Web bengali.cri.cn   
লেখিকা ইয়ান গেলিং ও তাঁর নতুন বই লুফেনইয়ানশি
  2012-05-22 17:20:28  cri

ইয়ান গেলিং হচ্ছেন বিশ্ব সাহিত্য জগতে একজন সুপরিচিত চীনা লেখিকা। তিনি হচ্ছেন বিদেশে বসবাসরত সবচেয়ে প্রভাবশালী চীনা লেখকের অন্যতম। তিনি চীনা ও ইংরেজী ভাষা দিয়ে উপন্যাস লিখেন। তিনি হচ্ছেন চীনের অল্পসংখ্যক ব্যাপক ক্ষেত্র জড়িত উচ্চ মান এবং বহু উত্পাদিত লেখক। সম্প্রতি তাঁর লেখা সবচেয়ে লম্বা উপন্যাস ফেনইয়ানশি প্রকাশিত হয়েছে। এ উপন্যাসটি ৩ লাখেরও বেশি শব্দ। এ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র হচ্ছে ইয়ান গেলিংয়ের দাদা। সমালোচক মহল মনে করে, এ উপন্যাস ইয়ান গেলিংয়ের রূপান্তরিত কর্ম।

ইয়ান গেলিং বলেন, ছোটবেলায় দাদার মূর্তি তাঁর মনে রহস্যময় ও মহান। তিনি কখনো দাদাকে দেখেন নি। ফলে তাঁর কাছে আরো বেশি রহস্য বোধ হয়।

ইয়ান গেলিং যুক্তরাষ্ট্রে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন, তাঁর দাদাও সে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন। তিনি বলেন, তাঁর লেখার জীবনে এ উপন্যাস সবচেয়ে লম্বা এবং তা লিখতে সবচেয়ে কঠিন মনে হতো। তিনি দাদার আদিরূপ দিয়ে একজন বিদেশ থেকে স্নাতক হওয়ার স্বদেশে ফিরে আসা একজন মৃদু মেজাজ ও বুদ্ধিমান যুবক লু ফান ইয়ান বর্ণনা সৃষ্টি করেন। এ বড় পরিবারের পুত্র লু ফান ইয়ান নানা পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে সাথে উঠানামা জীবন কাটিয়েছে। এ উপন্যাস থেকে এক পরিবারের ইতিহাসের কথা ফুটে উঠে। ইয়ান গেলিং বলেন, আমি প্রতিটি রচনা লেখার জন্য কিছু গবেষণা কাজ করি, কিছু তথ্য সংগ্রহ করি। এ ক্ষেত্রে এ উপন্যাস অন্য কর্মের চেয়ে একটু সহজ। কারণে এর প্রধান চরিত্র হচ্ছে নিজের পূর্বপুরুষ। আমি ছোটবেলা থেকে প্রায়শই আমার দাদি ও বড় ফুপুর কাছ থেকে শুনি, আমার দাদা কেমন একজন চমত্কার ব্যক্তি। দুঃখের বিষয় এই যে, কুওমিনতাং পার্টির অন্ধকার রাজনীতি অসন্তোষ আর শাংহাইয়ের তত্কালীন এ্যাকাডেমি চক্রের প্রতি হতাশ বোধ করেন বলে তিনি চল্লিশ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন। এটা একটি দুঃখের কাহিনী। তবে আমি অতি রসিকতার সাথে গল্পটি লিখেছি।

