কাওখাও পরীক্ষাশেষে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা প্রসঙ্গ
2022-07-18 16:48:39

জুন মাসের শুরুতে সারা চীনে উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা ‘কাওখাও’ আয়োজিত হয় এবং জুন মাসের শেষ দিকে বিভিন্ন প্রদেশের পরীক্ষার ফলাফলও প্রকাশিত হয়। এখন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে শিক্ষার্থীদের ভর্তির নিবন্ধনকাজ শুরু হয়েছে। যারা কাওখাও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে, তারা সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষাজীবন শুরু হবে। যারা কাওখাও পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে, তাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি বিভিন্ন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হবার পর তাদেরকে আবার চাকরির জন্য চেষ্টা করতে হবে। তাই, নতুন শিক্ষাজীবনের পরিকল্পনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে, সারা বিশ্বের অর্থনীতি মহামারীর কারণে অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। চীনের অর্থনীতির উন্নয়নের গতিও কিছুটা ধীর হয়েছে এবং  কর্মসংস্থানের সুযোগ হ্রাস পেয়েছে। তাই, শিক্ষার্থীদের সামনে চ্যালেঞ্জ বেড়েছে। তাদের কেউ কেউ নতুন দক্ষতা অর্জনে সচেষ্ট হবে বলে আশা করা যায়।

    কাওখাও পরীক্ষার পর প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা তালিকা তৈরি করতে হয় প্রতিজন শিক্ষার্থীকে। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন মেজরে পড়াশোনা করবে—এ সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত কর্মসংস্থানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে, উচ্চবিদ্যালয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের ট্রেনিং দেওয়া হয় না। তাই কাওখাও পরীক্ষার পর শিক্ষার্থীদের প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নামতালিকা রচনা নিয়ে পিতামাতারা অনেক উদ্বিগ্ন ও বিরক্ত থাকেন। এখন অবশ্য শিক্ষার্থীদের ও তাদের পিতামাতার উদ্বেগ দূর করেছে কিছু বেসরকারি কোম্পানি। এসব কোম্পানি নির্দিষ্ট ফি-র বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্ট তালিকা করতে সাহায্য করে। তবে বিভিন্ন পরিবারের অবস্থা আর শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত চরিত্র ভিন্ন। তাই এমন পরামর্শ সবার জন্য উপযোগী না-ও হতে পারে।

তা ছাড়া, উচ্চবিদ্যালয়ের সময় শিক্ষার্থীদের মূল কাজ বিভিন্ন মেজরসংশ্লিষ্ট বই পড়া এবং বছরশেষে পরীক্ষা দেওয়া। সেটি সাধারণভাবে জ্ঞান অর্জনের প্রচেষ্টা। আর বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ পেশাগত দক্ষতা ও বহুমুখী জ্ঞান অর্জনের জায়গা। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার চিন্তাভাবনা ও পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন ঘটাই স্বাভাবিক।

    বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পেশাগত দক্ষতা ও বহুমুখী জ্ঞান অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাই পেশাগত দক্ষতা অর্জনের আগ্রহ, স্বাধীন চিন্তাভাবনা করার মানসিকতা, ও সৃষ্টিশীলতা থাকা প্রতিজন শিক্ষার্থীর জন্য জরুরি। উচ্চ বিদ্যালয়ের সময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে ভালো গ্রেড পেতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা একই পদ্ধতিতে চলে না। এখানে শিক্ষার্থীদের স্বাধীনভাবে গবেষণা ও চিন্তা করতে হয়। যদি স্বাধীনভাবে চিন্তা করার দক্ষতা কম থাকে, তাহলে মাস্টার্স পর্যায়ের পড়াশোনা এবং বিজ্ঞান-গবেষণার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর ভালো করার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।

