Web bengali.cri.cn   
ঢাকা এপারেল সামিট: ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প
  2014-12-15 19:29:56  cri

গত ৭ ডিসেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় হয়ে গেল ঢাকা এপারেল সামিট। তিন দিনের এ সম্মেলনে অংশ নেন বিশ্বের ৪৪টি নামিদামি ব্র্যান্ডের ক্রেতা ও বিদেশি কূটনীতিকরা। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি-বিজিএমইএ এ সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে থেকে বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশের পোশাক শিল্প সম্পর্কে ইতিবাচক ধারনা নিয়ে গেছেন বলে জানান বিজিএমইএ নেতারা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে সামিটের উদ্বোধন করেন। এসময় ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক থাকতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান। বলেন, তৈরি পোশাক খাত বাংলাদেশের গর্ব এবং বাংলাদেশে বিশ্বে অন্যতম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ যা অনেকের পছন্দ নয়। তাই তারা এ শিল্পকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

তৈরি পোশাকের বাজার সম্প্রসারণে তার সরকারের নেওয়া কিছু পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী পোশাক রপ্তানিকারকদের নতুন ডিজাইন উদ্ভাবন ও নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধানের আহ্বান জানান। এসময় বাংলাদেশের পোশাকের দাম বাড়াতে ক্রেতাদের অনুরোধ করেন শেখ হাসিনা। পাশাপাশি শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি ও তাদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি করার ওপরও জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ক্রেতারা পোশাকের দাম বাড়ালে শ্রমিকরাও লাভবান হবে।

তিন দিনের এ সামিটে অনুষ্ঠিত হয়েছে অনেকগুলো সেশন। এসব সেশনে বাংলাদেশের পোশাক খাতের উন্নয়নে নানা পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি সেশন ছিল কীভাবে ২০২১ সালে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নিত করা যায় তার সুলুক সন্ধান। বর্তমানে বাংলাদেশ বছরে ২৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করে থাকে।

সম্মেলনে তাত্ক্ষণিক এক জরিপে দেখা গেছে ৫৭ শতাংশ উত্তরদাতা অবকাঠামোগত দুর্বলতাকে ৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় বাধা বলে মনে করেন। ২২ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন এক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা শ্রমিকদের অদক্ষতা। এইচএসবিসি লিমিটেড-বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফ্রাংকো দ্য মারকুট বলেন, ৫০ বিলিয়ন ডলারে রপ্তানি পৌঁছতে হলে উচ্চ মূল্যের পণ্যের দিকে ঝুঁকতে হবে। এজন্য শিক্ষা, সুশাসন ও দক্ষতার ওপর জোর দেন তিনি। দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়োংগোন কর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান ও সিইও কিহাক সুং মনে করেন ৫০ বিলিয়ন ডলারে টার্গেট ছুঁতে হলে বর্তমান দক্ষতা অন্তত ১০ শতাংশ বাড়াতে হবে। সঙ্গে কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়ন, শ্রমিক নিরাপত্তা এবং তাদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটানোরও পরামর্শ দেন তারা।

এ লক্ষ্যে সরকার গৃহীত কর্মসূচি তুলে ধরে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, আগামী তিন বছরের মধ্যেই দেশের সব পোশাক কারখানা পুরোপুরি কমপ্ল্যায়ান্স হবে। এ লক্ষ্য অর্জনে বিজিএমইএকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি।

সাভারে রানা প্লাজা ধস ও তাজরিন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডের পর দেশেবিদেশে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পের ভাবমূর্তি সঙ্কট দেখা দেয়। অনেক বিদেশি ক্রেতা বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তবে, গত দেড় বছরে বিজিএমইএ ও সরকারসহ সবার সম্মিলিত পদক্ষেপে তার অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে এ খাতটি। কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো করণীয় রয়েছে অনেক।

ঢাকা এপারেল সামিট থেকে বিদেশি ক্রেতারা ইতিবাচক ধারনা নিয়ে গেছেন বলে দাবি করেন বিজিএমইএ সভাপতি মোঃ আতিকুল ইসলাম। বলেন, বিদেশি ক্রেতারাও মনে করেন, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে পারলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের পোশাক বিশ্বের এক নম্বর ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে।

মাহমুদ হাশিম, ঢাকা থেকে।

মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040