0831yinyue.mp3
|
১৯৩১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জাপানচীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের তিনটি প্রদেশে আগ্রাসন চালায়। এ ঘটনায় চীনাদের মনে তীব্র ক্ষোভ জেগে ওঠে । তখন মাত্র ২৭ বছর বয়সী সুরকার হুয়াং চি জাপানের আগ্রাসন-বিরোধী প্রথম গানের সুর করেন। গানের কথা লিখেছেন ওয়েই হান চাং। গানের নাম 'শত্রুদের প্রতিরোধ'। ১৯৩১ সালের ৯ নভেম্বর জাতীয় সংগীত কলেজের শিক্ষার্থীরা শাংহাই বেতারে প্রথম এ গান পরিবেশন করেন। এরপর বিজয় কোম্পানি এ গানের ডিস্ক তৈরি করে। এটা হচ্ছে চীনের প্রথম জাপানের আগ্রাসন-বিরোধী দেশাত্মবোধক গান।
এ গানে যথাযথভাবে তত্কালীন চীনাদের জাপানের আগ্রাসন-বিরোধী দেশপ্রেমের আবেগ প্রকাশিত হয়েছে এবং প্রাণ দিয়ে দেশ রক্ষার দৃঢ়প্রতিজ্ঞার কথা বলা হয়েছে। গানের কথা এমন, "সুন্দর চীনের মালিক কে? আমাদের চল্লিশ কোটি স্বদেশবাসী। আগ্রাসনকারী এসেছে, আমরা একসাথে প্রতিরোধ করি। বাসা ধ্বংস হতে পারে, দেশকে রক্ষা করতে হবে। প্রাণ হারাতে পারে, মর্মতেজ মরতে পারে না। শত্রুদের সঙ্গে চূড়ান্তভাবে লড়াই করবো।"
১৯৩৭ সালের ৭ জুলাই চীনাদের জাপানের আগ্রাসন-বিরোধী যুদ্ধ সার্বিক ও আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। এ দিনটির কথা সব চীনাদের মনে আছে। চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের শিল্পীরা জাপানের আগ্রাসন-বিরোধী বিষয়ক গান রচনা করেন। 'জাপানের আগ্রাসন-বিরোধী সৈন্য যুদ্ধক্ষেত্রে যান' নামে গান হচ্ছে এসব গানের মধ্যে একটি। গানে বলা হয়েছে, "সারা দেশের সৈন্যরা রওনা হয়েছে। এ বাহিনী কোথা থেকে এসেছে? তারা উত্তর-পশ্চিম চীনের শেনপেই থেকে এসেছে।সেনাবাহিনী ও জনসাধারণ এক মন নিয়ে দেশ রক্ষা করে। এ প্রস্তাব সারা দেশে সাড়া পেয়েছে। লাল পতাকার নিচে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের নেতা মাও ছে তোং, চৌ আন লাই ও চু দে। তাদের নেতৃত্বে সবচেয়ে সাহসী বাহিনী শত্রুদের সঙ্গে সংগ্রাম করে। শ্রমিক ও কৃষক মুক্তি চায়। চীনের বিপ্লব সফল হবে।"
জাপানের আগ্রাসন-বিরোধী যুদ্ধের সময় চীনের শিশু, ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, বুদ্ধিজীবী, বৃদ্ধ, কেউ পিছিয়ে যায় নি। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রেখেছে এবং সাহসের সাথে সংগ্রাম করেছে। সুরকার সিয়ান শিং হাই এ সময় শিশুদের জন্য একটি বিপ্লবী গান লিখেছেন। গানের নাম 'কেবল প্রতিরোধ করতে ভয় না করে'। গানটিতে শিশু দলের সদস্যদের শত্রুদের ভয় না করে সাহসের সাথে লড়াই করার প্রশংসা করা হয়েছে।
গানে বলা হয়েছে, "ছোট লাউডস্পিকার বাজায়। ছোট ব্রোঞ্জ ঢাক বাজায়। ছোট ছুরি ও বন্দুক নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রেগিয়ে শত্রুদের সঙ্গে লড়াই করে। বয়স কম হলে ভয় নেই। কেবল প্রতিরোধ করতে ভয় না করে।"
'১৮ সেপ্টেম্বর জাপানচীনেরউত্তর-পূর্বাঞ্চলেরতিনটিপ্রদেশে আগ্রাসন চালানোর পরজাপানের হাত থেকে দেশকে উদ্ধার করার উত্তাল জোয়ার জেগে উঠে চীনাদের মধ্যে। ১৯৩৫ সালে লেখক সু শিং চি ও সুরকার নিয়েআর 'নির্যাতিত গায়িকা' নামে গান রচনা করেন। এ গানটি 'ঝড় বাতাসের মধ্যে ছেলেমেয়ে' নামের চলচ্চিত্রের গান। চীনের বিখ্যাত চলচ্চিত্রশিল্পী থিয়ান হান, সিয়া ইয়ান ও সুয়ে চি শিং এ চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক। এ চলচ্চিত্রের প্রতিপাদ্য হচ্ছে 'জাপানের আগ্রাসন প্রতিরোধ ও দেশকে উদ্ধার করা'। সুরকার নিয়েআর গভীরভাবে মজুর-শ্রেণির আবেগ নিয়ে তত্কালীন সমাজের নিম্ন পর্যায়ের গায়িকাদের জন্য গানটি অভিযোজিত করেন। তিনি এ সুর দিয়ে গায়িকার দেশপ্রেম প্রকাশ করেন। গানটিতে সাফল্যের সঙ্গে বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকের সাম্রাজ্যবাদ, সামন্ততন্ত্র ও আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদের নির্যাতনের শিকার চীনা নারীদের ভাবমূর্তি বর্ণিত হয়েছে। গানে নিখুঁতভাবে নিম্ন পর্যায়ের নারীদের মনের চিত্কার বলা হয়েছে। গানটিকে চীনের আধুনিক সংগীত ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ আবেগ-ভরা সংগীত বলা হয়। গানে বলা হয়েছে, "দেশ ধ্বংস হতে যাচ্ছে, কে গায়িকা হতে চায়? কিন্তু ক্ষুধা ও শীতে বাধ্য হয়ে আমরা নানা জায়গায় গিয়ে নাচ গান করি। আমরা মানুষের জীবনের নানা স্বাদ গ্রহণ করেছি। কে ইচ্ছা করে দাস হতে চায়? কে মাতৃভূমি হারানো দেখতে চায়? নির্যাতিত গায়িকা কী হতভাগ্য।"
চিয়া লিং চিয়াং নদী হচ্ছে ছাংচিয়াং নদীর উচ্চ অববাহিকার একটি শাখা। এ নদীটি শেনশি প্রদেশের ফাং জেলার চিয়া লিং গু পার হওয়ায় চিয়া লিং চিয়াং নদীর নামকরণ হয়। ১৯৩৯ সালে লেখক তুন মু হোং লিয়াং ছোংছিংয়ে'চিয়া লিং চিয়াং নদীতে' নামে এক কবিতা লেখেন। সুরকার হো লিই ডিং এ কবিতাকে সুর দেওয়ার পর তা এক জনপ্রিয় জাপানের আগ্রাসন-বিরোধী গানে পরিণত হয়। গানটিতে লেখকের হারানো জন্মভূমিকে মিস করা, হারানো মাটি উদ্ধার করার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা প্রতিফলিত হয়েছে। এ গান শুনে উত্সাহিতহয়ে অসংখ্য যুবক জাপানের আগ্রাসন-বিরোধী যুদ্ধের ময়দানে যান। গানটি ইউরোপ ও চীনের ঐতিহ্যবাহী রূপ ও রীতির মিশ্রণেএক অদ্বিতীয় চীনা গান হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। আজও এ গানটি অনেক জনপ্রিয়। গানে বলা হয়েছে, "যে দিন শত্রুরা আমার গ্রামে এসেছে, তখন থেকে আমার বাড়ি, আত্মীয়স্বজন, গরু ও ছাগল সব হারিয়েছে। এখন আমি চিয়া লিং চিয়াং নদীর তীরে হাঁটছি। মনে হয়, আবার স্বদেশের মাটির সুগন্ধ পেয়েছি। অভিন্ন স্রোত, অভিন্ন চাঁদ, কিন্তু আমার সমস্ত আনন্দ ও স্বপ্ন হারিয়ে গেছে। প্রতি রাতে নদীর পানি কান্নার মতো আমার মনের ভেতর প্রবাহিত হয়। আমাকে স্বদেশে ফিরে যেতে হবে। শত্রুদের বন্দুকের মধ্য দিয়েও স্বদেশে ফিরে যেতে হবে।"