তিন মাসেরও বেশি সময়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ইউনিভার্সাল বেইজিং রিসোর্টের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হয়। অগণিত পর্যটক, বেইজিং ইউনিভার্সাল রিসোর্ট পার্কে প্রবেশের দিন গুনছিলেন।
চীনের প্রথম এবং বিশ্বের বৃহত্তম এই ইউনিভার্সাল স্টুডিও প্রকল্পে ‘গ্লোবাল ইউনিট’ এবং ‘মেড ইন চায়না’-সংক্রান্ত নানা বিষয় আছে।
ইউনিভার্সাল বেইজিং রিসোর্ট চীনা পর্যটকদের জন্য তিনটি ‘এক্সক্লুসিভ নৈসর্গিক স্পট’ উপহার দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে: কুংফু পান্ডার ল্যান্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড, ট্রান্সফরমারস এবং ফিউচার ওয়াটার ওয়ার্ল্ড।
কুংফু পান্ডাকে থিম হিসেবে তৈরি করে বিশ্বের প্রথম কুংফু পান্ডার ল্যান্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড কুংফু পান্ডার নামে ড্রিমওয়ার্কস অ্যানিমেশন মুভি থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছে। ড্রিমওয়ার্কস বিশেষভাবে কুংফু পান্ডার ল্যান্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ডের জন্য আরো কয়েকটি নতুন অ্যানিমেটেড চরিত্র তৈরি করছে এবং এই নৈসর্গিক স্থানটি কুংফু পান্ডার বিশ্বকে পর্যটকদের কাছে স্পষ্ট ও প্রাণবন্তভাবে উপস্থাপন করে।
‘ট্রান্সফরমার’ থিম হিসেবে তৈরি বিশ্বের প্রথম নৈসর্গিক স্পটে ইউনিভার্সাল বেইজিং রিসোর্টের সবচে বড় এবং সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ রোলার কোস্টার রয়েছে। এর গতি ৪.৫ সেকেন্ডের মধ্যে স্থির অবস্থা থেকে প্রতি ঘণ্টায় ১০৪ কিলোমিটার গতিতে উন্নীত হয়। ধাতব গিয়ারের চরম গতি এবং বিস্ফোরণের শব্দ দর্শকদের হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়।
বিশ্বের প্রথম ফিউচার ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের থিমযুক্ত নৈসর্গিক স্পটে পর্যটকরা মোটরসাইকেল স্টান্ট, এক্সট্রিম ডাইভিং, গুলি বৃষ্টি এবং শক ব্লাস্ট স্টান্ট পারফরম্যান্স উপভোগ করতে পারেন।
বেইজিং ইউনিভার্সাল রিসোর্টের এসব এক্সক্লুসিভ অভিজ্ঞতা ইউনিভার্সাল বেইজিং রিসোর্টকে একটি ‘পরিচয় ট্যাগ’ দেয়, যা এটিকে অন্যান্য রিসোর্ট থেকে আলাদা করে দিয়েছে।
বেইজিং ইউনিভার্সাল রিসোর্টের প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পে চীনা সাংস্কৃতিক উপাদান এক-তৃতীয়াংশ দৃশ্যমান হতে পারে।
বেইজিং ইন্টারন্যাশনাল রিসোর্টস লিমিটেডের থিম পার্ক এবং রিসোর্ট ম্যানেজমেন্ট শাখার জেনারেল ম্যানেজার টম মেহরম্যান বলেন, বেইজিং ইউনিভার্সাল রিসোর্ট নকশা এবং নির্মাণের ক্ষেত্রে চীনা ভোক্তাদের চাহিদা এবং সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণরূপে বিবেচনা করে এবং চীনা উপাদান দিয়ে পার্কে ‘ফিনিশিং টাচ’ দেওয়া হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি চীনা বৈশিষ্ট্যময় জায়গা হলো কুংফু পান্ডার ল্যান্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড। এই সম্পূর্ণ অন্দরমহলীয় নৈসর্গিক স্থানে প্রবেশ করলে একটি স্বপ্নময় প্রাচ্যের আশ্চর্যভূমি দেখা যায়। আপনি ইচ্ছামতো চীনা বৈশিষ্ট্যের মধ্যে থাকতে পারবেন। বাঁশ দিয়ে উত্থাপিত বড় লাল লণ্ঠন দরজার মাঝখানে ঝুলছে, শান্তিপূর্ণ উপত্যকা একটি আনন্দময় রাতের বাজারের মতো।
