

সম্মেলন শেষে প্রকাশিত যৌথ ঘোষণায় অধিকতর শিথিল ও বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করেন জোটভুক্ত অর্থনৈতিক সত্তাগুলোর আর্থিক খাতের শীর্ষ কর্মকর্তারা। মুদ্রা বিনিময় হারে অস্থিরতার কারণে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, তা স্বীকার করে ঘোষণায় অবমূল্যায়নের প্রতিযোগিতা এড়িয়ে চলার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
জোটের সদস্যরা নিজ নিজ মুদ্রার অবমূল্যায়ন থেকে বিরত থাকতে এবং সম্ভাব্য 'মুদ্রাযুদ্ধ' এড়াতে চায়- একথা উল্লেখ করে এতে বলা হয়, মুদ্রা বিনিময় হারকে প্রতিযোগিতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হবে না; বিনিময় হারকে সব ধরনের রক্ষণশীলতার হাত থেকে দূরে রেখে বাজার উন্মুক্ত রাখা হবে।
ঘোষণায় বলা হয়, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে সর্বত্রই নিম্ন হারে কর দিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে মুনাফা স্থানান্তরের প্রবণতা রয়েছে, যেটা প্রতিরোধে জি-২০ জোটের সদস্যরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রসঙ্গত, জাপানি মুদ্রা ইয়েনের বিনিময় হারের ক্রমহ্রাস আন্তর্জাতিক বাজারে বড় মুদ্রাগুলোকে সমস্যার মুখে ঠেলে দিয়েছে, যার মধ্য দিয়ে 'মুদ্রাযুদ্ধের' আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলেও অনেকের ধারণা। সুনামি-বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে চাঙা করে তুলতে জাপান তার বিনিময় হার কমানোর নীতি অবলম্বন করছে। গত ৫ মাসে অর্থাত্ সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইয়েনের বিনিময় হার ১৫ শতাংশ কমেছে।
অবশ্য মুদ্রাযুদ্ধ নিয়ে দ্বিমতও আছে অনেকের মধ্যে। উন্নত দেশগুলোর জোট অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) মহাসচিব অ্যাঞ্জেল গরিয়া জি-২০ অর্থমন্ত্রীদের সম্মেলনের প্রথম দিন মুদ্রাযুদ্ধকে মেয়াদোত্তীর্ণ বিষয় বলে বাতিল করে দেন। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্দে বলেন, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ায় ভারসাম্যহীনতা থাকলেও বিভিন্ন মুদ্রার বিনিময় হার যথাযথভাবেই মূল্যায়িত রয়েছে।
দু'দিনের সম্মেলনে করপোরেট সত্তাগুলোর কম কর দেওয়ার বা কর ফাঁকির প্রবণতা নিয়ে জোরালো আলোচনা হয়। এমন কর ফাঁকি এড়াতে নতুন বৈশ্বিক কর আইন করার আহবান জানান যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী জর্জ ওসবোর্ন। তাঁর আহ্বানে সাড়া দেন ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী পিয়ারি মসকোভিচি এবং জার্মানির অর্থমন্ত্রী ভুল্ফগ্যাং সিয়্যুবলে। সম্মেলনে দাবি করা হয়, বিশ্বে বর্তমানে যে কর আইন রয়েছে তা এক শতকের পুরনো, যা দিয়ে বর্তমান অর্থনীতির হিসাব-নিকাশ করা সম্ভব নয়।
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সের ও জার্মানির অর্থমন্ত্রীরা একমত হয়ে বলেন, যেসব কোম্পানি কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য মুনাফা নিজের দেশ থেকে অন্যদেশে স্থানান্তর করে, তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এসেছে। এ জন্য একটি বৈশ্বিক কর ব্যবস্থা প্রণয়নের আহবান জানান ওসবোর্ন। তিনি বলেন, জাতিসংঘের পূর্বসূরি প্রতিষ্ঠান ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত লিগ অব নেশনসে যে মূলনীতি রয়েছে তা থেকে কিছুটা পরিবর্তন এনে এ আইন করা দরকার। তিনি বলেন, "আমরা চাই ব্যবসায়ীরা লাভ করবেন এবং আইন অনুযায়ী নিজ দেশে কর দেবেন। কিন্তু এ কাজটি কোনো দেশের পক্ষে একাকী আদায় করে নেওয়া সম্ভব নয়।" আর মসকোভিচি বলেন, যারা কর ফাঁকি দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উপায়ে লড়াই চালাতে হবে।
ওইসিডির এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিভিন্ন দেশে কর আইনের ফাঁক-ফোকর কাজে লাগিয়ে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এ থেকে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করে। বিভিন্ন দেশের কর আইনে সামঞ্জস্য না থাকায় অনেক কোম্পানি বার্ষিক মুনাফাকে করের আওতা থেকে রক্ষা করতে পারে। এতে সরকারগুলো বিশাল অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী যে ই-বাণিজ্য হচ্ছে এখন তার হিসাব কর-আইনে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
জি-টোয়েন্টির সদস্যরা হলো আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। (সূত্র: সিনহুয়া, বিবিসি)(এসআর)

| ||||