ইয়ান গে লিং ১৯৫৭ সালে শাংহাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ১২ বছর বয়সে তিনি গণ মুক্তি ফৌজের ছেংতু সামরিক অঞ্চলের নৃত্যগীতি দলে ভর্তি করেন। এরপর তাঁর সাহিত্য কর্ম জীবন শুরু হয়। ১৯৯০ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো রাজ্যের কলম্বিয়া শিল্প এ্যাকাডেমিতে প্রবেশ করেন এবং সাহিত্য মাস্টার ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি ফুশায়াং, থিয়েনইয়ু,ছোট খালা দোহে, নবম বিধবা আর সুইচির কথাসহ অনেক মাঝারি ও ছোট গল্প লিখেছেন। তাঁর লেখা দেশি-বিদেশী পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং ইংরেজী, ফরাসী, ওলন্দাজি, স্প্যানিশ ও জাপানীসহ অনেক দেশের ভাষায় অনুবাদিত হয়েছে। তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় কর্ম প্রধানত নারী বিষয়ের। তবে তিনি মনে করেন, তিনি কেবল নারী বিষয় ভালোভাবে লিখতে পারেন তা নয়। তিনি বলেন, অনেকে আমাকে একই প্রশ্ন করেন, তা হচ্ছে তুমি কী নারী বিষয় লিখতে বেশি পছন্দ করো? আসলে আমার সাহিত্য কর্ম সৃষ্টির ইতিহাসে পুরুষ বিষয় কেন্দ্র করার কর্মও কম নয় এবং সেইগুলোও সফল হয়েছে। যেমন বাড়িওয়ালী। উপন্যাসের নাম বাড়িওয়ালী দিলেও আসলে পুরো কাহিনীতে সেই বাড়িওয়ালী কখনো আবির্ভুত হয় নি। শুরু পুরুষ ভাড়াটের কল্পনার মধ্য দিয়ে বাড়িওয়ালীর বর্ণনা করা হয়েছে। আমার ইংরেজী উপন্যাস ভোজে অংশগ্রহণকারীর প্রধান চরিত্রও পুরুষ। আমার উপন্যাস লেখার ভিত্তি হচ্ছে কী রকম কাহিনী আমার মন অভির্ভুত করে। সম্ভবত নারী বিষয়ক গল্প আমাকে সহজ অভির্ভুত করা যায়।

ইয়ান গে লিং বলেন, তাঁর সৃষ্ট নারী চরিত্রদের মধ্যে নবম বিধবা এর ওয়াং ফু থাওকে তিনি সবচেয়ে পছন্দ করেন। কারণ ওয়াং ফু থাও একজন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ চরিত্র, অন্যান্য নারীদের সাথে অনেক পার্থক্য আছে। তাঁর মনে বুদ্ধ-প্রকৃতি আছে। তিনি জানেন কীভাবে ভালোবাসা, কীভাবে যৌনের আনন্দ উপভোগ করা। তিনি কখনো কখনো পুরুষের মা, কখনো কখনো পুরুষের পোষা প্রাণী।

প্রথম তুষারপাত হচ্ছে ১৯৯১ সালে ইয়ান গে লিং বিদেশে রচিত একটি উপন্যাস। তখন তিনি মূলত নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে গল্প লিখেন। তিনি বলেন, তাঁর অনেক অনুপ্রেরণা অতীতের বেদনা থেকে এসেছে। একজন অভিবাসী হিসেবে তিনি পেট ভরে খেতে পারতেন না, , গরম কাপড় পড়তে পারতেন না এবং মনের কষ্ট অনুভব করতেন। বলা যায়, বয়স যত কম, বেদনা তত কম। এখন বয়স বাড়ার সাথে সাথে তিনি উপলব্ধি করেন যে, সুখ সবসময় যৌবনের সঙ্গী হয়। কারণ সে সময় তুমি যত বড় ভূল করলে বা যত ব্যথা পায়, তা সহ্য করা যায়। কিন্তু এখন নিজের মন নরম হয়েছে। যে কোন কাজ তাঁর বেদনার স্নায়ু স্পর্শ করতে পারে। তিনি প্রথমে প্রধানত বিদেশে অভিবাসীদের জীবন লিখতেন, পরে চীনের মূলভূভাগ কেন্দ্র করে রচনা করেন। যেমন নবম বিধবা।

২০১০ সালে ইয়ান গে লিংয়ের প্রথম ইংরেজী ভাষার উপন্যাস ভোজে অংশগ্রহণকারী প্রকাশের পর বিদেশে খুব ভালো প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। এটা ইয়ান গে লিংকে আস্থা দিয়েছে। তিনি সংবাদদাতাকে বলেন, তিনি দ্বিতীয় ইংরেজী উপন্যাস লিখবেন। তবে আপাতত নয়। তিনি নিজেকে একটি সাহিত্যের যাযাবর পাখি মনে করেন। কারণ তিনি প্রায় প্রতি বছর স্বদেশে ফিরে আসতে হয়। চীনে কিছু থাকেন, তারপর আবার চলে যান। তাঁর ইংরেজী উপন্যাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'ইংরেজিতে লেখা অবশ্যই আমার চীনা ভাষার চেয়ে অনেক খারাপ। তবে আমি মনে করি, ইংরেজিতে লেখা অত্যন্ত উত্তেজক। আমি কেবল গল্প বললে তো হবে না। চীনা গল্পের মধ্যে উপযুক্ত ইংরেজী ভাষা ব্যবহার করতে হবে। সরাসরি অনুবাদ করলে হবে না। সবচেয়ে মানানসই শব্দগুলো খুঁজে বের করতে হবে। এটা খুব মজার। তা মনোযোগ দিয়ে করা দরকার।'

