Web bengali.cri.cn   
সংকটে বাংলাদেশের অর্থনীতি : অবরোধে বিঘ্নিত উত্পাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা
  2015-01-12 19:12:41  cri

২০১৩ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল তা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারও সঙ্কটে পড়েছে অর্থনীতি। ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে টানা অবরোধের ডাক দেয় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল। ১২ জানুয়ারি সোমবার অবরোধ গড়িয়েছে সপ্তম দিনে। অবরোধের কারণে দেশের পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। উৎপাদন কমে গেছে শিল্পকারখানায়, কমেছে রপ্তানি। এরই মধ্যে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। এ অবস্থা চলতে থাকলে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা।

অবরোধের প্রথম ধাক্কাটা লেগেছে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায়। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে রাজধানীতে কৃষিপণ্যসহ সব ধরনের মালামাল পরিবহন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। রাজধানী থেকেও বিভিন্নস্থানে মালামাল সরবরাহ কমে গেছে। রাজধানীর পাইকারী বাজার কাওরান বাজারে প্রতিদিন গড়ে একহাজারের মতো পণ্যবাহী ট্রাক আসে। অবরোধের কারণে তা কমে এসেছে ছয় সাতশোতে। ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সবজি ও কৃষিপণ্য পাঠাতে পারছেন না কৃষকরা। এতে তারা যেমন লোকসানে পড়ছেন তেমনি বাজারে পণ্য কম থাকায় বাড়ছে দাম। এরই মধ্যে পেঁয়াজ ও আলুর মতো অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

অবরোধের কারণে ঢাকায় যেমন পণ্য আসছে কম, তেমনি আমদানি করা ফলসহ বিভিন্ন পণ্য আটকা পড়ে আছে রাজাধানীতে। আড়তদাররা জানান মোট আমদানির ২৫ ভাগ ব্যবহার হয় রাজধানীতে। বাকি ৭৫ ভাগ যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে। কিন্তু পরিবহন সংকটে অন্য জেলাগুলোতে পণ্য পাঠাতে পারছেন না তারা। আড়তে নষ্ট হচ্ছে মালামাল।

বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতিগুলোর ফেডারেশন-এফবিসিসিআই জানিয়েছে, অবরোধের কারণে ২ লাখ বাস, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান রাস্তায় নামতে পারছে না। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন ২০ লাখ মোটর শ্রমিক। প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে ২০০ কোটি টাকা। পরিবহন সংকটের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উত্পাদন ব্যবস্থাও।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ায় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষ। উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় ভারসাম্যহীনতার কারণে সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি। স্বল্প ও মধ্য মেয়াদি প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। এর ফলে রপ্তানি ও রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ আরো কঠিন হবে বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে, টানা অবরোধে সাধারণ মানুষের মতোই ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ী সমাজ। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্পে উৎপাদন কমে গেছে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। সোমবার এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিজিএমইএ। এর সভাপতি আতিকুল ইসলাম জানিয়েছেন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ক্রেতারা অর্ডার ফিরিয়ে নিচ্ছেন এবং নতুন অর্ডার দিচ্ছেন না। রানা প্লাজা ও তাজরিন ট্রাজেডির পর দেশের পোশাক শিল্প যখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে তখন রাজনৈতিক সংকট আবারো এ শিল্পকে অনিশ্চয়তার ফেলে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিজিএমইএ সভাপতি। পোশাক শিল্পের মতোই সরবরাহ করতে না পারায় বাধ্য হয়ে উৎপাদন কমিয়ে দিতে হচ্ছে সব শিল্পকারখানাকে। এতে বাড়ছে উৎপাদন খরচ ও বাজারমূল্য।

এ বিষয়ে ১০ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে এফবিসিসিআই। দেশের শীর্ষ এ ব্যবসায়ী সংগঠনটির সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দীন আহমেদ বলেন, অবরোধের কারণে পরিবহন, উৎপাদ ও পর্যটনখাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাজনৈতিক এ অস্থিতিশীলতা অর্থনীতির জন্য বহুকাঙ্খিত বিনিয়োগকেও বাধাগ্রস্ত করছে বলে জানান তিনি।

দেশের অর্থনীতির স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোকে নেতিবাচক কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান ব্যবসায়ীরা। এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম সতর্ক করে দিয়ে বলেন, প্রয়োজনে তারা আইনের আশ্রয় নেবেন।

মাহমুদ হাশিম, ঢাকা থেকে।

মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040