Web bengali.cri.cn   
হুয়াংতি ও ছিইয়ুর লড়াই
  2013-04-15 19:57:22  cri

ছিইয়ু তার সৈন্যবাহিনীর সম্মিলিত করে ইংলোংয়ের বাঁধের সামনে এসে লড়াইয়ের নির্দেশ দেয়। এই দেখে ইংলোং আবারও বড় ড্রাগণের রূপ নিয়ে মুষলধারে বৃষ্টি ঝরাতে শুরু করলো। কিন্তু এবারে ছিইয়ুর কথামত বৃষ্টি দেবতা তার মহাশক্তি ব্যবহার করে ইংলোংয়ের সব বৃষ্টি তুলে নিয়ে যায়, আর অন্যদিকে পবন দেবতা প্রচণ্ড ঝড় তুলে হুয়াংতির বাহিনীর দিকে ধেয়ে আসতে থাকে। হঠাত্ যেন চারদিকে অন্ধকার নেমে আসলো, প্রচন্ড ঝড় শুরু হয় চারদিকে, সাথে মূহুর্মূহু বাজ আর ভারী ভারী পাথরের ন্যায় বর্ষণ। এই অবস্থায় হুয়াংতির সৈন্যরা আর একমূহুর্তও টিকে থাকতে পারলো না। তারা যে যার মত করে রণেভঙ্গ দিয়ে পালিয়ে যেতে থাকে। এই আকস্মিক মহা সংকটে ইংলোং দ্রুতই অতিরিক্ত সাহায্যের জন্য হুয়াংতির কাছে অনুরোধ জানায়।

হুয়াংতি এবারে ছিইয়ুর সাহায্যকারী দেবতাদের নাম শুনে মনে মনে চিন্তিত হয়ে পড়ে। তবে দ্রুতই একটি উপায়ও বের করে ফেলে। তার এক মেয়ের নাম হচ্ছে বা তিনি খরার দেবতা। খরার দেবতা যে জায়গায় দিয়ে যান, সে জায়গায় বাতাস ও বৃষ্টি কিছুই থাকে না, মাটিতে গজায় না কোনো ঘাস, পুরে যায় সব গাছ, লতাপাতা যাকিছু সব। হুয়াংতি মেয়েকে শুধু বললো, এবারের লড়াই লক্ষ লক্ষ জনসাধারণের বেঁচে থাকা বা না থাকার লড়াই। তাই সে যেন অতি যত্নের সাথে এই যুদ্ধে অংশ নেয়। ছিইয়ু একজন অতি শক্তিশালী যোদ্ধা এবং এ দেশের শত্রু , তাকে অবহেলা করা যাবে না। খরার দেবতা এ সব কথা গুরুত্বের সাথে মনে রাখে।

যখন দুটি বাহিনী আবার লড়াইয়ের মাঠে নেমে আসলো, ছিইয়ু পুনরায় পবন ও বৃষ্টি দেবতার কৌশল ব্যবহার করলো। ঠিক এ সময় খরা দেবতা লড়াইয়ের মাঠে এসে মনে মনে জাদুমন্ত্র করলো। মুহুর্তের মধ্যে গোটা লড়াই মাঠে প্রবল বাতাস ও ঝড়বৃষ্টি থেমে সূর্য উঠলো। পবন দেবতা ও বৃষ্টির দেবতা এ অবস্থায় কোন উপায় না দেখে পালিয়ে গেল। ছিইয়ুও এ অবস্থা থেকে দ্রুত রেহাই পাওয়ার উপায় খুঁজতে থাকে। হঠাত্ সে মন্ত্রবাণ ছুঁড়ে দিয়ে ঘণ কুয়াশা তৈরী করে দেয় আর এই ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে হুয়াংতির সৈন্যরা দিক-নিণর্য় করতে না পেরে এক কদমও সম্মুখে অগ্রসর হতে পারলো না। এবং আবারও হুয়াংতির সৈন্যরা রণেভঙ্গ দিয়ে পালিয়ে যেতে শুরু করে।

