|
যদি আপনি প্রশ্ন করেন, বর্তমানে চীনের শিশু সাহিত্য মহলে সবচেয়ে উত্তপ্ত আলোচ্য বিষয় কি, তাহলে নিসন্দেহে তার উত্তর হবে মাইক্রোব্লগ। গত ডিসেম্বর মাসের শেষ দিক থেকে ম্যাক্রব্লগের প্রকাশের মাধ্যমে মাত্র ১৪০টি শব্দ দিয়ে রূপকথা বলার লেখা পদ্ধতি চীনে একটি প্রাণবন্ত পরীক্ষামূলক ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। চীনের সনাতন শিশু সাহিত্যিকরা পর পর তাদের মাইক্রোব্লগ রূপকথা প্রকাশ করেছেন। বিখ্যাত সিনার ম্যাক্রব্লগ প্রথম মাইক্রোব্লগ রূপকথা প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছে। একই সময় চীনের অনেক প্রকাশনালয়ও নানা উদ্যোগ নিয়ে কিছু সংখ্যক মাইক্রোব্লগ রূপকথা প্রকাশের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। বিপুল সংখ্যক মাইক্রোব্লগ রূপকথা লেখকের মধ্যে থান সুই তুং পাঠকদের কাছে একজন প্রিয় লেখক।
অধ্যাপক থান সুই তুং
মাইক্রোব্লগ রূপকথা হচ্ছে ওয়েবসাইটের যুগে উদ্ভূত রূপকথার একটি নতুন রূপ। তবে মাইক্রোব্লগ রূপকথায় সাধারণ রূপকথার কাহিনী, কল্পনা, ভাব ও খেলার গুণ বজায় রয়েছে। শ্রেষ্ঠ রূপকথার মধ্যে ক্ষুদ্র ও সংক্ষিপ্ত আকার এবং চমত্কার পরিকল্পনা থাকা উচিত। মাইক্রোব্লগ রূপকথার লেখকদের উচিত দ্রুতভাবে, সংক্ষিপ্তভাবে এবং জীবন্তভাবে তাদের জীবন ও ভাবানুভূতি সম্পর্কে তাদের উপলব্ধিকে পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেয়া। তাহলে ম্যাক্রব্লগ রূপকথা কি ? অধ্যাপক থান বলেন, মাইক্রোব্লগ রূপকথা বলতে ম্যাক্রব্লগে লেখা ক্ষুদ্র রূপকথা। সাধারণ রূপকথার সংগে তার পার্থক্য রয়েছে। কারণ মাইক্রোব্লগ রূপকথার শব্দ সংখ্যা ১৪০ শব্দের বেশি হতে পারে না। এছাড়া মাইক্রোব্লগ রূপকথা ও সাধারণ রূপকথার মধ্যে কোনো তফাত নেই। মাইক্রোব্লগ রূপকথা আসলে ছোট ছোট কাল্পনিক গল্প। যদি সাধারণ রূপকথাকে বড় বেলুন বলা হয়, তাহলে মাইক্রোব্লগ রূপকথা হবে কল্পনার বুদবুদ এবং একটি খুব হাল্কা ক্ষুদ্র কাল্পনিক জগত। বস্তুত ম্যাক্রব্লগ রুপকথাও উপকথা বটে। পার্থক্য হচ্ছে মাইক্রোব্লগ রূপকথার বাহন হচ্ছে ম্যাক্রব্লগ। মাইক্রোব্লগ রূপকথার শব্দ সংখ্যা ১৪০ হলেও তাতে কোনো পূর্ণাংগ গল্প লেখা যাবে না, এমন কোনো কথা নয়। ঠিক যেমন চীনের থাং রাজবংশ সময়কার বিখ্যাত কবির লেখা শ্রেষ্ঠ কবিতা সংক্ষিপ্ত হলেও দীর্ঘ কবিতার সৌন্দর্য্যও উপভোগ করা যায়। সুন্দর কবিতার প্রতিটি শব্দ ও লাইন পরিপূর্ণভাবে পাঠকদের চমত্কার কল্পনার সঞ্চার করতে পারে। একটি ভালো কবিতা সফলভাবে পাঠকদেরকে একটি মনোরম জগতে নিয়ে যেতে পারে। রূপকথার অবস্থাও তাই। শব্দ সংখ্যা কম হলেও, সেটা লেখার সৌন্দর্য্যের ওপর কোনো প্রতিকূল প্রভাব বিস্তার করে না। শ্রেষ্ঠ মাইক্রোব্লগ রূপকথা একটি বীজের মতো। সেটি শিশুদের মনে অংকুরিত হতে পারে এবং বড় গাছে পরিণত হতে পারে। সেটি পড়ে মনে হচ্ছে একবিন্দু পানি পুকুরে পড়লে পুকুরের পানির তরংগ আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়বে এবং তারপর পুকুরের পানি জীবন্ত হয়ে উঠে।
অনেক আগে থেকে সাধারণ রুপকথা দীর্ঘ রূপকথা, ধারাবাহিক রূপকথা, স্বল্প রূপকথা ও ক্ষুদ্র রূপকথায় বিভক্ত হয়ে আসছে। শিশুদের বয়সের বৈশিষ্ট্যের কারণে তাদের কাছে বলা কাহিনীর মধ্যে সংক্ষিপ্ত আকারের কাহিনীর দরকার পড়ে। মাইক্রোগের সুবাদে সাহিত্যের অনুরাগী , বিশেষ করে শিশু সাহিত্যের অনুরাগীরা আরো সহজে লেখালেখি ও পাঠ করার দলে শামিল হতে পারেন। ব্যাপক নেট নাগরিক হচ্ছেন মাইক্রোব্লক রূপকথার সমালোচক। তাদের তাত্ক্ষনিক সমালোচনা ও তৃণমূল ধরনের লেখা প্রতিনিয়তই লেখকদের সচেতন করে তুলে। পাশাপাশি আরো বেশি সংখ্যক লোক মাইক্রোব্লগ রূপকথা লেখার দলে যোগ দিচ্ছেন।
যেহেতু অনেক লোক মাইক্রোব্লগ রূপকথার ওপর নিবিড় দৃষ্টি রেখেছেন, সেহেতু সেটি এখন প্রাণবন্ত জীবন শক্তিতে ভরপুর। অথচ লেখক উন্নত মানের রূপকথা লিখতে না পারেন এবং পাঠকদেরকে হতাশ করে ফেলেন, তবে ম্যাক্রব্লগ রূপকথা বুদদুদে পরিণত হবে। সুতরাং মাইক্রোব্লগ রূপকথা তাত্ক্ষণিকের জন্য বুদবুদে পরিণত হবে, না সবার কাছে জনপ্রিয় নতুন ধরনের রূপকথায় পরিণত হবে, সেটা প্রকাশ পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে না, বরং মাইক্রোব্লগ রূপকথার মানের ওপর নির্ভর করে। যেহেতু যে কোনো লোক মাইক্রোব্লগ রূপকথা লিখতে পারেন, সেহেতু এ ধরনের রূপকথার মান নানা ধরনের হতে পারে। তবে মাইক্রোব্লগ রূপকথ ও সাধারণ রূপকথার মান সমান্তরাল হওয়া উচিত। এ সম্পর্কে থান সুই তুং বলেন, প্রথমত মাইক্রোব্লগ রূপকথার শব্দ সংখ্যা ১৪০ হলেও তাতে অপেক্ষাকৃত পূর্ণাংগ কাহিনী থাকা দরকার এবং পাঠকদেরকে অপেক্ষাকৃত পূর্ণাংগ সৌন্দর্য্য দেয়া দরকার পড়বে।
দ্বিতীয়ত ছোট কাহিনীর মধ্যেও একটি স্পষ্ট সারমর্ম অর্থাত একটি কেন্দ্রীয় ভাবধারা থাকতে হবে। তৃতীয়ত জীবন্ত রূপ দিয়ে এবং প্রাণবন্ত ভাষা ব্যবহার করে শিশুদের আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে হবে। এসব উপাদান থাকলে এ কাহিনী পূর্ণাংগ হয়ে উঠবে। অবশ্য কাহিনীর মধ্যে আরো কিছু খুঁটিনাটি বিষয় থাকা চাই।
আপতদৃষ্টিতে ১৪০ শব্দ খুব নগণ্য, তবে শ্রেষ্ঠ সাহিত্য কর্ম শব্দ সংখ্যার ওপর নির্ভর করে না, বরং লেখাটির চরিত্রের ওপর নির্ভর করে। ঠিক যেমন কোনো কোনো লোক বড় আকারের বস্তু পছন্দ করেন, আবার কোনো কোনো লোক ছোট আকারের বস্তু পছন্দ করেন। পাঠকরা ম্যাক্রব্লগ রূপকথা বেছে নিলে, তার ক্ষুদ্রতাকে অপছন্দ করবেন না, বরং তার সংক্ষিপ্ততাকে পছন্দ করেন। থান সুই তুং বলেন, আকারের সীমাবদ্ধতার কারণে দীর্ঘ রূপকথার সংগে মাইক্রোব্লগ রূপকথার তুলনা করা যায় না। তবে শিশুরা এটি পড়ার পর অন্য রূপকথাও বেছে নিতে পারে। তাতে কিছু আসে যায় না।