    কাওখাও পরীক্ষা জুন মাসে শেষ হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন সেমিস্টার সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হবে। তাই স্নাতক শিক্ষার্থীদের জন্য এ গ্রীষ্মকালীন ছুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য নিজেদের পরিকল্পনা প্রণয়নের খুব ভালো সময়। চীনের গণমাধ্যমের এক জরিপ থেকে জানা গেছে, যারা কাওখাও পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে, তাদের মধ্যে ৬৭.৭ শতাংশ নিজেদের  বেছে নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেজরের ভবিষ্যত এবং ভবিষ্যতে তাদের কর্মসংস্থানের অবস্থা সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখে না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষার্থী হওয়ার আগে এবং নতুন সেমিস্টারের আগে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা নিয়ে হোমওয়ার্ক করা জরুরি। এক কোটিরও বেশি নতুন শিক্ষার্থী যদি নিজেদের প্রাধান্য ও আগ্রহ অনুসারে উপযোগী মেজর ও বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নেয়, তাহলে সমাজের উন্নয়নে তারা ভবিষ্যতে ইতিবাচক ও দীর্ঘমেয়াদী অবদান রাখতে পারবে।

    গত কয়েক বছরেই উচ্চবিদ্যালয়ের স্নাতক শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার চাহিদা বিবেচনা করে, বিভিন্ন অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম, শিক্ষার্থীদের প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা রচনা ও ভর্তির আবেদনপত্র জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে  সংশ্লিষ্ট পরামর্শ দিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে প্লাটফর্মগুলো শিক্ষার্থীদের নিজেদের বৈশিষ্ট্য ও পরীক্ষার ফলাফল বিবেচনা করে পরামর্শ দিয়ে থাকে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বিভাগ, কর্মসংস্থানের পরামর্শ বিভাগ, এবং ভবিষ্যতে পেশাগত উন্নয়নের প্রবণতা সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে থাকে।

    আজকাল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ও নতুন শিক্ষার্থীদের ভর্তির সময় একটি ‘প্যাকেজ সেবা’ দিয়ে থাকে। এই প্যাকেজে ভর্তির বিজ্ঞাপ্তি, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়, ও স্যুভেনির থাকে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নতুন শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন মেজর সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে পারে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন মেজরের অধ্যাপকদের ভিডিও লেকচারও দেখা যায়। এতে হবু শিক্ষার্থীরা উপকৃত হতে পারে।

    ডিজিটাল শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষার ব্যাপক উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃষ্ট গ্যাপ পূরণ করা অনেক জরুরি। পাশাপাশি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে বিদ্যমান গ্যাপ পূরণ করাও এখন সময়ের দাবি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মানের মধ্যে গ্যাপ যত কমে আসবে, বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করার কাজটা শিক্ষার্থীদের জন্য তত সহজ হবে।  

 

হংকংয়ের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ লি ওয়ান রংয়ের গল্প

২৫ বছর বয়সী শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ লি ওয়ান রং হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের চীনের অধীনে ফিরে আসার ২৫তম বার্ষিকীতে আনুষ্ঠানিকভাবে একজন ডাক্তারে পরিণত হয়েছেন। হংকংবাসী হিসেবে সেটি তাঁর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। ১৯৯৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মেয়ে লি ওয়ান রং হংকংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। একই বছরের পয়লা জুলাই হংকং আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের অধীনে ফিরে আসে। নিজের বড় হওয়ার অভিজ্ঞতা এবং হংকংয়ের গত ২৫ বছরের পরিবর্তনের স্বাক্ষী হিসেবে মেয়ে লি বলেন, হংকংকে কোভিড-১৯ ও সার্স রোগসহ বিভিন্ন কঠিন সময়ের সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে বিভিন্ন সমস্যায় মাতৃভূমি সবসময় হংকংয়ের পাশে দাঁড়িয়েছে। সবাই হাতে হাত মিলিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে।

মেয়ে লি ওয়ান রংয়ের মা একজন নার্স এবং বাবাও হাসপাতালে চাকরি করেন। ২০০২ সালে যখন সার্স রোগ ছড়িয়ে পড়ে, তখন তারা প্রতিদিন হাসপাতালে দিন-রাত ধরে কাজ করে যান। সেই সময় লি’র বয়স মাত্র ৫ বছর। কন্যার দেখা-শোনা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন ছিলেন। তবে নার্স ও কর্মী হিসেবে তারা মনোযোগ দিয়ে হাসপাতালে কাজ করে গেছেন। সেটি মেয়ে লি’র জন্য গভীর স্মৃতি। তাই ছোটবেলা থেকে তিনি একজন চিকিত্সক হওয়ার জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেন।