এই অবস্থা দেখে ছিইয়ু মনে মনে হাসলো, আর ভাবলো এবার তার বিজয় সুনিশ্চিত। সে আনন্দচিত্তে সেনাশিবিরে ফিরে গিয়ে মদ্য পান করে নিজের বিজয় উত্সব উদযাপন করতে শুরু করে দেয়। এই মহা সংকটাবস্থায় হুয়াংতির মনে ভীষণ চাপের সৃষ্টি হয়। তিনি সেনা শিবিরের এদিক ওদিক হাঁটতে থাকে আর এই সংকট থেকে উত্তরনের নানা উপায় খুঁজতে থাকে। হঠাত্ তার মাথায় একটি বুদ্ধি খেলে যায়, সে ঋতু ও আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে সাথে আকাশের তারার অবস্থান বদলে দেবার কথা ভাবলো। আকাশের সাত তারকা বিশিষ্ট তারকামন্ডলী সপ্তর্ষি সবসময় উত্তর দিকে থাকে বলে হুয়াংতি একে দিকনির্নয়ের উপায় হিসেব তৈরী করে ঘণ কুয়াসার মধ্যেও সৈন্যদের যুদ্ধ চালিয়ে যাবার সহজ উপায় বের করে ফেললেন।

আনন্দে আত্মহারা হওয়া ছিইয়ু মোটেই ভাবতে পারেনি যে, হুয়াংতির বাহিনী এতো ঘন কুয়াসা থেকে সহসা বের হয়ে এসে আক্রমন করতে পারবে। আর এই খুশীতে পাল্টা-আক্রমণের কোনো রকম প্রস্তুতিও রাখেনি সে। ফলে হুয়াংতির বাহিনীর আকস্মিক তুমুল আক্রমণে ছিইয়ুর সৈন্যরা দিকভ্রান্ত হয়ে পালিয়ে যায়। এই অবস্থায় ছিইয়ু তাঁর সর্বশেষ যুদ্ধ কৌশল হিসেবে তার ৮১ জন সাহসী ভাইয়ের সুরক্ষায় ভারী ও মজবুত বর্ম তৈরী করে তার মধ্য থেকে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

ছিইয়ুর ৮১ জন ভাইয়ের প্রত্যেকের লোহার মাথা ও বাহু আছে বলে, ছুরি ও তলোয়ার তাদের গাঁয়ে কোন আঘাত হানতে পারে না। সুতরাং যত বেশি লড়াই করে, তারা তত বেশি সাহসী হয়ে উঠতে থাকে ছিইয়ু। এ অবস্থায় হুয়াংতি সৈন্যদের মনোবল পুনরায় ভেঙ্গে পড়ে আবার তারা যুদ্ধের ময়দান ত্যাগ করার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। তাই দেখে হুয়াংতি ভাবলেন, কীভাবে তার সৈন্যদের মনোবল চাঙ্গা রাখা যায়? ভাবতে ভাবতে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, বিশেষ এক যুদ্ধের দামামা বা ঢাক বাজিয়ে সৈন্যদের লড়াইয়ের মনোবল ফিরিয়ে আনা যেতে পারে।

হুয়াংতি শুনেছেন, পূর্ব সাগরে লিউবো নামে একটি পাহাড় আছে। সে পাহাড়ে এক অদ্ভূত প্রাণী আছে। এ প্রাণীর নাম খুই। খুইয়ের ডাকে বজ্রের চেয়েও গম্ভীর গর্জন হয়। হুয়াংতি একটি খুইকে ধরে আনার হুকুম দিলেন। তিনি এ খুইয়ের চামড়া দিয়ে এক বিশাল যুদ্ধের দামামা বা ঢাক তৈরি করলেন।

1 2 3
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক