|
চীনা লেখক বি ফেই ইয়ু
২০১১ সালটি চীনের চিয়াসু প্রদেশের লেখক বি ফেই ইয়ুর কাছে অত্যন্ত স্মরণীয়। এ বছরে তিনি 'সংবাহন' নামে উপন্যাসের জন্য চীনের মাওতুন সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন। মাওতুন চীনের সমকালের বিখ্যাত লেখক। তাঁর আসল নাম শেন ইয়ান বিং। তাঁর লেখা চীনে সুপরিচিত। তাঁর লেখা নিয়ে বহু চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নাটক নির্মিত হয়েছে। তাঁর ছদ্মনাম অনুসারে নামকরণ করা চীনের মাওতুন সাহিত্য পুরস্কার হচ্ছে চীনের সর্বোচ্চ শ্রেণীর সাহিত্য পুরস্কার। এ পুরস্কারকে চীনের নোবেল সাহিত্য পুরস্কার বলা হয়। চীনের সিয়াসু প্রদেশের লেখকদের মধ্যে বি ফেই ইয়ু সর্বপ্রথম এ পুরস্কার অর্জন করেন।
'সংবাহন' হচ্ছে ১ লাখ ৮০ হাজার শব্দের একটি উপন্যাস। এ উপন্যাসে অন্ধ সংবাহকদের অন্তর্জগতের অন্ধকার ও উজ্জ্বলতা বর্ণিত হয়েছে। এ উপন্যাসের চরিত্রদের আদিরূপ সবই বি ফেই ইয়ুর জীবনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুগণ।
শ্রোতাবন্ধুরা, আজকের এ আসরে আপনারা আমার সঙ্গে বি ইয়ু ফেইর উপন্যাসে প্রবেশ করুন, এক দল অন্ধ সংবাহকের কাছে চলে আসুন।
বি ফেই ইয়ু'র উপন্যাস 'সংবাহন'
অন্ধ সংবাহকদের যোগাযোগ প্রসঙ্গে বি ফেই ইয়ু বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর আমি নানচিং বিশেষ শিক্ষা নোর্মল বিদ্যালয়ে পাঁচ বছর শিক্ষকতা করি। সেখানকার ছাত্রছাত্রীরা স্নাতক হওয়ার পর বিভিন্ন অঞ্চলের অন্ধ স্কুল বা মূক-বধির স্কুলের শিক্ষক হবে। আমি সংবাহন কেন্দ্রে প্রবেশের সময় আমার বাম কাঁধে ক্রিড়াজনিত আঘাত ছিল। আমি চিকিত্সা গ্রহণের জন্য সেখানে গিয়েছি। মাস খানেক চিকিত্সা গ্রহণের পর আমার কাঁধের ব্যথা চলে যায়। সে সময় আমি প্রতিদিন সেখানে যেতাম। আমি কেবল চিকিত্সার জন্য সেখানে যাই না। আমি সেখানে গিয়ে তাদের সাথে সিগারেট খেয়ে কিছুক্ষণ গল্প করি। আমি তাদের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক স্থাপন করেছি। তবে অন্ধের সত্যিকার আস্থা অর্জন করা খুব কঠিন। তারা সরাসরি আপনাকে প্রত্যাখ্যান করে না। তারা খুব ভদ্র।'
বি ফেই ইয়ু ও অন্ধ সংবাহকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রয়েছে। অন্ধ যুবক কোন বান্ধবী পেলে তাকে দেখাতে নিয়ে আসেন এবং বিয়ের অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ করেন। এমন কী স্বামী স্ত্রী ঝগড়া করলে তিনি মিটমাট করেন।
যদিও অন্ধ সংবাহকদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে অনেক দিন। তবে বি ফেই ইয়ুর তাদের নিয়ে কোন উপন্যাস লেখার পরিকল্পনা ছিল না। এক দিন একজন অন্ধ মেয়ের সাহায্যে তিনি অন্ধকারে সিঁড়ি থেকে নেমেছেন। সে দিন তিনি এমন একটি বই লেখার সিদ্ধান্ত নেন।
