1124yinyue.mp3
|
দু ছোংয়ের 'এশিয়ার প্রথম প্যানপাইনপস রাজকুমার' হিসেবে সুনাম রয়েছে। তিনি চীনে 'ফুঁ দিয়ে বাজানো বাদ্যযন্ত্র' জগতের একজন অত্যন্ত বিখ্যাত বাদক। তিনি প্যানপাইপস, গুচাং, বাঁকা বাঁশি, পাউ, হুলুসি, হাড়ের বাঁশি, লম্বা বাঁশি, ছিপাসহ প্রায় বিশ ধরণের বাদ্যযন্ত্র অত্যন্ত দক্ষতার সাথে বাজাতে পারেন।
দু ছোং
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানে এই গুণি শিল্পীর বাজানো বেশ কিছু মধুময় সুর নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। অনুষ্ঠানের শুরুতেই শুনুন দু ছোংয়ের হুলুসি দিয়ে বাজানো 'বিয়ের প্রতিশ্রুতি' নামের একটি শ্রুতিমধুর সুর। এ সুরটি ১৯৫৭ সালে ছাংছুন চলচ্চিত্র কোম্পানির 'লুশেংয়ের প্রেমের গান'নামের চলচ্চিত্রের একটি সুর। চীনের বিখ্যাত চলচ্চিত্র সুরকার লেই চেন পাং এ সুর তৈরি করেছেন।
প্রিয় শ্রোতা, দু ছোং সুরকার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দশ বছর বয়সেই তিনি বাঁশি বাজানো শেখেন। বড় হয়ে তিনি শাংহাই সংগীত ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। তিনি চীনের বাঁশির রাজা লু ছুন লিংয়ের কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতম হওয়ার পর তিনি শাংহাই জাতীয় অর্কেস্ট্রায় যোগ দেন। ওই বছর তিনি শাংহাইয়ের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ফুঁ দিয়ে বাজানো বাদ্যযন্ত্র প্রতিযোগিতায় প্রথম শ্রেণীর পুরস্কার পান। এ সময় দুটি বাঁশির সুরের সিডি রেকর্ড করেন তিনি।
বন্ধুরা, এবার শুনুন দু ছোং সিয়াও দিয়ে বাজানো 'সুন্দর সুবর্ণ ময়ূর' নামের একটি মিষ্টি সুর।
১৯৯১ সালে শাংহাই নৃত্যগীতি দলের একক বাদক দু ছোং চীনের প্রথম প্যানপাইপস সিডি রেকর্ড করেন। সিডির নাম 'ধ্যান'। এর পর তিনি পর পর 'উঁচু পাহাড় ও ঝর্ণাধারা', 'শরত্কালের স্বপ্ন' সহ দশ বারোটি প্যানপাইপসের সিডি রেকর্ড করেন। তিনি 'বসন্ত ও শরত্', 'সমুদ্রে স্বপ্নের সন্ধান' সহ বেশ কিছু চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নাটকের জন্য সুর বাজিয়েছেন।
এবার শুনুন দু ছোংয়ের বাজানো 'ধ্যান' নামের সুরটি।
শ্রোতাবন্ধুরা, 'জেসমিন ফুল' নামের গানটি হচ্ছে চীনের লোকসংগীতের প্রতিনিধিত্বকারী একটি অসাধারণ কাজ। এ গান হংকং চীনের কাছে হস্তান্তরের অনুষ্ঠান, এথেন্স অলিম্পিক গেমসের সমাপনি অনুষ্ঠান, পেইচিং অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, নানচিং যুব অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে এ সুর বাজানো হয়েছে।
এ সুরটি বিশ্বে ব্যাপক প্রচলিত একটি চীনা লোকসংগীতে পরিণত হয়েছে। এর বিশেষ মর্যাদার কারণে এ সুরকে 'চীনের দ্বিতীয় জাতীয় সংগীত' বলা হয়। এবার শুনুন দু ছোং প্যানপাইপস দিয়ে বাজানো 'জেসমিন ফুল' নামের এই সুরটি।
বন্ধুরা, বাদ্যযন্ত্র বাজানোর চমত্কার শৈলী আছে বলে দু ছোং প্রায়শই আমন্ত্রণ পেয়ে বিশ্বের নানা দেশে সফরে যান। তিনি তাইওয়ানে তিনবার একক সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। দেশি-বিদেশি ডিস্ক কোম্পানি তার ৩০টির বেশি সিডি প্রকাশ করেছে। 'চীনের তৃতীয় স্বর্ণ ডিস্ক পুরস্কার' পেয়েছেন তিনি।
এবার শুনুন বাঁশি দিয়ে দু ছোংয়ের বাজানো 'গভীর শরত্কালের প্রেম' নামের মনোরম একটি সুর।
শ্রোতা, একবার দু ছোং একটি ছোট জেলায় গিয়ে অনুষ্ঠান পরিবেশনা করেন। সেখানকার ক্ষুদ্র বাদক দলে শিল্পীর সংখ্যা খুব কম ছিলো। অনুষ্ঠানটি আকর্ষণীয় করার জন্য তিনি এক হাত দিয়ে বাঁশি বাজানোর উপায় আবিষ্কার করেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'বাদক দলের অনুষ্ঠান কম বলে আমি একটি উপায় বের করেছি। আমি এক হাত দিয়ে ইলেক্ট্রনিক কিবোর্ড বাজাই। আরেক হাত দিয়ে বাঁশি বাজাই।'
প্রিয় শ্রোতা, এবার শুনুন দু ছোংয়য়ের হুলুসি দিয়ে বাজানো 'কোমল ফুল' নামের একটি কোমল সুর। আশা করছি সুরটি আপনাদের ভালো লাগবে।
১৯৯৬ সালে দু ছোং প্রথমবার পেইচিংয়ে সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সংগীতানুষ্ঠানের এক সপ্তাহ আগে তিনি এক বড় সমস্যার সম্মুখীন হন। তার অনুরোধে অন্য সুরকাররা এ অনুষ্ঠানের জন্য তিনটি সুর সৃষ্টি করেন। কিন্তু এ সুরগুলো এ অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা যাবে না। এতো অল্প সময়ের মধ্যে কীভাবে সমস্যা সমাধান করা যায়? অবশেষে তিনি বুদ্ধি করেন সংগীতানুষ্ঠানের শুরুতেই নিজের সৃষ্টি করা কাঁচের বোতল দিয়ে সুর বাজাবেন। দর্শকরা চমত্কার এ সুর শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তুমুল করতালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে সারা অডিটোরিয়াম।
দু ছোংয়ের একটি বিশেষ গুণ আছে। যে কোন বাদ্যযন্ত্রে কোনো গর্ত থাকলে তিনি তা কিছুক্ষণ হাতে নিয়েই বাজাতে পারেন। চীনের বাদ্যযন্ত্র ছাড়া, তিনি পেরুর প্যানপাইপস, ভারতের বাঁশি, থাইল্যান্ডের বাঁশ দিয়ে তৈরি বাদ্যযন্ত্র, মেক্সিকোর মাটি দিয়ে তৈরি বাদ্যযন্ত্র, ইউরোপের বাঁশি দিয়ে অনেক সুর বাজাতে পারেন।
বন্ধুরা, অনুষ্ঠানের শেষে শুনুন তার বাজানো 'পশুপালকের নতুন গান' নামের একটি চমত্কার সুর। নিশ্চয় আপনারা এ সুরটি উপভোগ করবেন।
শ্রোতাবন্ধুরা, এতোক্ষণ আপনারা চীনের বিখ্যাত প্যানপাইপস বাদক দু ছোংয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচয় এবং তার বাজানো কয়েকটি চমত্কার সুর শুনলেন। আশা করছি সুরগুলো আপনাদের ভালো লেগেছে।
এ পর্বের 'সুরের ধারায়' আসর এ পর্যন্তই। ভালো থাকুন সবাই। আজ বিদায় নিচ্ছি। আবার কথা হবে। (ইয়ু/মান্না)
| ||||