1110APEC.mp3
|
চীনের রাজধানী পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২০১৪ সালের 'এশিয়া-প্যাসিফিক ইকনোমিক কো-অপারেশান' (এপেক)-এর শীর্ষ সম্মেলন। ৫ নভেম্বর শুরু হওয়া সম্মেলন চলবে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত। স্বাগতিক দেশ হিসেবে চীন 'বাণিজ্য, জ্বালানি ও শিল্প মন্ত্রী সম্মেলন', 'ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সম্মেলন' আর সদস্যরাষ্ট্রগুলোর শীর্ষনেতাদের অনানুষ্ঠানিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুত্থানের কঠিন সময় ও গত ২০ বছর ধরে এপেকভুক্ত দেশগুলোর আঞ্চলিক অর্থনীতি একত্রীকরণ প্রচেষ্টার পটভূমিতে এবারের এপেক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে:'যৌথভাবে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অংশীদারিত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা'। সম্মেলনের প্রধান তিনটি আলোচ্য বিষয় হচ্ছে: আঞ্চলিক অর্থনীতির একত্রীকরণ প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া; অর্থনীতির উদ্ভাবনমুখী উন্নয়ন, সংস্কার ও প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা; এবং সকল ক্ষেত্রে আন্তঃযোগাযোগ ও অবকাঠামো নির্মাণ জোরদার করা।
এপেক সম্মেলনের একটি ফোরামে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ঈ এপেকের অগ্রযাত্রা সম্পর্কে বলেন, গত ২৫ বছরে এপেকের সদস্যসংখ্যা ১২ থেকে বেড়ে ২১ হয়েছে এবং এপেকের সম্মেলনটি উন্নীত হয়েছে মন্ত্রী পর্যায় থেকে শীর্ষনেতা পর্যায়ে।এটি এতদঞ্চলের সবচে বড় সম্মেলন এবং এতে সবচে বেশি প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করে থাকেন। এপেকের আওতায় বিদ্যমান সহযোগিতার মানও সর্বোচ্চ। বস্তুত, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সহযোগিতা নিয়ে আলোচনার মূল প্লাটফর্মে পরিণত হয়েছে এই সম্মেলন।
১৯৮৯ সালের নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড ও আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোক্যানবেরায় এপেকের প্রথম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন আয়োজন করে। ১৯৯১ সালের নভেম্বরে চীন এপেকে যোগ দেয়। তখন বিশ্বে স্নায়ুযুদ্ধের মাত্র অবসান ঘটেছে এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ক্রমশ প্রশমিত হচ্ছে। তখন চলছিল অর্থনীতির বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া এবংআন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ক্রমশ বাড়ছিল। এসময় আঞ্চলিক জোটবদ্ধতার প্রবণতাও বাড়ছিল। এমনই প্রেক্ষাপটে বিশ্ব অর্থনীতিতে এশিয়ার গুরুত্বও ক্রমাগত বাড়তে থাকে।
এপেক সম্পর্কে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ঈ আরো বলেন, এপেক প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের এবং নবোদিত ও শিল্পোন্নত অর্থনৈতিক সত্তাগুলোকে যুক্ত করেছে। এর মাধ্যমে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলটি স্রেফ এক ভৌগোলিক ধারণা থেকে ধাপে ধাপে ২৮০ কোটি জনসংখ্যা আর বিশ্বের অর্ধেক অর্থনীতির অধিকারী দেশগুলোর এক সহযোগিতা সংস্থায় পরিণত হয়েছে। এপেকের সদস্যরাষ্ট্রগুলোর জনসংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ এবং তাদের সম্মিলিত জিডিপি'র পরিমাণ বিশ্বের মোট জিডিপির ৫৭ শতাংশ। এপেকভুক্ত দেশগুলোর বাণিজ্যের পরিমাণ বিশ্বের মোট বাণিজ্যের ৪৬ শতাংশ। বস্তুত, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল হচ্ছে বিশ্বের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি এবং এটা আজ সর্বজনস্বীকৃত।
চলতি বছরের মে মাসে চীনের উপকূলীয় শহর ছিংতাওয়ে এপেকের অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠা। সম্মেলনের পর প্রকাশিত 'ছিংতাও বিবৃতি' থেকে জানা যায়, এপেকের সদস্যরা 'এপেকের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল বাস্তবায়নের রোড ম্যাপ' প্রণয়ন করতে, এপেকের অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের তথ্য বিনিময় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে এবং এ অঞ্চলে বিশ্লেষণ ও গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করতে সম্মত হয়েছেন।
আসলে ২০০৬ সালে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। আর ২০১৩ সালে চীন এ অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়।