প্রসঙ্গ: চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিন্ন ভিন্ন মঙ্গলাভিযান
2021-02-20 15:39:21

 

ফেব্রুয়ারি ২০: স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মার্কিন ‘পারসিভারেন্স’ রোভার সফলভাবে মঙ্গল গ্রহে অবতরণ করেছে। এটি দেশটির রাষ্ট্রীয় মহাকাশ ব্যুরোর পঞ্চম সফল অবতরণকারী রোভার। কয়েক দিন আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ‘হোপ’ ও চীনের ‘থিয়ান ওয়েন ১’ অনুসন্ধানযান পর্যায়ক্রমে মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে প্রবেশ করে। তাহলে তিনটি দেশের মঙ্গলাভিযানের মধ্যে পার্থক্য কী? আজকের ‘সংবাদ পর্যালোচনায়’ আমি এ বিষয়ে আলোচনা করব।

গত বছরের জুলাইয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র একের পর এক মঙ্গলের উদ্দেশ্যে মহাকাশযান পাঠায়। সাত মাস পরে, মার্কিন ‘পারসিভারেন্স’ শীর্ষক মহাকাশযানটি যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ১৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টা ৫৫ মিনিটে মঙ্গল গ্রহে অবতরণ করে এবং মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠ থেকে প্রথম আলোকচিত্র পাঠায়। আর ফেব্রুয়ারির শুরুতে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ‘হোপ’ মহাকাশযান সফলভাবে মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে প্রবেশ করে। এরপর, চীনের প্রথম মঙ্গল অনুসন্ধানযান ‘থিয়ানওয়েন ১’-ও মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে প্রবেশ করে গ্রহটিকে প্রদক্ষিণ করা শুরু করে। আগামী তিন থেকে চার মাসের মধ্যে মঙ্গল গ্রহে অবতরণের পরিকল্পনাও রয়েছে ‘থিয়ানওয়েন ১’-এর।

যদিও তিনটি দেশের মঙ্গল অনুসন্ধানযান উত্ক্ষেপনের সময় ও মঙ্গল কক্ষপথে প্রবেশের সময় প্রায় একই, আসলে তাদের অনুসন্ধান দায়িত্ব একদম ভিন্ন। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রনটিকেল ফেডারেশান স্পেস ট্রান্সপোর্টেশান কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এবং চীনের দ্বিতীয় মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের গবেষক ইয়াং ইয়ু কুয়াং এ সম্পর্কে বলেন,

 

“সংযুক্ত আরব আমিরাতের ‘হোপ’ কেবল কক্ষপথে প্রবেশ করে মঙ্গলকে প্রদক্ষিণ করেই দায়িত্ব শেষ করবে। ইতোমধ্যেই এটি সবচেয়ে কঠিন কাজটি সম্পন্ন করেছে। চীনের ‘থিয়ানওয়েন ১’ প্রথমে কক্ষপথে প্রবেশ করেছে এবং মঙ্গলকে প্রদক্ষিণ করছে।  এভাবেই মঙ্গলযানটি গ্রহটিকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করবে এবং এর ল্যান্ডারকে মঙ্গলপৃষ্ঠে অবতরণ করাবে। আর মার্কিন ‘পারসিভারেন্স’-এর মঙ্গলপৃষ্ঠে অবতরণকে সবচেয়ে কঠিন কাজ  বলে মনে করা হয়। কারণ, এই রোভার মঙ্গলপৃষ্ঠের উপর চলাফেরা করবে ও অনুসন্ধান চালাবে। মঙ্গল গ্রহের চারপাশে প্রদক্ষিণ করার দরকার নেই এর। আসলে, শক্তি সঞ্চয় করার জন্য এটি মঙ্গলের পৃষ্ঠদেশে সরাসরি অবতরণকেই বেছে নেয়।”

ইয়াং ইয়ু কুয়াং বলেন, মঙ্গল গ্রহের উপরিভাগে সরাসরি অবতরণ করলে মহাকাশযানের শক্তি সঞ্চিত থাকে। কিন্তু মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠে অবতরণের অভিজ্ঞতা নেই চীনের। তাই চীন একটি স্থিতিশীল ও নিরাপদ উপায় বেছে নিয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি অনেক কমেছে।

মার্কিন রোভারের ওজন প্রায় ১০২৫ কিলোগ্রাম এবং এর আয়তন একটি গাড়ির সমান। এটি মঙ্গল গ্রহে ওড়ার জন্য একটি ড্রোন হেলিকপ্টার নিয়ে গেছে। ‘থিয়ানওয়েন ১’-এর ওজন প্রায় ৫ টন। এটি এখন পর্যন্ত চীনের সবচেয়ে ভারী মহাকাশযান।  এর মধ্যে রয়েছে একটি অরবিটার, একটি ল্যান্ডার ও একটি রোভার। ‘থিয়ানওয়েন ১’ ১৩টি কার্যকর আইটেম বহন করে নিয়ে গেছে মঙ্গলে।

জানা গেছে, ‘পারসিভারেন্স’ রোভারের মূল লক্ষ্য মঙ্গল গ্রহে জীবনের লক্ষণ সন্ধান করা; ভবিষ্যতে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার জন্য মঙ্গলীয় শিলা ও মাটির নমুনা সংগ্রহ করা; মঙ্গল গ্রহের জলবায়ূ ও ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য তদন্ত করা; ভবিষ্যতে সেখানে মানুষ ও রোবট পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি পরীক্ষা করা, ইত্যাদি। ‘থিয়ানওয়েন ১’-এর লক্ষ্য মঙ্গলকে প্রদক্ষিণ করা, মঙ্গলে অবতরণ করা, ও মঙ্গলের মাটিতে রোভারের চলাফেরা নিশ্চিত করা।

আগেই বলেছি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ‘হোপ’ মঙ্গল গ্রহে অবতরণ করবে না। এর ওজন প্রায় ১.৫ টন। মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডল ও জলবায়ু পরিবর্তন নিরীক্ষণের জন্য ৩ সেট সরঞ্জাম বহন করে নিয়ে গেছে এটি। সুতরাং একে মঙ্গলের আবহাওয়া উপগ্রহও বলা যায়।

অজানাকে জানা ও মানুষের সীমানা প্রসারিত করা মহাকাশ মিশনের অভিন্ন লক্ষ্য। যদিও তিনটি দেশের মঙ্গল অনুসন্ধান মিশনের লক্ষ্য ও বৈশিষ্ট্য ভিন্ন, তারা সকলেই সৌরজগতের অন্বেষণে মানবজাতির যাত্রায় একসাথে ইতিহাস রচনা করছে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)