সমৃদ্ধ জীবনযাপনের অভিজ্ঞতার প্রেক্ষাপটে ইয়ান গে লিং সুষ্ঠুভাবে নিজের সাহিত্য সৃষ্টির পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। সমালোচক ও পাঠকরা তাঁকে 'উচ্চ গুণগত মান ও বহু প্রজলেখক' বলে অভিহিত করেন। ইয়ান গে লিং বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বিশ বছর ধরে বসবাস করলেও তাঁর অভিবাসীর মনোভাব বদলে যায় নি। তবে তিনি স্বদেশে ফিরে আসলেও নিজেকে প্রান্তিক মানুষ বলে মনে করেন । কারণ গত বিশ বছরে চীনের উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। স্বদেশের জীবনযাপনের পদ্ধতির পরিবর্তন হয়েছে। সমাজের পরিবর্তন হয়েছে। ভাষার পরিবর্তন হয়েছে। ফলে তিনি নিজের অবস্থান খুঁজে পান না।

ইয়ান গে লিং বলেন, 'উপন্যাস লিখতে খুব মজা। আমি বহু বছর ধরে লিখছি। কারণ আমি যদি না লিখি, তাহলে আমি অসুখী মানুষ হবো। লেখার মধ্য দিয়ে আমার প্রাণ সংহত হয়। আমি মনে করি, আমাদের প্রত্যেক মানুষের জীবন আগে থেকে বন্দোবস্ত করা হয়েছে। আমরা শুধু তা গ্রহণ করি। তবে আমার উপন্যাসে আমি অন্য জনের জীবন বন্দোবস্ত করতে পারি।'

তবে তিনি বর্তমান যুগের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন। যেমন, তিনি এখন কম্পিউটারে উপন্যাস 'আজীবন' লিখছেন। তিনি পুরুষ বিষয়ক উপন্যাসও লিখতে শুরু করেছেন এবং আধুনিক নগর জীবন বিষয়ক উপন্যাসও লেখেন। এখন ইয়ান গে লিং সাহসের সঙ্গে নানা নতুন বিষয় স্পর্শ করতে চেষ্টা করেন এবং নিজের সুপ্ত শক্তি অন্বেষন করেন।

ইয়ান গে লিং অন্য জনের কাছ থেকে গল্প শুনতে ভালোবাসেন । প্রতি বার যখন তিনি স্বদেশে ফিরে আসেন, তখন তিনি আশেপাশের বন্ধুদের কাছ থেকে অনেক মজার গল্প শোনেন। এ গল্পগুলো তাঁর লেখার উপাদান হয়ে যায়। তাঁর বাবা সবসময় তাঁর জন্য 'লেখক ডাইজেস্ট' আর 'ডাইজেস্ট পত্রিকা'র ফরমাশ দেন এবং এ সব ম্যাগাজিন ও পত্রিকা সংরক্ষন করেন। তিনি ফিরে আসার সময় সেগুলো সব সঙ্গে নিয়ে যান। সময় থাকলে পড়তে থাকেন।

ইয়ান গে লিংয়ের স্বামী একজন কূটনীতিক। কয়েক বছর পর পর তাঁরা একটি নতুন জায়গায় গিয়ে থাকেন। তিনি এ রকম জীবন পছন্দ করেন। তিনি বলেন, 'আমি বর্তমান জীবনধারা খুব পছন্দ করি। সবসময় এক নতুন সংস্কৃতি সম্পর্কে আমার শেখার আগ্রহ জাগে। আমি সেটার সঙ্গে আমার নিজের সংস্কৃতির তুলনা করি। এখন আমরা জার্মানিতে আছি। বার্লিনের ওপর আমার গভীর জ্ঞান আছে। আমার ৯০ শতাংশ উপন্যাস বিদেশি জীবন নিয়ে লেখা। আমি মনে করি, আমার সবচেয়ে ভালো উপন্যাস হচ্ছে 'ফুশান'। (ইয়ু /শান্তা)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040