মজুত শস্যের অপচয় রোধ করতে এবং খাদ্যগুদামগুলোর ধারণক্ষমতা বাড়াতে সংশ্লিষ্ট নীতি সংশোধন করবে চীনের কেন্দ্রীয় সরকার। সম্প্রতি শস্যসংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় প্রশাসন (এসএজি) এ তথ্য জানায়।
এসএজি'র মুখ্য প্রকৌশলী হ্য ইই জানান, মজুত শস্যের নিরাপত্তা বাড়াতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর মধ্যে আইনগত ব্যবস্থাও রয়েছে। আইনগত ব্যবস্থার আওতায় শস্যের মজুতের ক্ষেত্রে বিরাজমান বিভিন্ন দুর্নীতি দূর করে শস্যনিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে। তিনি জানান, খাদ্যগুদামগুলোতে অতিরিক্ত 'ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা' বসানো হবে এবং গুদামগুলোতে আকস্মিক পরিদর্শনের সংখ্যা ও হার বাড়ানো হবে।
চীনের মজুত খাদ্যশস্যের নিরাপত্তা নিয়ে বিভিন্ন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করা শুরু করে সাম্প্রতিক একটি ঘটনার পর। ঘটনাটি প্রতিবেদন আকারে প্রচারিত হয় সিসিটিভি-তে। প্রতিবেদন অনুসারে, সম্প্রতি লিয়াওনিং প্রদেশের থিয়েলিং শহরে পুরাতন চাল ক্রয় করে নতুন চাল হিসেবে সংরক্ষণ করা হয় সরকারি খাদ্যগুদামে। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হবার পর চারিদিকে হৈচৈ পড়ে যায়। প্রাদেশিক সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে ওই ২৫ হাজার মেট্রিক টন চাল সিলগালা করে দেয়।
চীনে সরকারি খাদ্যগুদামগুলিতে সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম মূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে কৃষিপণ্য ক্রয় করে মজুত করা হয়। এ ব্যাপারে সরকারি গ্যারান্টি আছে। এর উদ্দেশ্য, কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করা এবং দেশের পর্যাপ্ত কৃষিজমি যাতে চাষাবাদের আওতায় আসে তা নিশ্চিত করা।
চীনের রাষ্ট্রায়াত্ব 'চায়না গ্রেইন রিজার্ভস্কোম্পানি' কৃষকদের কাছ থেকে সবচে বেশি কৃষিপণ্য কিনে গুদামজাত করে থাকে। গত বছর এ কোম্পানির দেশব্যাপী মোট ২৪৬টি কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদাম ছিল। আইন অনুসারে, নির্দিষ্ট সময় পর পর পুরাতন শস্যের বদলে কৃষকদের কাছ থেকে কেনা নতুন শস্য দিয়ে গুদামগুলো ভরার কথা।
২০১৪ সালে কোম্পানিটি ১২ কোটি ৫০ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করে গুদামজাত করেছিল। অন্যভাবে বললে, কোম্পানিটি দেশে উত্পাদিত মোট খাদ্যশস্যের প্রায় ২০ শতাংশ ক্রয় করে।
পেইচিংয়ে অবস্থিত চীনের কৃষিবিজ্ঞান একাডেমির গবেষক চাং চিয়াং বললেন, সরকারের উচিত খাদ্য মজুতের মান গ্রহণযোগ্য মাত্রায় উন্নীত করতে জাতীয় পর্যায়ে 'থার্ড পার্টি' সংস্থাগুলোর সেবা গ্রহণ করা। এসব সংস্থা দেশি হতে পারে, আবার বিদেশিও হতে পারে।
চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের হিসেব অনুসারে, দেশের মজুত শস্যের এক-চতুর্থাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ বা খুবই খারাপ অবস্থায় আছে। এ ছাড়া, প্রতি বছর ২ কোটি মেট্রিক টন শস্য নষ্ট হয়। এ প্রসঙ্গে চাং চিয়াং বললেন, "মজুতকারী কোম্পানিগুলোর উচিত নিয়মিত বিরতিতে পুরাতন শস্য বিক্রি করে নতুন শস্যের জন্য জায়গা খালি করা। এ ছাড়া, জাতীয় খাদ্যগুদামগুলির কার্যকর ও সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিশেষ পরিদর্শন-ব্যবস্থাও চালু করা উচিত।"
প্রধান খাদ্যশস্যের চাহিদা ও চালানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার লক্ষ্যে চীনের কেন্দ্রীয় সরকার চলতি বছরেই বেশকিছু নতুন খাদ্যগুদাম নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এসব খাদ্যগুদামের ধারণক্ষমতা হবে ৫ কোটি মেট্রিক টন। এসব খাদ্যগুদাম নির্মিত হবে মূলত দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে। এসব অঞ্চলেই চীনের সবচে বেশি খাদ্যশস্য উৎপন্ন হয়।
মজুত শস্যের নিরাপত্তা বাড়াতে সরকার বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণকেও উত্সাহিত করবে। শস্যসংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় প্রশাসন (এসএজি)-র নীতি ও আইন বিভাগের মহা-পরিচালক ইয়ান পো জানালেন, পরিবহণের সময় প্রায় ২ শতাংশ শস্য নষ্ট হয়। এ অপচয় রোধ করতে প্রশাসন অগ্রাধিকারভিত্তিতে কাজ করবে। এ ছাড়া, কৃষকদের সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাসম্বলিত নতুন নতুন খাদ্যগুদাম নির্মাণেও প্রশাসন উৎসাহ যুগিয়ে যাবে।
চীনের কেন্দ্রীয় সরকার খাদ্যনিরাপত্তা জোরদার করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে ইচ্ছুক। আর তাই এ খাতে গত বছর সর্বমোট ২২১৫ কোটি ইউয়ান বিনিয়োগ করা হয়। এ অর্থের একটা অংশ বেসরকারি খাত থেকে আসে। চলতি বছরও এ যৌথ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানালেন ইয়ান পো।(আলিম)
| ||||