Web bengali.cri.cn   
চীনের অর্থনীতির অগ্রগতিতে উদ্ভাবনের ভূমিকা
  2014-12-29 17:21:59  cri

বিশ্ব ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর টানা ২৫ বছর ধরে ৭ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১৩টি দেশে। চীন তাদের অন্যতম। ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে চীনের অর্থনীতিতে প্রতিবছর ১০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এভাবেই দেশটি বিশ্বের বৃহত্তম নির্মাণশিল্পের দেশ এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে বিশ্বে ভোগের পরিমাণ কমেছে এবং সম্পদ ও পরিবেশের ওপর বিভিন্নমুখী চাপ বেড়েছে। এ অবস্থায় বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের অর্থনীতির জন্য বর্তমান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে উন্নয়নপদ্ধতি পরিবর্তন এবং গুণগত মান উন্নত করা।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে চীনের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭.৪ শতাংশ। এতে অনেকেই বলা শুরু করেন যে, চীনের অর্থনীতিতে পতন দেখা দিয়েছে। কিন্তু চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মে মাসেই বলে দিয়েছিলেন যে, তার দেশের অর্থনীতি বর্তমানে 'নতুন স্বাভাবিক অবস্থা' অতিক্রম করছে। তিনি মনে করেন, নতুন স্বাভাবিক অবস্থার তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্য আছে। বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে: প্রবৃদ্ধির হার উচ্চ থেকে মধ্য-উচ্চ গতিতে নেমে আসবে; আর্থিক অবকাঠামো নিরন্তরভাবে সুবিন্যস্ত হতে থাকবে; এবং অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে পুঁজি ও বিনিয়োগের স্থান দখল করবে উদ্ভাবন বা সৃষ্টিশীলতা।

চীনের আন্তর্জাতিক অর্থনীতি বিনিময় কেন্দ্রের তথ্য বিভাগের প্রধান শুয়ে হোং ছাই এ প্রসঙ্গে বলেন, "চীনের অর্থনীতি তথাকথিত তিনটি পর্যায়ের একটি মিশ্র 'নতুন উন্নয়ন পর্যায়ে' প্রবেশ করেছে। এ সময় এমন কিছু বাস্তব অবস্থা ও বৈশিষ্ট্য দেখা যাবে যা অতীতের তুলনায় ভিন্ন। যেমন অতীতে আমরা ব্যাপক উত্পাদন, বিপুল সম্পদ ব্যয় এবং সস্তা শ্রমশক্তি কাজে লাগিয়ে রপ্তানি বৃদ্ধি করতাম। এমন পদ্ধতি দীর্ঘমেয়াদের জন্য টেকসই নয়। ভবিষ্যতে আমরা উদ্ভাবনের ওপর নজর দেব এবং সংস্কারের সুবিধা উন্মুক্ত করবো।"

ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক লি থাও খুই মনে করেন, ২০১৪ সাল ছিল চীনের অর্থনীতির 'নতুন স্বাভাবিক অবস্থার' জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদিও এ বছর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির গতি মন্থর ছিল, কিন্তু শহরাঞ্চলে নতুন করে এক কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই অর্জিত হয়েছে। নাগরিকদের ভোগের অনুপাত বেড়েছে, অর্থনৈতিক অবকাঠামো উন্নত হয়েছে। লি থাও খুই বলেন, "২০১৪ সালের ৭.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে, ২০১৫ সালে তা ৭ শতাংশ নামতে পারে। চীনের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার হ্রাস পাওয়া মানে এই নয় যে এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। আমি মনে করি, ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধি বাড়বে। চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রবণতা হবে ইংরেজী অক্ষর U এর মতো ।"

ডিসেম্বরে প্রকাশিত ব্যাংক অব চায়নার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকতে পারে। তবে সেবা শিল্প ভিত্তিক 'তৃতীয় শিল্প' চীনে দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে। অনলাইন বাণিজ্য আর মোবাইল ইন্টারনেটও দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। জ্বালানি সাশ্রয় আর সম্পদ ব্যয় কমানোর সূচক প্রত্যাশিত লক্ষ্যের চেয়ে ভালো।

ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ছাও ইউয়ান চাং বলেন, "চলতি বছরকে নিম্ন মুদ্রাস্ফীতি এবং ভালো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বছর বলা যেতে পারে। আগামী বছরও এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে। আমরা আশা করি, আগামী বছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার হবে প্রায় ৭.২ শতাংশ, মুদ্রাস্ফীতির হার হবে প্রায় ২.৪ শতাংশ।"

'নতুন স্বাভাবিক অবস্থার' অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে পুঁজি ও বিনিয়োগের স্থান উদ্ভাবন বা সৃষ্টিশীলতায় রূপান্তরিত হওয়া। এ প্রসঙ্গে জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের একাডেমিক কমিটির সদস্য চাং ইয়ান শেং বলেন, "এ বৈশিষ্ট্যকে সহজ করে বললে এমন দাঁড়াবে: ঘামের পরিবর্তে বুদ্ধির ওপর নির্ভর করা। ঘামের ওপর নির্ভর করার অর্থ শ্রমশক্তি, মূলধন, সম্পদ, ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে প্রবৃদ্ধি অর্জন করা। ঘামের ওপর নির্ভর করে যে উন্নয়ন অর্জিত হয় তা দ্রুতই চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে যায়। আর বুদ্ধির ওপর নির্ভর করার অর্থ উদ্ভাবনের ওপর নির্ভর করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা।"

উপাত্ত অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে চীনের উচ্চ ও নতুন প্রযুক্তি শিল্প আর সাজসরঞ্জাম নির্মাণ শিল্পের প্রবৃদ্ধির হার যথাক্রমে ১২.৩ শতাংশ ও ১১.১ শতাংশ ছিল। এটা শিল্পের গড়পরতা প্রবৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি। চীনের ইউনিট জিডিপি ব্যয় ৪.৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। প্রযুক্তিগত সংস্কার সংক্রান্ত বিনিয়োগের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত দ্রুত প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে। চলতি বছরের প্রথম দশ মাস প্রযুক্তিগত সংস্কারের বিনিয়োগের পরিমাণ এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪. ৭ শতাংশ বেশি ছিল।

চীনের শিল্প ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পরিচালনা তত্ত্বাবধান সমন্বয় ব্যুরোর উপ-মহাপরিচালক হুয়াং লি বিন বলেন, "চীন নির্মাণশিল্প দিয়ে শক্তিশালী দেশ গঠনের কৌশল বাস্তবায়ন করবে; বিশাল উপাত্ত, বুদ্ধিবৃত্তিক নির্মাণসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন প্রকল্প সংগঠন করবে; প্রযুক্তির বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করবে; এবং কিছু বুদ্ধিবৃত্তিক নির্মাণের দৃষ্টান্ত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করবে।"

রোবট গবেষণা, উত্পাদন ও কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে একটি দেশের দক্ষতার মাধ্যমে ফুটে ওঠে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দেশটির অবস্থান। এখন চীন হচ্ছে রোবটের বৃহত্তম বাজার। বিশাল বাজার চাহিদা দেখে বিদেশী বিখ্যাত রোবট শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো একে একে চীনের বাজারে প্রবেশ করছে এবং উচ্চ শ্রেণীর পণ্য চীনের বাজার দখল করছে। এর পাশাপাশি চীনের রোবট শিল্পপ্রতিষ্ঠানও ধাপে ধাপে বড় হচ্ছে এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি আয়ত্ত করছে।

২০১৩ সালে চীন নিজস্ব ব্র্যান্ডের ৯০০০টি রোবট বিক্রি করছে। সারা বছর চীনের বাজারে বিক্রিত ৩৭০০০ রোবটের মধ্যে তা চার ভাগের এক ভাগ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চীনে ৪২০টি রোবট শিল্পপ্রতিষ্ঠান ছিল। এগুলোর মধ্যে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত ৫৪টি কোম্পানি রোবট ও বুদ্ধিবৃত্তিক স্বয়ংক্রিয় প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। (ইয়ু/আলিম)

মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040