Web bengali.cri.cn   
হুয়াংতি ও ছিইয়ুর লড়াই
  2013-04-15 19:57:22  cri

এবার চূড়ান্ত লড়াই শুরু হলো। ছিইয়ু আর তার ৮১জন ভাই হুংকার দিয়ে হুয়াংতির বাহিনীর দিকে ছুটে আসতে থাকে। আর ঠিক এ সময়, হুয়াংতি খুইয়ের চামড়া দিয়ে বানানো দামামা বাজাতে থাকেন। আকাশ জুড়ে যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে, ঘণ আর ভারী আওয়াজে হুয়াংতির সৈন্যদের সাহস বহুগুণ বেড়ে গেল। তারা দেখলো যেন হঠাত্ ঘুম ভেঙ্গে দাঁড়ানো সিংহের মতো তাদের গাঁয়ে প্রবল শক্তিতে ভরে গেছে। এবার শুরু শেষ রক্তক্ষয়ী লড়াই আর এই লড়াইয়ে অবশেষে হুয়াংতির সৈন্যরা ছিইয়ুর ৮১জন ভাইকে হত্যা করে এবং ছিইয়ুকে বন্দি করে ফেলে। বন্দি হয়ে ছিইয়ু হুয়াংতিকে বলে, "হুয়াংতি, তুমি আমাকে ছেড়ে দাও। ভবিষ্যতে আমি কখনোই এমন কাজ আর করবো না বরং তোমাকে মেনে চলবো।"

হুয়াংতি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, "শয়তান ছিইয়ু, তুই সৈন্যদের নিয়ে বিদ্রোহ করিস। কিন্তু জনসাধারণের সুখ দুঃখের কথা একবারও চিন্তা করিস না। আমি তোকে কোনভাবেই ক্ষমা করবো না।" হুয়াংতি ছিইয়ুকে বেঁধে হত্যা করার পর তার মাথা ও শরীর দুটি জায়গায় সমাধিস্থ করেন, ছিইয়ুকে বাধাঁর দড়িগুলো পাহাড়ে ছুড়ে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে ওই পাহাড়ে প্রচুর মেইপল গাছে রূপান্তরিত হয়ে যায়। আর এইসব গাছের লাল পাতায় ছিইয়ুর রক্তের চিহ্ন দেখা যায়। এভাবে বিজয় অর্জন করে হুয়াংতি। তাঁর জাতি তখন শান্তিতে নিরবিঘ্নে বসবাস করতে থাকে।

 হুয়াংতি কেবল যোদ্ধা নয় একজন বুদ্ধিমান ও কর্মঠ মানুষও বটে। তিনি অনেক কিছু তৈরী করতে পারতেন। তিনি প্রাসাদ, গাড়ি, নৌকা ও রঙিন পোশাক তৈরী করতে পারতেন। তার স্ত্রী লেইচুও একজন গুণী মানুষ ছিলেন। প্রাচীনকালে রেশমগুটি বন্য পোকা ছিল। লোকেরা রেশমগুটির উপকার জানতেন না। লেইচু স্থানীয় অধিবাসীদের রেশমগুটি থেকে রেশমী সুতা তৈরী করা এবং কাপড় বোনা শেখাতেন। আর তখন থেকেই চীনের রেশমী কাপড়ের সভ্যতা শুরু হয়। হুয়াংতি তৈরী করেন স্থায়ী প্যাভিলিয়ন কিন্তু লেইচু তাই দেখে বৃষ্টির দিনে ব্যবহার করা ভ্রাম্যমান প্যাভিলিয়ন অর্থাত্ ছাতা আবিষ্কার করলেন।

  প্রাচীন চীনের উপকথায় হুয়াংতিকে বিশেষ শ্রোদ্ধা আর ভক্তির সাথে দেখা হতো। চীনা জাতির উত্তরসুরীরা হুয়াংতিকে চীনা জাতির পূর্বপুরুষ মনে করেন। ইয়ানতি ও হুয়াংতি আপন আত্মীয় ছিল এবং পরে তারা একত্রিত হয়েছে বলে চীনারা সাধারণত নিজেকে ইয়ান-হুয়াং এর উত্তরসুরী বলেন। এই পূর্বপুরুষের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য চীনারা হলুদ নদীর তীরে অবস্থিত শানসি প্রদেশের হুয়াংলিং জেলার উত্তরাঞ্চলের ছিও পাহাড়ে হুয়াংতির সমাধিস্থল নির্মাণ করেন। প্রতি বছরের বসস্তকালে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চীনাদের প্রতিনিধিরা হুয়াংতির সমাধিস্থলে গিয়ে চীনা জাতির এ পূর্বপুরুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। (লিপন)


1 2 3
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক