0817yinyue.mp3
|
চীনা বিপ্লবের এক পবিত্র স্থান 'ইয়ান আন'। 'ইয়ান আন' হচ্ছে চীনের লাল ফৌজের লং মার্চ বিজয়ের পর পায়ে হেঁটে অবস্থান নেওয়ার জায়গা। এখানেই জাপানের আগ্রাসন প্রতিরোধ বিষয়ক চীনের জাতীয় যুক্তফ্রন্ট প্রতিষ্ঠিত হয়। এই অঞ্চলটি চীনের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের প্রারম্ভ স্থান। ১৯৩৫ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত চীনের মহান নেতা মাও ছে তোংসহ প্রবীণ মজুর-শ্রেণীর বিপ্লবীরা এখানে ১৩ বছর বসবাস করেন এবং সংগ্রাম করেন। তারা চীনে জাপানের আগ্রাসন বিরোধী যুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন এবং যুদ্ধ পরিচালনা করেন। তারাই চীন গণপ্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মজবুত ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং মহান ঐতিহাসিক অধ্যায় লেখেন।
প্রিয় শ্রোতা, বিপ্লবী এই যুদ্ধের সময় ইয়ান আন ছিলো চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মূল পরিচালনা কেন্দ্র এবং এক বিরল বা গুপ্ত জায়গা। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি এখানে বসেই চীনের বিপ্লব সম্পর্কিত নানা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং চীনের ক্ষমতা অর্জনের জন্য মজবুত ভিত্তি স্থাপন করেছে।
ইয়ান আনের পাওথা পাহাড়
ইয়ান আনে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি চিরস্থায়ী উজ্জ্বল ইয়ান আন মর্ম পালন করেছে। ইয়ান আন মর্ম চীনের বিপ্লব ও গঠনকালে গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তির ভূমিকা পালন করেছে। ইয়ান আন মর্ম হচ্ছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি, তথা গোটা চীনা জাতির মূল্যবান মানসিক সম্পত্তি। চীনের ইতিহাস উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় 'ইয়ান আন মর্ম' বিরাট ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছে।
বন্ধুরা, প্রথমে শুনুন চীনের বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী লি শুয়াং চিয়াংয়ের গাওয়া 'ইয়ান আনকে নিয়ে প্রশংসার গান'। এ গানের কথা লিখেছেন চীনের একজন বিখ্যাত নারী কবি মো ইয়ে। সুর করেছেন সামরিক সংগীতের পিতা চাং লিউ ছেং। ১৯৩৮ সালে 'ইয়ান আনকে নিয়ে প্রশংসার গান' লেখার সময় তারা ছিলেন লু শুন শিল্প একাডেমির নাটক বিভাগ ও সংগীত বিভাগের প্রথম শ্রেণীর ছাত্র। তখন মো ইয়ের বয়স মাত্র ২০ বছর। সুরকার চাং লিউ ছেং এ গানের সুর করার পর নিজেও ভাবতে পারেন নি যে, এ গান এতো জনপ্রিয় হবে। তিনি অতীত স্মরণ করে বলেন, "আমি ভাবতে পারি নি যে, এ গান এভাবে পাখা নেড়ে ইয়ান আন থেকে ফ্রন্টে উড়ে চলে যাবে। মুক্ত অঞ্চল থেকে কোংমিনতাং পার্টি প্রশাসন অঞ্চল, এমন কি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াও ছড়িয়ে পড়েছে এ গান'।
'ইয়ান আন প্রশংসার গান' শিরোনামে এ গানের মাধ্যমে লাখ লাখ বিপ্লবী জনগণের ইয়ান আনের প্রতি ভালোবাসার অনুভূতি প্রতিফলিত হয়েছে। সে সময় অনেক বিপ্লবী এ গান গাইতে গাইতে নানা কঠিন অবস্থা অতিক্রম করে চীনের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ইয়ান আনে এসে বিপ্লবের স্রোতে অংশ নেন। ইয়ান আন অঞ্চলের যে জায়গায় লোকজন আছে, সে জায়গাতেই 'ইয়ান আনকে নিয়ে প্রশংসার গান' এর আওয়াজ শোনা যায়। 'ইয়ান আনকে নিয়ে প্রশংসার গান' আসলে যুদ্ধকালে ইয়ান আনে সৃষ্ট শ্রেষ্ঠ সংগীত এবং ইয়ান আন মর্মের প্রতীক।
শ্রোতাবন্ধুরা, 'ইয়ান আনকে নিয়ে প্রশংসার গানে' বলা হয়েছে, 'ইয়ান আন, এ মহান প্রাচীন নগরের চারদিকে জাপানী আগ্রাসন প্রতিরোধ যুদ্ধের গান ছড়িয়ে আছে। ইয়ান আন, হে পবিত্র ও মহিমান্বিত প্রাচীন নগর, তোমার বুকে রক্ত ছুটছে দ্রুত। হাজার হাজার যুবকের মনে শত্রুদের প্রতি ঘৃণা লুকিয়ে আছে। দেখুন, জনসাধারণ জেগে উঠেছে। তারা হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। অসংখ্য মানুষ শত্রুদের বিরুদ্ধে গর্জন করছে। সৈন্যরা বন্দুক হাতে নিয়ে শত্রুদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে প্রস্তুত। ইয়ান আন, জনতা আজ তোমার সুগম্ভীর দেয়াল দিয়ে মজবুত ফ্রন্ট নির্মাণ করেছে। তোমার সুনাম ইতিহাসে দীর্ঘস্থায়ী উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।"
সেই সময়গুলোতে ইয়ান আন, সারা চীনের দেশপ্রেমী যুবক-যুবতীদের প্রত্যাশার স্থান ছিলো। উত্তাল সে সময়গুলোতে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ইয়ান আনের চারপাশে গানের আওয়াজ শোনা যেতো। ইয়ান আনে আসা বিদেশী বন্ধুরা ইয়ান আনকে 'গানের নগর' বলতেন এবং চীনা জাতিকে 'গানের জাতি' বলতেন। ইয়ান আনের গানগুলো প্রধানত কোরাস ছিল। কারণ কোরাস হচ্ছে দলগত আবেগ প্রকাশ করার এক চমত্কার উপায়। কোরাস গানের মাধ্যমে জোরালো গানের আওয়াজে সমষ্টিগত শক্তি অনুভব করা যায় এবং নিজেকে দলের একজন শক্তিশালী সদস্য হিসেবে উপলব্ধি করা যায়।