বি ফেই ইয়ু স্মরণ করে বলেন, মাঝে মাঝে রাত ১২টার পর সংবাহন কেন্দ্র বন্ধ হওয়ার পর তিনি তাদের বাড়িতে গিয়ে গল্প করতেন। একদিন একজন যুবক তাঁকে বলেন, স্যার, আমরা ডিনার খেতে যাবো। আমার বান্ধবী দাওয়াত দিয়েছে। তাঁরা রুম থেকে বের হওয়ার সময় হঠাত্ বাতি নষ্ট হয়েছে। অন্ধকারে কিছু দেখা যায় না। এটা অন্ধ ব্যক্তির কাছে কোন সমস্যা নয়। তখন একজন অন্ধ মেয়ে বি ফেই ইয়ুর সাহায্যে হাত বাড়িয়েছে। বি ফেই ইয়ু বলেন,
'আমি তার হাত ধরে গভীর অন্ধকারের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলাম, কোথায় পা দিবো তা কিছু জানি না। সেই মেয়ে বলল, স্যার, আমার সঙ্গে চলুন। তারপর দ্রুত ও সুষ্ঠুভাবে সিঁড়ি দিয়ে আমাকে নামিয়েছে। একতলায় পৌঁছানোর পর মেয়েটি আমাকে বলে, দেখুন, আপনি আমার চেয়ে দুর্বল হয়েছেন। সেই মুহুর্তে আমি বুঝেছি, আমার এক নতুন বই বের হবে।'
বি ফেই ইয়ুর উপন্যাস 'সংবাহন' হচ্ছে অন্ধ সংবাহকের জীবনকে কেন্দ্র করে চীনের প্রথম সাহিত্য সৃষ্টি। এ উপন্যাসটি পাঠকদের জন্য অন্য বিশ্বে প্রবেশের দ্বার খুলেছে। তবে এ উপন্যাস লেখার প্রক্রিয়া খুব কঠিন ছিল। বি ফেই ইয়ু'র কাছে সবচেয়ে কঠিন বিষয় ছিল বইয়ের কাঠামো। তিনি বলেন,
'এ উপন্যাসের এক প্রধান চরিত্র হচ্ছে ডাক্তার ওয়াং। তাঁর চরিত্র গড়ে তোলার জন্য আমি অনেক চিন্তা করেছি। তাঁর চরিত্রের বৈশিষ্ট্য হলো কোমলতা ও সহিষ্ণুতা। সে যে কোন চরিত্রের মানুষের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে পারে। ডাক্তার ওয়াংকে কেন্দ্র করে লেখা এ উপন্যাসটির সঙ্গে সংবাহন কেন্দ্রের প্রত্যেক অন্ধ সংবাহকের সঙ্গে কোন না কোন সম্পর্ক আছে। উপন্যাসটি এ সব অন্ধ ব্যক্তিদের ভুল বোঝাবুঝি, অনাস্থা ও সন্দেহ ও দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে চলছে।'
বি ফেই ইয়ু ১৯৬৪ সালে চিয়াংসু প্রদেশের সিংহুয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮৭ সালে ইয়াংচৌ নোর্মল কলেজের চীনা ভাষা বিভাগে স্নাতক হওয়ার পর পাঁচ বছর শিক্ষক ছিলেন। তাঁর লেখা ছোটগল্প প্রায় ১০০টি। তাঁর প্রধান ছোট গল্প সংগ্রহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে 'বিশৃঙ্খল আঙ্গুল', 'পূর্বপুরুষগণ' ইত্যাদি। তাঁর লেখা 'ভুট্টা', 'ছিংঈ' দেশি-বিদেশি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছে।
বি ফেই ইয়ু বলেন, বাস্তব জীবন আমাদের কল্পনার মতো আরামদায়ক নয়। মাঝে মধ্যে জীবনের ব্যথা অনুভব করে তিনি এক একটি রচনা লিখতে থাকেন। 'সংবাহন' উপন্যাসটি প্রতিবন্ধীর সঙ্গে সম্পর্কিত, ফলে এর মধ্যে অবশ্যই সহানুভূতি ও মমতা আছে।
বি ফেই ইয়ু বলেন, 'সংবাহন' এ উপন্যাস প্রকাশের জন্য প্রথমেই অন্ধ সংবাহকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত। কারণ তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব তাঁর জীবনকে সম্প্রসারিত করেছে, তাঁর প্রাণকে উন্নত করেছে। (ইয়ু)
| ||||
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |