Web bengali.cri.cn   
চীনের 'আরহু রাণী' মিন হুই ফেনের আরহু বাদ্যযন্ত্রের সুর
  2015-10-13 20:29:04  cri


প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনছেন। আমি --- পেইচিং থেকে আপনাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আজকের সুরের ধারায় আসরে আপনাদের চীনের বিখ্যাত আরহুবাদক মিন হুই ফেন ও তার বাজানো জনপ্রিয় সুরগুলো তুলে ধরব।

মিন হুই ফেন

বন্ধুরা, এ সুরটি নিশ্চয়ই আপনাদের পরিচিত মনে হচ্ছে, তাই না? হ্যাঁ, এটা চীনা সুর নয়। এটি হলো ভারতীয় চলচ্চিত্র আওয়ারা এর একটি গানের সুর। 'আওয়ারা' চলচ্চিত্রটি ১৯৫৩ সালে কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব পুরস্কার পায়। গত শতাব্দীর ৭০'র দশকে এ চলচ্চিত্রটি চীনে আসে এবং চীনা দর্শকদের কাছে অনেক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। 'রাজের গান' অনেক চীনাদের কাছে সুপরিচিত ছিল। আমি প্রথম বার চীনের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র আরহু দিয়ে বাজানো এ সুরটি শুনলাম। বেশ ভালো লেগেছে। বন্ধুরা আপনারাও শুনুন সুরটি।

বন্ধুরা, এতক্ষণ আপনারা চীনের বিখ্যাত আরহুবাদক মিন হুই ফেনের বাজানো ভারতীয় চলচ্চিত্র 'আওয়ারা'-এর 'রাজের গান' নামের সুরটি শুনলেন।

মিন হুই ফেনকে চীনের 'আরহু রাণী' বলা হয়। জাপানের বিখ্যাত সংগীত পরিচালক ওজাওয়া সেজি  তার বাজানো সুর শুনে এতটাই মুগ্ধ হন যে, সে সুরের আবেগের ছোঁয়ায় উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করেছিলেন। বোস্টন সিমফিনি অর্কেস্ট্রার এক নিবন্ধে তাকে 'বিশ্বের সবচেয়ে মহান তন্ত্রী বাদ্যযন্ত্রের বাদকের অন্যতম' বলে প্রশংসা করা হয়েছে। তিনি হলেন চীনের জাতীয় সংগীত মহলের একজন কিংবদন্তী ব্যক্তিত্ব। ২০১৪ সালের ১২ মে মাসে রোগাক্রান্ত হয়ে তিনি শাংহাইয়ে মারা যান। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।

এখন শুনুন মিন হুই ফেনের বাজানো আরহু সু 'ইয়াং কুয়ান সান ডিয়া'।

মিন হুই ফেন চিয়াংসু  প্রদেশের ই শিংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছোট বেলায় বাবার কাছে আরহু বাজানো শেখেন। ১৯৬৩ সালের মে মাসে তিনি চতুর্থ 'শাংহাইয়ের বসন্তকাল' শীর্ষক চীনের জাতীয় আরহু প্রতিযোগিতায় 'প্রথম শ্রেণী'র পুরস্কার পান। ১৯৬৮ সালে তিনি শাংহাইয়ের সংগীত ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক হওয়ার পর শাংহাই জাতীয় অর্কেস্ট্রার আরহুবাদক দলে যোগ দেন। তিনি প্রায়শই বিদেশে গিয়ে আরহু পরিবেশন করতেন এবং এতে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন।

এবার শুনুন মিন হুই ফেনের প্রতিনিধিত্বকারী সৃষ্টিকর্ম 'নতুন বিয়ের পর বিদায়'। চীনের থাং রাজবংশের বিখ্যাত কবি দু ফু  একই নামে এক কবিতা লিখেছেন। ১৯৮০ সালে সুরকার চাং সিয়াও ফাং ও চু সিয়াং গু এ কবিতার ওপর ভিত্তি করে আরহু দিয়ে সুর সৃষ্টি করেন। সে সুর শুনে যুদ্ধের সময় নতুন দম্পতির একে অপরের কাছে বিদায় নেওয়ার কষ্টকর দৃশ্যটি ভেসে ওঠে। বন্ধুরা, বুঝতেই পারছেন, এটি একটি করুণ সুর।

মিন হুই ফেনের সংগীত জীবনের কথা উল্লেখ্য করলে চীনের সাবেক চেয়ারম্যান মাও সে তোংয়ের গল্প বলতে হয়। ১৯৭৫ সাল; চেয়ারম্যান মাওয়ের তখন বয়স হয়েছে; তার চোখের অবস্থাও তেমন ভালো নয়। তবে তিনি তখনও পিকিং অপেরা খুব পছন্দ করতেন। তখন চেয়ারম্যান মাওয়ের সহকর্মীরা ঠিক করলেন, আরহু দিয়ে পিকিং অপেরার সুর বাজিয়ে তাকে শোনাবেন, যেনো তার শখ পূরণ করা যায়। তখন তারা মিন হুই ফেনকে অনুরোধ করেন। কিন্তু আরহু দিয়ে পিকিং অপেরার সুর ফুটিয়ে তোলা এত সহজ কাজ নয়। মিন হুই ফেন এজন্য পিকিং অপেরার মাস্টার লি মু লিয়াংকে শিক্ষক হিসেবে গ্রহণ করেন এবং তখন থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে দশ বারো ঘণ্টা করে চর্চা ও রেকর্ডিং করতেন। চেয়ারম্যান মাও মিন হুই ফেনের বাজানো 'সিয়াও ইয়াও চিন', 'রাজার পোশাক কাটা', 'লিয়ান ইং চান' ইত্যাদি সুর খুবই পছন্দ করতেন।

বন্ধুরা, অনুষ্ঠানের একদম শেষে শুনুন মিন হুই ফেনের বাজানো সেই পিকিং অপেরার সুর 'সিয়াও ইয়াও চিন'।

প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, এতক্ষণ আপনারা চীনের বিখ্যাত আরহুবাদক মিন হুই ফেনের বাজানো কয়েকটি সুর শুনলেন। চীনের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র দিয়ে বাজানো এ সুরগুলো আপনাদের পরিচিত না হলেও এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আপনারা চীনা সংগীতের কিছু ধারণা পাবেন বলে আমার প্রত্যাশা।

বন্ধুরা, ভালো থাকুন সবাই। আবার কথা হবে। (ইয়ু/তৌহিদ)

মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040