চীনের বাস্তবতা থেকে প্রমাণিত যে, মহামারীর নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনীতির পুনরুদ্ধার একইসঙ্গে সম্ভব
2021-02-03 16:02:34

 

সম্প্রতি সার্বিয়ার আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গবেষণালয়ের ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ বিভাগের প্রধান  আইভোনা লাডেভাইভাক চীন আন্তর্জাতিক বেতারকে সাক্ষাত্কার দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, চীনের অভিজ্ঞতা থেকে প্রমাণিত যে, মহামারীর নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনীতির পুনরুদ্ধার একইসময়ে বাস্তবায়িত করা সম্ভব। ‘আজকের টপিক’-এ আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করব।

১৯৭১ সালে প্রথম বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন সুইজারল্যান্ডের স্কি রিসর্ট দাভোসে অনুষ্ঠিত হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বের অবস্থা উন্নয়ন করা।  তার পর থেকে, শিল্প ও ব্যবসা, রাজনীতি, শিক্ষা ও  প্রযুক্তি মহলের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা প্রতিবছর দাভোসে জড়িত হয়ে যৌথভাবে অভিন্ন স্বার্থজড়িত গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিষয়ে মতবিনিময় করতে থাকেন।

নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে, চলতি বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ব অর্থনৈতিক ইভেন্টটি দুটি পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম পর্বটি হল অনলাইন ‘দাভোস এজেন্ডা’ সংলাপ, যা কয়েক দিন আগে অনুষ্ঠিত হয়েছে। দ্বিতীয় পর্ব আগামী ১৩ থেকে ১৬ মে পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত হবে।

কোভিড-১৯ মহামারী এখনও সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। এর সাথে হয়তো দীর্ঘকাল ধরে সহাবস্থান করতে হতে পারে মানবজাতিকে। এ বিবেচনায়, চলতি বছরের দাভোস ফোরামের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘পুনর্গঠন’। অনলাইনে অনুষ্ঠিত হলেও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ফোরামের সংলাপ নিঃসন্দেহে বিশ্বের বিভিন্ন শীর্ষনেতৃবৃন্দের মধ্যে যোগাযোগের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এক কার্যকর সমাধানের প্রস্তাব নির্ধারণ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।

চীনের অভিজ্ঞতা থেকে প্রমাণিত যে, যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে মহামারী রোধ ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার বাস্তবায়নের লক্ষ্য একই সাথে অর্জন করা যেতে পারে। নভেল করোনাভাইরাস গত বছর বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে এবং চীন বিশ্বের একমাত্র বড় অর্থনৈতিক গোষ্ঠী,  যে ইতিবাচক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। সুতরাং, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ‘দাভোস এজেন্ডা’ সংলাপে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ভাষণের গুরুত্ব আরও বেশি ছিল।

প্রেসিডেন্ট সি তাঁর ভাষণে বলেছেন, ‘বিশ্বের সমস্যাগুলো জটিল। এই প্রেক্ষাপটে সংশ্লিষ্ট সমস্যার সমাধানে আমাদের উচিত বহুপক্ষবাদ রক্ষা ও বাস্তবায়ন করা এবং মানবজাতির অভিন্ন স্বার্থ কমিউনিটি গড়ে তোলাকে এগিয়ে নেয়া।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, বহুপক্ষবাদের মূল কথা হল আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো সবার পরামর্শ অনুসারে সমাধান করার চেষ্টা করা।  বিশ্বের ভবিষ্যত ও ভাগ্য সমস্ত দেশের সঙ্গে জড়িত।

প্রেসিডেন্ট সি’র ভাষণ বৈশ্বিক মহামারীর মোকাবিলা, বৈশ্বিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধার, এবং মহামারীপরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনায় দিক্‌নির্দেশনা দিয়েছে। বিশ্বের জন্য বহুপক্ষবাদ প্রয়োজন। বহুপক্ষীয় সহযোগিতা হচ্ছে নতুন আকারের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা, টেকসই উন্নয়নকে এগিয়ে নেয়া এবং গোটা মানবজাতির কল্যাণ অর্জনের একমাত্র সঠিক উপায়।

প্রেসিডেন্ট সি বলেছেন, যে-কোনো অবস্থায় বিশেষ করে মহামারী থেকে সৃষ্ট গুরুতর সংকটের প্রেক্ষাপটে ‘ছোট বৃত্ত’ তৈরী করা ঠিক নয়। এই প্রক্রিয়ায় মতবিরোধ সৃষ্টি করা, স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং কৃত্রিমভাবে পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করা কেবল বিশ্বকে বিভাজন বা দ্বন্দ্বের দিকে ঠেলে দিতে পারে। বিশ্বে পুরোপুরি একই রকমের পাতা নেই, অর্থাত্, পুরোপুরি একই রকমের ঐতিহাসিক সংস্কৃতি ও সামাজিক ব্যবস্থাও ছিল না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উচিত একই নৌকায় নদী পার হয়ে সহযোগিতা ও সহনশীলতার মাধ্যমে মহামারী-উত্তর সময়পর্বে সংশ্লিষ্ট পুনর্গঠনকাজ জোরদার করা। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)