বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামের ৪১তম বার্ষিক সম্মেলন ৩০ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ডের দাভোসে শেষ হয়েছে। বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি ও অর্থনীতিবিদসহ ২৫০০ জনেরও বেশি প্রতিনিধি পাঁচ দিনব্যাপী সম্মেলনে নতুন পরিস্থিতে বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করেন।
এবারের দাভোস বার্ষিক সম্মেলন হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতির গুরুতর আর্থিক সংকটোত্তর কালে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মৌলিক পরিবর্তন হওয়ার পর আয়োজিত এক ফোরাম। কয়েক বছর মন্থর গতিতে সুবিন্যাস হওয়ার পর বিশ্ব অর্থনীতি সর্বনিম্ন পর্যায় থেকে বের হয়ে পুনরুদ্ধার হয়েছে। গত তিন বছরের দাভোস সম্মেলনের তুলনায় এ বছরের সম্মেলন আশাবাদ মনোভাবে ভরা। এবারের সম্মেলন উদ্বোধনের আগের দিন বিশ্ববিখ্যাত এক সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ কার্যালয় প্রকাশিত ১৪তম বিশ্ব প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের আস্থা সূচক বিষয়ক এক জরিপ রিপোর্টে বলা হয়েছে, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৪৮ শতাংশ পরবর্তী এক বছরে নিজেদের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রবৃদ্ধির ব্যাপারে আস্থাবান। এ সংখ্যা আর্থিক সংকট ঘটার আগে ২০০৭ সালের সমান হয়েছে। ২৫ শতাংশ শিল্পপ্রতিষ্ঠান নিজেদের আর্থিক আকার সম্প্রসারণ করে নতুন কর্মচারী নিয়োগ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এটা গত বছরের চেয়ে ৯ শতাংশ বেশি।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পপতিদের আস্থা সুচক সবচেয়ে উচুতে। জানা গেছে, আস্থার প্রধান উত্স হচ্ছে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। ৯০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন, পরবর্তী এক বছরে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় থাকবে। চীন হচ্ছে এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন।
বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামের এবারের বার্ষিক সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হলো, 'নতুন পরিস্থিতিতে অভিন্ন নিয়ম'। আর্থিক সংকটকালে চীনের লক্ষণীয় নৈপুণ্য দেখে বিশ্ব চীনের নিরন্তর প্রবৃদ্ধির প্রবণতার ওপর গভীর বিশ্বাস স্থাপন করেছে। ভারত, আসিয়ান, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলও বিশ্ব অর্থনীতির এক উজ্জ্বল বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এ বছরের দাভোস বার্ষিক সম্মেলনে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় চীনের অন্তর্ভুক্তির দশ বছর উপলক্ষে আয়োজিত 'বিশ্ব বাণিজ্য ও প্রবৃদ্ধির ওপর চীনের প্রভাব' শীর্ষক বিশেষ আলোচনা সভা, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের বিশেষ ভাষণ, দাভোসের চার দিকে প্রচারিত ভারতের রাষ্ট্রীয় ভাবমুর্তি বিজ্ঞাপন এবং 'ভারত রাত' নামক সান্ধ্যসভা সম্মেলনের অংশগ্রহণকারীদের কাছে গুরুত্ব পেয়েছে।
রাশিয়া ও মেক্সিকো দাভোসকে বড় আকারের বিনিয়োগ মেলায় রূপান্তরিত করেছে। তারা নিজ দেশের বিনিয়োগের পরিবেশ প্রচার করে। এ দুটি দেশের প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ ও ফিলিপ কালদেরোন হিনোজোসা বড় প্রয়াস নিয়েছেন। সাফল্যের সঙ্গে বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজক দেশ এবং ব্রিক দেশগুলোর নতুন সদস্য দক্ষিণ আফ্রিকাও খুব আস্থাবান।
প্রতিবারের দাভোস বার্ষিক সম্মেলনে সে বছরের বিশ্ব অর্থনীতি পর্যালোচনা করা হয়। এবার সম্মেলনে ইউরোপের সার্বভৌম ঋণ সংকটকে সবচেয়ে বড় গুপ্ত ঝুঁকি হিসেবে মনে করা হয়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মার্কেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি ও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন - ইউরোপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ তিনটি বড় রাষ্ট্রের শীর্ষনেতারা সবাই দাভোসে উপস্থিত হন।তাঁরা যৌথভাবে ইউরোপের অর্থনীতি সমর্থন করেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইউরোপের অর্থনীতির ওপর আস্থা রাখার অনুরোধ জানান। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