কুংফু পান্ডা চলচ্চিত্রে যে ছোট জেলায় প্রধান চরিত্র আর বাও বাস করে, সেখানে আছে ছোট ছোট সেতু এবং প্রবাহিত জল, মণ্ডপ, লাল ইট ও নীল টাইলস, চীনা জানালার জাল, চীনা চিত্রকলা, বাঁশের বন ও ওয়াইন জার।
টোম মেহরম্যান বলেন, থিম পার্কের দেওয়া ১১০টি খাবারের মধ্যে ৬৫ শতাংশ চীনা ও এশিয়ান স্বাদের। ডিজাইন টিম চীনের জন্য একচেটিয়া এক হাজারেরও বেশি সিনেমা-ভিত্তিক স্যুভেনির তৈরি করেছে। বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল ‘মিনিয়োস’ চলচ্চিত্র-সংক্রান্ত রাশিচক্র সিরিজ।
তা ছাড়া, পার্কের মধ্য দিয়ে একটি সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ ওয়াটার সিস্টেম চলছে, যা সিও থাইহাউ নদীর ডাইভারশন এবং রূপান্তরের মাধ্যমে তৈরি হয়। ঐতিহ্যবাহী কবিতাসহ চীনা সংস্কৃতির উপাদানের প্রতিফলন ঘটেছে ওয়াটার সিস্টেম ট্রেইলের নকশায়। সিটি অ্যাভিনিউ, ছুয়েন চু দে ও দংলাইশুনসহ অন্যান্য চীনা কালোত্তীর্ণ ব্র্যান্ড এবং মোংনিউ আইসক্রিমের দোকানে ঘুরে বেড়ালে আরও বেশি চীনা স্বাদ উপভোগ করা যায়।
ইউনিভার্সাল বেইজিং রিসোর্ট নির্মাণে চীনের প্রকৌশলীদের প্রজ্ঞা ও চেতনার ছাপ দেখা যায়। এতে ব্যাপকভাবে দেশীয় সরঞ্জামও ব্যবহৃত হয়েছে এবং চীনের উৎপাদন প্রযুক্তি ও মান সম্পূর্ণরূপে প্রতিফলিত হয়েছে।
‘কোস্টারিকার উপকূলের একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপে, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কারণে ডাইনোসরের পুনর্জন্ম হয়েছিল। একটি নৃশংস জেনেটিক্যালি মডিফাইড ডাইনোসর খাঁচা থেকে পালিয়ে যায়।’ ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’ নামে চলচ্চিত্রের দৃশ্য-বিন্যাস এখন বেইজিং ইউনিভার্সাল রিসোর্টের জুরাসিক ওয়ার্ল্ড থিমপার্কে বিস্ময়করভাবে মঞ্চস্থ হয়।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ইয়াং মোং বলেন, ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড অ্যাডভেঞ্চার’ নামক একটি উত্তেজনাপূর্ণ এবং রোমাঞ্চকর প্রকল্প রয়েছে, পর্যটকরা বিলুপ্ত প্রাণীদের জগতে তাদের পাশাপাশি হাঁটেন এবং একসঙ্গে উড়ে বেড়ান। স্টোরি লাইন, মেশিন মডেল ল্যান্ডস্কেপিং, রাইডিং সিস্টেম, লাইট অ্যান্ড শ্যাডো সিস্টেম ইত্যাদির সমন্বয়ে দুর্দান্ত ইফেক্ট তৈরি করা হয়। এসব মূলত ইলেক্ট্রোমেকানিক্যাল ইন্সটলেশনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। ইলেক্ট্রোমেকানিক্যাল ইনস্টলেশনের অন্যতম মূল বিষয় হল আলো। এখানে, ১৬৩২০ ধরনের বাতির মধ্যে ৮০ শতাংশই চীনের।
জুরাসিক ওয়ার্ল্ডে আরেকটি দুর্দান্ত দৃশ্যও রয়েছে। নুব্রা দ্বীপে, একটি দোলনা জাঁকজমকভাবে দাঁড়িয়ে আছে, ঝর্ণার পানি প্রায় ৫০ মিটার উচ্চতা থেকে উড়ে আসে এবং সিনেমার দৃশ্য-বিন্যাস পর্যটকদের চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে ওঠে।
১০ হাজারেরও বেশি স্টিলের উপাদান দিয়ে তৈরি এই বিশালাকার দোলনা তৈরি করেন ইঞ্জিনিয়াররা।
ভবিষ্যতে বেইজিং ইউনিভার্সাল রিসোর্ট বেইজিং পর্যটনের একটি নতুন নেমকার্ড হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
(লিলি/তৌহিদ/শুয়ে)