মাইক্রোব্লগ রূপকথা প্রকাশের ব্যাপারেও দ্বিমত রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, বই ব্যবসায়ীরা নিজেদরর স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য মাইক্রোব্লগ রূপকথা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন। অধ্যাপক থান সুই তুং এ মতের বিরোধিতা করেন। তার মতে ভালোমন্দ না দেখে মাইক্রোব্লগ রূপকথাকে একেবারে প্রত্যাখ্যান করা ঠিক নয়। একটি ভালো লেখা প্রকাশিত হলে, সেটি যদি পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং সমাদর পেয়েছে, তাতে নিশ্চয় সুফল পাওয়া যাবে।
থান সুই তুংয়ের চোখে মাইক্রোব্লগ রূপকথা কেবল সাধারণ রূপকথার চেয়ে আকারে ছোট এবং শব্দ সংখ্যা কম, তবে মাইক্রোব্লক রূপকথায় সাধারণ রূপকথার সারমর্ম ও পুষ্টির কোনো বিলুপ্তি ঘটে নি। তিনি উপমা দিয়ে বলেন, মাইক্রোব্লগ রূপকথা ঠিক শাকসব্জি চাষের মতো। খেতে সব ধরনের শাক নাও হতে পারে। অথচ তাই বলে সব ধরনের শাক প্রত্যাখ্যান করলে চলবে না।
সম্প্রতি সিনা ওয়েবসাইট একটি মাইক্রোব্লগ রূপকথা প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছে। অধ্যাপক থান সুই তুং হচ্ছেন এ প্রতিযোগিতার একজন সমালোচক। তিনি বলেন, বর্তমানে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া লেখকরা দুই ভাগে বিভক্ত। একটি হচ্ছে বয়স্কদের গ্রুপ। একটি হচ্ছে কিশোর গ্রুপ।
বিখ্যাত শিশু সাহিত্যিক ছিন ওয়েন চুনও মনে করেন যে, মাইক্রোব্লগ রূপকথার উদ্ভব যেন রূপকথা জগতকে হৃদযন্ত্র সচলকারী একটি ইঞ্জেক্সন দিয়েছে। এর সুবাদে আগের নিস্তেজ রূপকথা জগত রাতারাতি তত্পর হয়ে উঠেছে। সবাই ম্যাক্রব্ল রূপকথাকে পছন্দ করেন। এটি তো ভালো ব্যাপার। ম্যাক্রব্লগ রূপকথা লেখা যেমন রূপকথা সম্পর্কে সকলের সচেতনতাকে বাড়ানো পক্ষে সহায়ক হবে, তেমনি প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের লেখালেখির সামর্থ্যকে বাড়ানো যাবে। পাশাপাশি এর মাধ্যমে অনেক নতুন বন্ধু পাওয়া যাবে। অবশ্য প্রথম দিকে অনেকে হয়তো ভালো নাও লিখতে পারেন। তবে ম্যাক্রব্লগে লেখার সময় সহজে সংশোধন করা যায় এবং এমন কি একেবারে বাতিল করা যায়। সুতরাং নতুন লেখকদের পক্ষে কোনো ভয় নেই। তারা সাহসের সংগে লিখতে পারেন।
সবশেষে আমরা একসাথে অধ্যাপক থানের লেখা "পাতা ও পাখি" নামক মাইক্রোব্লগ রূপকথা উপভোগ করবো।
শীতার্ত উত্তর বাতাস বয়ে এসেছে। গিংকো গাছের সর্বশেষ একটি পাতা ঝরে পড়ল। পাতা নি:শ্বাস ফেলে বলল, "এত ঠান্ডা, আমি কোথায় যাবো? একটি পাখি বলল, "আমার সংগে যাও।"পাখি পাতাকে নিজের বাসায় নিয়ে গেল।পাখি বলল, "আমি তাকে লেপ হিসেবে ব্যবহার করবো। এতে পাতারও ঠান্ডা লাগবে না, আমারও শীত লাগবে না। " এভাবে কনকন শীতকালে পাতা ও পাখি পরস্পরের কাছ থেকে গরম দিয়েছে। (শি)
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |