Web bengali.cri.cn   
বাংলাদেশের ঈদ-অর্থনীতি : লেনদেন জাতীয় বাজেটের প্রায় অর্ধেক
  2015-07-20 20:25:23  cri

বাঙালির ১২ মাসে ১৩ পার্বণ। উৎসব পাগল বাঙালির আবহমান সংস্কৃতির পরিচয় এসব পালা-পার্বণে। ঈদ-পূজা বা যে কোনো পার্বণে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষ যোগ দেয় আনন্দ উদযাপনে। হাজার বছর ধরে চলছে বাঙালির এ সাংস্কৃতিক যাত্রা।

বাঙালির সব উত্সবেই থাকে বিশেষ আয়োজন। আর এতে স্বাভাবিকভাবেই বাড়ে ভোগ্যব্যয়। সচ্ছলতা থাকলে তো কথাই নেই, অভাব-অনটনের মধ্যেও উত্সব কেন্দ্রিক ব্যয় প্রবণতা বাড়ছে মানুষের মধ্যে। এর ফলে বিভিন্ন উত্সব কেন্দ্র করে গতিশীলতা আসে অর্থনীতিতে।

বাংলাদেশের মুসলিমদের প্রধান ধর্মীয় উত্সব এই ঈদ। তবে এ উত্সবে যোগ দেন সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ। ঈদ জোরদার করে সম্প্রীতির বন্ধন। ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে গতিশীল হয় দেশের দেশের অর্থনীতি। একদিনের ঈদ উৎসবে কিনিবিকি চলে মাসব্যাপী। ঈদ-আনন্দ দিন দিন অনেকটাই যেন শপিংমল কেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। ফুটপাত থেকে অভিজাত বিপনী বিতান- সবখানেই বাড়তি আয়োজন, বাড়তি কেনাকাটা। ছোট-বড়, ধনী-গরীব সবারই সাধ্যমতো চাই নতুন কাপড়, জামা-জুতো, গহনাগাটি।

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঈদ উদযাপিত হয়েছে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে। বাংলাদেশ আর দরিদ্র দেশ নয়। এতে জাতি হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মর্যাদা বেড়েছে। দেশবাসী এবার ঈদ করেছেন একটু ভিন্ন আমেজে। নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি ঈদ-উত্সবে কেনাকাটায় প্রভাব ফেলেছে কি না, বা ফেললেও তা কতখানি তার কোনো সমীক্ষা এখন পর্যন্ত করা হয়নি। তবে, অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা মনে করেন পরোক্ষভাবে হলেও তা ঈদ কেনাকাটায় প্রভাব ফেলেছে। বরাবরের মতোই এবারও ঈদ-উপলক্ষে ছিল কেনাকাটার হিড়িক।

বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়িক সংগঠন এফবিসিসিআই ঈদপূর্ব এক সমীক্ষায় বলছে, এবারের ঈদে সারাদেশে লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এটি বাংলাদেশের বার্ষিক জাতীয় বাজেটের প্রায় অর্ধেক।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষক মামুন রশীদ ঈদ কেনাকাটা নিয়ে ২০১২ সালে একটি সমীক্ষা করেন। তার সেই সমীক্ষায় দেখা গেছে সেই বছর ঈদ কেন্দ্রিক লেনদেন ছিল ৫৫ হাজার কোটি টাকা। তিন বছরের ব্যবধানে সেই ব্যয় দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ১ লাখ কোটি টাকার কিছু বেশি হবে বলে মনে করেন তিনি।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষক মাহবুবা নাসরিন মনে করেন, ঈদের এ কেনাকাটায় যেমন জড়িয়ে আছে দেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি, তেমনি এতে রয়েছে বাজার অর্থনীতির প্রভাব। যে কারণে দিনকে দিন উত্সবকেন্দ্রিক ভোগপ্রবণতা বাড়ছে।

শুধু দেশেই কেনাকাটা নয়, অর্থনৈতিক সঙ্গতি রয়েছে এমন অনেকেই ঈদ কেনাকাটা করতে পাড়ি জমান বিদেশে। তাদের অনেকের গন্তব্য থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া কিংবা ইউরোপের কোনো দেশে। অনেকে ঈদটাই কাটিয়ে আসেন বিদেশে।

ঈদ-উত্সবের এমন ঝলমলে দিকের বিপরীতে রয়েছে এর অন্ধকার দিকও। মাথাপিঁছু আয়ের হিসেবে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হলেও দেশের এখনো বড় একটা অংশ রয়েছে দরিদ্রসীমার নিচে। দেশ মধ্যম আয়ের স্বীকৃতি পেলেও তাদের জীবন যাত্রায় কোনো প্রভাব ফেলে না। তাদের ঈদ আনন্দেও আনে না কোনো নতুনত্ব। জাকাত সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রায় প্রতিবছরই প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে দেশে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ময়মনিসংহে নূরানি জর্দা কারখানার মালিকের দেওয়া জাকাতের কাপড় সংগ্রহ করতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ২৭ জন মানুষের মৃত্যু ঈদের আগে কাঁপিয়ে দিয়েছে জাতির বিবেক।

অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলিকুজ্জামান মনে করেন, ভোগবাদি অর্থনীতির আনিবার্য পরিণতি এ অবস্থা। এমন অর্থনৈতিক অবস্থায় সমাজের কিছু মানুষ সুবিধা ভোগ করবে আর অধিকাংশ মানুষকে থাকতে হয় সুবিধাবঞ্চিত হয়ে। সমাজ-সংস্কৃতি, ব্যক্তিগত বা পারিবারিক অনুভূতি, ধর্মীয় বা সামাজিক উৎসব সবকিছুতেই ঢালাও বাণিজ্যিকিকরণের বিরুদ্ধে সতর্ক করে দেন এই অর্থনীতিবিদ।

মাহমুদ হাশিম, ঢাকা থেকে।

মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040