টানা ৬ বছর পড়াশোনার পর তিনি হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিত্সা বিভাগ থেকে স্নাতক হন এবং ইন্টার্নশিপ শেষ করে পয়লা জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে একজন ডাক্তারে পরিণত হন।

শিশুরোগ বিভাগের ডাক্তার হিসেবে তাঁর দায়িত্ব অনেক বেশি। শিশুদের চিকিত্সায় ভালো করলে তিনি ভবিষ্যতে তাঁর জীবনকে আরও সুন্দর করতে পারবেন। এ কাজ লি’র জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ।

ইন্টার্নশিপ ডাক্তার হিসেবে মেয়ে লি অনেক ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। কখনও কখনও তাকে হাসপাতালে টানা ৩৬ ঘন্টা কাজ করতে হয়েছে। তাঁর বাসা হাসপাতাল থেকে অনেক দূরে। তাই হাসপাতালের কাছাকাছি একটি আপার্টমেন্ট ভাড়া করেন তিনি। এ সম্পর্কে লি বলেন, “আমার আপার্টমেন্টের কাছে একটি চত্বর আছে। সেখানে মূল ভূভাগের অনেক যুবক-যুবতীর সঙ্গে দেখা হয়। তারা সেখানে মতবিনিময় করে এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করে।” কম বয়স থেকেই মেয়ে লি ওয়াং রং স্বেচ্ছাসেবক কর্মী হিসেবে কাজ করে আসছেন। এমন কাজে অন্যদের সাহায্য করা যায়। পাশাপাশি অনেক অপরিচিত লোকের সঙ্গে পরিচয়ও ঘটে। তাদের জীবনের গল্প শুনতে বেশ আগ্রহী তিনি। লি’র দৃষ্টিতে ভিন্ন লোকদের ভিন্ন জীবনযাপনের অভিজ্ঞতা জানলে অনেক দার্শনিক তত্ত্ব বোঝা যাবে। পরে তিনি হংকংয়ের স্বেচ্ছাসেবক কর্মীদের উদ্যোক্তা হিসেবে হংকংয়ের যুবক-যুবতীদের নিয়ে কুয়াংতুং, কুয়াংসি, আনহুই এবং বেইজিংসহ কয়েকটি শহরে বেড়াতে যান এবং মূল ভূভাগের পাহাড়াঞ্চলের দূরবর্তী এলাকার স্কুলে স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন।

মূল ভূভাগ সম্পর্কে মেয়ে লি বলে, বহুবার তিনি হংকং থেকে বেইজিংয়ে বেড়াতে এসেছেন। বেইজিংয়ের রাজপ্রাসাদ তাঁর অনেক প্রিয় জায়গা। তা ছাড়া, হান রাজবংশের ঐতিহ্যিক কাপড়চোপড় পরতেও তিনি পছন্দ করেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, মোবাইলে বিভিন্ন ছবি দেখে অনেক স্মরণীয় মুহূর্ত স্মরণ করা যায়। চীনের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি নতুন প্রজন্মের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন।

তা ছাড়া, মহামারী পরিস্থিতির উন্নয়নের ফলে তিনি কুয়াংতুং, চুহাই এবং শেনচেনসহ বিভিন্ন এলাকায় নিজের কাজ করতে চান। যেমন, চীনা ভেষজ ওষুধের সাথে জড়িত পণ্যদ্রব্য নিয়ে গবেষণা করা তার স্বপ্ন।

৫ বছর আগে যখন হংকংয়ের চীনের অধীনে ফিরে আসার ২০তম বার্ষিকীতে তিনি হংকংয়ের যুবদূত হিসেবে কাজ করেছেন। চলতি বছর ২৫তম বার্ষিকীতে তিনি আবার পেশাগত উন্নয়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। একজন ভালো শিশুরোগ  চিকিত্সক হিসেবে পেশাগত অভিজ্ঞতা অর্জনের সাথে সাথে চিকিত্সা শিল্পের উন্নয়নে নিজের অবদানও রাখতে চান তিনি।

কেন এতো ব্যস্ততার মধ্যেও অতিরিক্ত কাজ করতে চান? এ সম্পর্কে মেয়ে লি ওয়ান রং বলেন, “হংকং আমার জন্মস্থান, আমরা এ জন্মস্থানের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য অবদান রাখতে চাই এবং সুন্দর ও চমত্কার জীবন কাটতে চাই।”

 (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)