শেষ দিকে বাড়িতে বাকি টাকা রাখা আছে। অন্য একটি পাইন গাছ ও সারস। এর অর্থ হল শরীরের স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ুর আকাঙ্খা। এ চক মেলানো বাড়ির মধ্যে সবচেয়ে গুণগতমানের ইট খোদাই হল প্রাঙ্গণের দোয়ালের 'জ্বালানী কাঠ নেয়া ও মাছ ধরার পর বাসায় ফিরে আসার দৃশ্য'। ইট খোদাইয়ের দু'পাশে নানা ধরনের পাহাড় পাথর দেখা যায়। পাহাড়ে একজন জ্বালানী কাঠ বহনকারী লোক রয়েছে। ছবির নিচে একজন বয়স্ক লোক মাথায় বাঁশ পাতার টুপি পড়ে পাহাড়ের রাস্তায় হাঁটছে। তার কাধে ছিপ ও জেলের জাল রয়েছে। ডান দিকের পাহাড়ের মধ্যে আঙ্গুর লতা দেখা যায়, লতার মধ্যে প্রচুর আঙ্গুর ও পাতা রয়েছে। এ ইট খোদাইয়ের অর্থ হল প্রচুর ফসল এবং বহু সম্পদ বজায় রাখে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ খোদাই হল কৃষি সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যময়তার প্রতীক, এর সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের মালিকের ইচ্ছা প্রকাশিত হয়েছে।
কুয়ানচোং রীতিনীতি জাদুঘরে একটি ইউয়ান রাজবংশের পুরনো অপেরা থিয়াটার রয়েছে। প্রতিদিন এখানে নানা ধরনের অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অপেরা পরিবেশিত হয়। এখানকার 'লাওছিয়াং' নামক অপেরা শিল্পীরা শ্যানসি প্রদেশের অপেরার প্রতিনিধি হিসেবে ২০১০ সালের ১২ জুন শাংহাই বিশ্বমেলায় অভিনয় করছিলেন। চীনাভাষায় লাওছিয়াং'র অর্থ হল পুরানো সুর। এ অপেরার প্রায় ১০০০ বছরেরও বেশি ইতিহাস রয়েছে, তা হল চীনের সবচেয়ে পুরনো অপেরার অন্যতম এবং গুরুত্বপূর্ণ অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এ অপেরার কন্ঠ অনেক শক্তিশালী। স্থানীয় অঞ্চলের লোকজন আবেগ নিয়ে বলে যে, এ অপেরার সুরের শব্দ আকাশ অতিক্রম করে যায় এবং ভূতকে ভয় পায়।
এ জাদুঘরের জন্য পুরনো সুর ও ছায়াবাজিসহ ২০টিরও বেশি শ্যানসি প্রদেশের আঞ্চলিক অপেরা সংগ্রহ করা হয়েছে এবং বিভিন্ন অপেরার শিল্পীদের মিলন হয়েছে। এসব পুরনো সংস্কৃতির উত্তরাধিকারীরা এ জাদুঘরে তাদের স্থিতিশীল উন্নয়নের সুযোগ খুঁজে পেয়েছে।
কুয়ানচোং রীতিনীতি শিল্পকলা জাদুঘরে প্রাচীনকালে চীনের বিভিন্ন রাজবংশ বিশেষ করে সোং, মিং ও ছিং রাজবংশের প্রায় ৩৩ হাজার ৬ শো'র বেশি রীতিনীতির দ্রব্য ও বিখ্যাত ব্যক্তিদের হস্তলিপি শিল্পকর্ম ও চিত্রকলা সংগ্রহ করা হয়েছে। মিং ও ছিং রাজবংশের প্রায় ৪০টি পুরনো বাসভবন সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং অনেক অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এ জাদুঘরে বাস্তব ও ঐতিহাসিক দ্রব্য ব্যবহার করে প্রাচীনকালের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে, মিং ও ছিং রাজবংশের পুরনো বাসভবনের মাধ্যমে সত্যিকারের প্রভাব জোরদার করে এবং ব্যাপক রীতিনীতি ও শিল্পকলার মাধ্যমে জীবিত জীবনযাপনের দৃশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। জাদুঘরের মধ্যে শ্যানসি প্রদেশের আঞ্চলিক অপেরা, বিবাহের রীতিনীতি, মন্দির মেলা ও আঞ্চলিক হাল্কা ধরনের খাবার সবই দেখা ও পাওয়া যায়। দর্শকরা প্রাণচঞ্চল প্রদর্শনীর মাধ্যমে প্রাচীনকালের শ্যানসি প্রদেশের জীবনযাত্রার পদ্ধতি ও সংস্কৃতি বুঝতে পারে, তা হল চীনের রীতিনীতি ও সংস্কৃতির পরিচয় ও সংরক্ষণের একটি নতুন প্রচেষ্টা। (সুবর্ণা/আবাম)
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |