0216jingji.mp3
|
রাষ্ট্রীয় পরিষদ এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো 'বিদেশে চীনের সাহায্য' শীর্ষক শ্বেতপত্র প্রকাশ করলো। এতে বলা হয়েছে, ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত অপরিশোধযোগ্য সহায়তা, সুদবিহীন ঋণ এবং সহজ শর্তে ঋণ হিসেবে চীন বিভিন্ন দেশকে মোট ৮৯৩৪ কোটি ইউয়ান দিয়েছে। চীনের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা গবেষণালয়ের উপ-প্রধান ওয়াং ছেং আন জানিয়েছেন, চীন মূলত নিম্ন আয়ের উন্নয়নশীল দেশগুলোর দারিদ্র্য বিমোচন ও জীবিকা উন্নয়নের জন্য আর্থিক সাহায্য দিয়ে থাকে।
ওয়াং ছেং আন বলেন, "চীন ১৯৫০ সাল থেকে অন্য দেশকে সাহায্য দেওয়া শুরু করে। তারপর ২০১৪ সাল পর্যন্ত কেটে গেছে ৬৪টি বছর। এসময় চীনের ৮০ শতাংশ অর্থ-সহায়তা পেয়েছে মূলত এশিয়া ও আফ্রিকার স্বল্পোন্নত ও নিম্ন আয়ের দেশগুলো।"
প্রকাশিত শ্বেতপত্রে চীনের সাহায্যপ্রাপ্ত যে ১২১টি দেশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আছে এশিয়ার ৩০টি, আফ্রিকার ৫১টি, ওশেয়েনিয়ার ৯টি, লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের ১৯টি, এবং ইউরোপের ১২টি দেশ। তা ছাড়া, চীন আফ্রিকান ইউনিয়নসহ কিছু আঞ্চলিক সংগঠনকেও সহায়তা দিয়েছে। চীন মূলত বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, পণ্য সরবরাহ, প্রযুক্তি ও মানবসম্পদ খাতে সহযোগিতা, চিকিত্সক দল ও স্বেচ্ছাসেবক এবং জরুরি মানবিক সাহায্য প্রেরণ, এবং ঋণ মওকুফের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশকে সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে থাকে।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা গবেষণালয়ের প্রধান ওয়াং শুও মনে করেন, বিদেশে চীনের সাহায্য দেওয়ার পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন এসেছে। তিনি বলেন, "অতীতে ভবন ও প্যাভিলিয়নসহ নানা প্রতীকী স্থাপনা নির্মাণের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হতো। এখন জনগণের জীবিকার চাহিদা পূরণ হবে এমন খাতে, যেমন কৃষি, স্বাস্থ্য, পরিবেশ সুরক্ষা, দারিদ্র্য বিমোচন ও শিক্ষাসহ সংশ্লিষ্ট খাতে সাহায্যের পরিমাণ বেড়েছে। আরেকটি পরিবর্তন এসেছে সাহায্য দেওয়ার পদ্ধতিতে। অতীতে মূলত পণ্য সরবরাহ এবং সাহায্যের অর্থ দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হতো। আজকাল সাহায্যগ্রহণকারী দেশগুলোর নিজস্ব উন্নয়নসামর্থ্য বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে এবং দেশগুলোতে চীনের মানবসম্পদ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা অনেক বেড়েছে। এতে সহায়তা দেওয়ার পদ্ধতিতে বৈচিত্র্য এসেছে।"
রাষ্ট্রীয় পরিষদের শ্বেতপত্রে জোর দিয়ে একটি কথা উল্লেখ করা হয়েছে; বলা হয়েছে: চীন শর্তহীনভাবেই বিদেশে সাহায্য দিয়ে থাকে; সাহায্য দেওয়ার নামে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে না; এবং সাহায্যগ্রহণকারী দেশের নিজস্ব উন্নয়নপথ ও পদ্ধতি বাছাই করার অধিকারকে সম্মান করে। শ্বেতপত্রে আরো বলা হয়েছে, পারস্পরিক সম্মান, প্রতিশ্রুতি রক্ষা, এবং পারস্পরিক কল্যাণ বিদেশে চীনের সাহায্যদান কর্মসূচির মৌলিক বৈশিষ্ট্য। ওয়াং শুও মনে করেন, চীন অব্যাহতভাবে বিভিন্ন দেশকে সাহায্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সমাজের প্রতি তার দায়িত্ব পালন করছে।
ওয়াং শুও বলেন, "বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের উচিত আন্তর্জাতিক সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন করা। কারণ, নিজেদের কঠিন সময়ে আমরাও উন্নয়নশীলসহ বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে ব্যাপক সাহায্য-সহযোগিতা পেয়েছি। তাই আমাদের উচিত উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আরো বেশি বেশি সহায়তা দেওয়া, যাতে সকলের কল্যাণার্থে অভিন্ন উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা যায়।"
শ্বেতপত্র অনুসারে, তাঞ্জানিয়া, জাম্বিয়া, ক্যামেরুন, ইকুইটোরিয়াল গিনি, মালি, টোগো, বেনিন, আইভরি কোস্ট ও সুদানের মতো স্বল্পোন্নত ও অতিদরিদ্র দেশের ১৬টি মেয়াদোত্তীর্ণ সুদবিহীন ঋণ মওকুফ করেছে চীন। মওকুফকৃত এ ঋণের মোট পরিমাণ ১৪২ কোটি ইউয়ান।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, চীন আঞ্চলিক সহযোগিতা পর্যায়ে সাহায্যগ্রহণকারী দেশগুলোর সাথে আলাপ আলোচনার ওপরও গুরুত্ব দেয় এবং চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরাম ও চীন-আসিয়ান সম্মেলনসহ নানা আঞ্চলিক সহযোগিতা প্লাটফর্মের আওতায় বেশ কয়েকবার সাহায্য-সহযোগিতা দিয়েছে। বস্তুত, চীন বিভিন্ন অঞ্চলের উন্নয়নচাহিদা মেটানোর ওপর জোর দেয়। ওয়াং শুও বলেন, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার সামর্থ্য বাড়ার সাথে সাথে, চীন বিভিন্ন বহুপক্ষীয় উন্নয়ন সংস্থার সহায়তাকাজেও অংশ নিচ্ছে। তার মতে, চীন আগের যে-কোনো সময়ের তুলনায় আরো খোলা মন নিয়ে বিভিন্ন দেশের সাথে নিজের উন্নয়ন-অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করছে এবং বাস্তব ক্ষেত্রে সহযোগিতার মনোভাব প্রদর্শন করছে। (ইয়ু/আলিম)
| ||||