চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগের উপ-প্রধান সুন ইউয়ান চিয়াং এ প্রসঙ্গে বলেন, চীন আশা করে, শিগগিরই অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাস্তব প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং নিষ্ঠার সঙ্গে এ কাজ করার গুরুত্ব সবাই উপলব্ধি করবেন।আজকাল বিভিন্ন অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন ধরণের একত্রীকরণ প্রক্রিয়াও উত্সাহব্যঞ্জকভাবে চলছে। মানদণ্ড ও নিয়মও ভিন্ন। তাই বিভিন্ন ধরণের অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের চুক্তি বিচার-বিশ্লেষণ করা এবং এ নিয়ে গবেষণা করা দরকার। তারপর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করতে হবে।
বিগত তিন দশকের অধিক সময় ধরে চীনের অর্থনীতি দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে গেছে এবং এই অগ্রগতির সাথে অর্থনীতির বিশ্বায়নের সম্পর্ক রয়েছে। ২০০১ সালে চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যোগ দেয় এবং 'চীনে তৈরি' পণ্য বিশ্ব বাজারে ছড়িয়ে পড়ার বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা মতভেদের কারণে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার দোহা দফা আলোচনা অচলাবস্থায় পড়ে। তাই বেশ কয়েক বছরেও একটি বিশ্ব বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারেনি। ফলেবিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা গুরুতর হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। এর পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা ধরণের দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক বাণিজ্যিক সুবিধা গড়ে উঠেছে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের টিপিপি চুক্তি আছে। প্রশ্ন হচ্ছে: এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল এবংটিপিপি'র সম্পর্ক কী হবে? এ প্রসঙ্গে সুন ইউয়ান চিয়াং বলেন, এ প্রস্তাব এ অঞ্চলের বিদ্যমান কোনো অবাধ বাণিজ্য চুক্তির সাথে সাংঘর্ষিকহবে না। অর্থাত্ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হলে তা টিপিপি-র বিরুদ্ধে যাবে না। আসলে প্রস্তাবিত'এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল' বিদ্যমান এ ধরনের অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠিত হবে।
চলতি বছর বোয়াও এশিয়া ফোরামে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং বলেন, ¡°টিপিপি'র ব্যাপারে চীনের অবস্থান ইতিবাচক।কোনো চুক্তি যদি বিশ্ব বাণিজ্যের উন্নয়ন এবং ন্যায়সংগত ও উন্মুক্ত বাণিজ্যিক পরিবেশের জন্য অনুকূল হয়, তবে চীন আনন্দের সাথে তার সফলতা চাইবে।
অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠা ছাড়া চীন এশিয়ার অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। গত ২৪ অক্টোবর চীন ও ভারতসহ ২১টি সদস্যরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী ও প্রতিনিধিরা পেইচিংয়ে 'এশিয়ার অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক প্রতিষ্ঠাসংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক' স্বাক্ষর করেছেন। এ থেকে প্রতিপন্ন হয় যে, চীনের প্রস্তাবিত এশিয়ার নতুন বহুপাক্ষিক উন্নয়ন সংস্থার প্রস্তুতিমূলক কাজ নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। এখন বিশ্বের বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বিশ্ব ব্যাংক, ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক সহ মোট ১১টি। প্রতিষ্ঠিত হবার পর এশিয়ার অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক কী ভূমিকা পালন করবে? এ প্রসঙ্গে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের চীন কার্যালয়ের প্রধান প্রতিনিধি হামিদ শরিফ বলেন, এশিয়ায় অবকাঠামো নির্মাণের বিরাট চাহিদা আছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এশিয়ায় এ খাতে প্রতি বছর ৮০,০০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ দরকার। কিন্তু এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এ চাহিদার মাত্র ৫ শতাংশ সরবরাহ করতে পারে। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় এশিয়ার অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপুর্ণ তাত্পর্য আছে। এশিয়ার অনেক দেশ মনে করে, আরো বেশি অর্থ ও সম্পদ সংগ্রহ করে অবকাঠামো নির্মাণকাজে ব্যয় করা দরকার।
এশিয়ার অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক হচ্ছে বিশেষ করে এশিয়ার অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠিত আর্থিক সংস্থা। এটা হবে এশিয়ার একটি সরকারি বহুপক্ষীয় উন্নয়ন সংস্থা। বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকের পদ্ধতি ও মৌলিক নীতি অনুসরণ করে পরিচালিত হবে এটি। এর সদর দপ্তর থাকবেপেইচিংয়ে। চীনের অর্থমন্ত্রী লোং চি ওয়েই এ প্রসঙ্গে বলেন, এশিয়ার অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় চীনের প্রস্তাব দেওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য অর্থ সংগ্রহ বাড়ানো। আমরা এর জন্য দুটি কাজ করতে চাই। প্রথমত, আমরা বিদ্যমান বহুপক্ষীয় উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করবো এবং একে অপরের পরিপুরক হিসেবে কাজ করবো। দ্বিতীয়ত, আমরা নতুন কিছু উদ্ভাবন করবো। যেমন,আমরা আরো বেশি সামাজিক অর্থ অবকাঠামো নির্মাণ খাতে বিনিয়োগ করতে উত্সাহ দেবো। এটা বর্তমান অর্থনীতির পুনরুত্থানের জন্য ভালো হবে এবং ভবিষ্যতে চিরস্থায়ী অর্থনৈতিক উন্নয়নের শর্ত উন্নত করার জন্যও হিতকর প্রমাণিত হবে। (ইয়ু/আলিম)