Web bengali.cri.cn   
সংকটে বাংলাদেশের আবাসন শিল্প : প্রয়োজন তবহিল সরবরাহ ও স্বল্প সুদে ঋণ
  2015-03-16 19:04:21  cri

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাসহ কয়েকটি কারণে অন্যান্য খাতের মতো সংকটে রয়েছে দেশের আবাসন শিল্পও। অব্যাহত এ সংকটে কমছে নতুন উদ্যোক্তা ও প্রকল্পের সংখ্যা। সংকুচিত হয়ে আসছে কর্মসংস্থান। কমে যাচ্ছে সরকারের রাজস্ব আয়। আবাসন খাতে সহায়তাকারী দেশের প্রধান সংস্থা হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন-বিএইচবিএফসি তহবিল সংকটের কারণে বন্ধ রেখেছে ঋণ প্রদান। এতে করে অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

আবাসন খাতে মন্দা দশা শুরু হয় ২০০৭-৮ সালের দিকে। ২০০৯ সালের দিকে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও পরের বছর পুনঃঅর্থায়ন তহবিল বন্ধ করে দেওয়ায় ফের দুরবস্থা দেখা দেয় এ খাতে। পরে গ্যাস-বিদ্যুত্ সংযোগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে বড় ধরনের সমস্যায় পড়ে এ খাতটি। এ সংকট দূর হলেও বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতায় বেহাল দশায় দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এ খাতটি।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউকের হিসাব মতে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে আবাসান খাতে নকশা অনুমোদন হয় ২ হাজার ৬৯৯টি। ১৩-১৪ অর্থবছরে এ সংখ্যা কমে নেমে আসে আড়াই হাজারে। চলতি বছর এ সংখ্যা আরও কমবে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের হিসাব মতে ১২-১৩ অর্থবছরে আবাসন খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয় ছিল ৪ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। ১৩-১৪ অর্থবছরে রাজস্বের পরিমাণ কমেছে ৬০০ কোটি টাকা।

আবাসন শিল্প মালিকদের সংগঠন-রিহাবের সভাপতি শামসুল আলামিন জানান, মন্দাদশার কারণে গত কয়েকমাসে স্থপতি ও প্রকোশলীসহ কর্মকর্তা ছাটাই করতে হয়েছে ১৫ শতাংশ। শ্রমিক ছাটাই করতে হয়েছে ৩৫ শতাংশ। ভ্রাম্যমান শ্রমিক কমে গেছে ৪০ শতাংশ। সামনে এ অবস্থা আরও প্রকট আকার ধারন করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন রিহাব সভাপতি। বর্তমান এ পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসছেন না নতুন উদ্যোক্তারাও। রিহাবের হিসাবে ২০১০ সালে এ খাতে নতুন উদ্যোক্তা যুক্ত হয়েছিলেন ২৮২ জন। ২০১১-তে তা নেমে আসে ১৭৭ জনে। কমতে কমতে ২০১৪ সালে নতুন উদ্যোক্তার সংখ্যা নেমে এসেছে ৪৮ জনে। বিশ্বব্যাংকের লিড অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এজন্য বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকটকে দায়ী করেন। বিনিয়োগকারীরা আশ্বস্ত হতে না পারলে বিনিয়োগ তো হবেই না বরং বিদেশে টাকা পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন ড. জাহিদ।

আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকারি প্রতিষ্ঠান হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন-বিএইচবিএফসি প্রতিষ্ঠা করা হলেও তহবিল সংকটে এ ক্ষেত্রে কাঙ্খিত ভূমিকা রাখতে পারছে না সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি। সবশেষ ২০০৯ সালে ৩০০ কোটি টাকা তহবিল দেওয়ার পর সংস্থাটি সরকারের কাছ থেকে আর কোনো বরাদ্দ পায়নি। বিএইচবিএফসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আলম তালুকদার জানান, ২০১২-১৩ অর্থবছরে তার সংস্থা থেকে প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। কিন্তু তহবিল সংকটে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তা নেমে এসেছে ২৮৫ কোটি টাকায়। সংকট গভীর হওয়ায় গত দেড় বছর ধরে নতুন ঋণ আবেদন গ্রহণ বন্ধ রেখেছে সংস্থাটি।

এ খাতে এগিয়ে আসছে না বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো। অতি উচ্চ সুদের হারের কারণে বেসরকারি ব্যাংকের ঋণের ব্যাপারেও আগ্রহী নন উদ্যোক্তা ও ক্রেতারা। বর্তমানে প্রায় ১৩ হাজার ফ্ল্যাট অবিক্রিত রয়ে গেছে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য বিএইচবিএফসিকে শক্তিশালী করা ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সুদের হার কমানো জরুরি বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান।

মাহমুদ হাশিম, ঢাকা থেকে।

মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040