Web bengali.cri.cn   
শানতুং প্রদেশে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ ও রপ্তানি
  2014-11-19 17:57:54  cri

চীনের প্রদেশগুলোর মধ্যে সবচে বেশি কৃষিপণ্য রপ্তানি হয় শানতুং থেকে। এই প্রদেশটিকে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার 'সবজির ঝুড়ি' নামেও ডাকা হয়। প্রদেশটির মোট রপ্তানিপণ্যের ৬০ শতাংশই কৃষিপণ্য। রসুন, আদা, ছত্রাক, চীনাবাদাম, সামুদ্রিক খাদ্য, মুরগির মাংস আর আপেল হচ্ছে এ প্রদেশের প্রধান রপ্তানি কৃষিপণ্য। শানতুং প্রদেশের লাইউ শহর আদা, রসুন আর পিঁয়াজ উত্পাদন ও রপ্তানির জন্য সুনাম অর্জন করেছে। আজকের অনুষ্ঠানে সিআরআইয়ের সংবাদদাতা আপনাদের বলবেন লাইউ শহরের উত্পাদিত আদার সমুদ্র পার হয়ে বিদেশে যাওয়ার গল্প ।

লাইউ শহরের ইয়াংচুয়াং থানার চুছুন গ্রামের প্রবেশপথে একটি টেলিগ্রাফ পোলের ওপর বড় লাউডস্পিকার আছে। প্রতি মৌসুমে জমি থেকে আদা তোলার সময় গ্রাম কমিটি এ লাউডস্পিকার দিয়ে কৃষকদের আদার ক্রয়মূল্য জানিয়ে দেয়। দাম গ্রহণযোগ্য হলে কৃষক আদা বিক্রি করেন। সাম্প্রতিক কালে আদার মূল্যে ব্যাপক ওঠানামা হতে দেখা যাচ্ছে। আদার দাম কখনো কমে, কখনো বাড়ে। দাম কমে গেলে অনেক কৃষক টাটকা আদা ভূগর্ভস্থ ঘরে সংরক্ষণ করেন। পরে যখন দাম বাড়ে, তখন তারা তা বিক্রির জন্য বের করেন।

এ প্রসঙ্গে কৃষক চু ফা হাংয়ের মন্তব্য হচ্ছে, যদি একটা নির্ধারিত ও গ্রহণযোগ্য দামে কোনো প্রতিষ্ঠান আদা ক্রয় করতো, তবে কৃষকদের ঝামেলা অনেক কমে যেত। তিনি বলেন, "সেক্ষেত্রে আমরা মন দিয়ে শুধু আদা চাষ করতে পারি, উত্পাদনের পর তা বিক্রি নিয়ে আমাদের ভাবতে হয় না। আদার বীজ, রাসায়নিক সার আর পানিসহ সব খরচ বাদ দিয়ে কিছু লাভ থাকলেই আমাদের চলে।"

চু ফা হাং যে-ধরনের প্রতিষ্ঠানের কথা বললেন, লাইউ ওয়ান সিং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কোম্পানি তেমনি এক শিল্পপ্রতিষ্ঠান। চীনের টাটকা আদা রপ্তানিকারক প্রথম বড় কোম্পানি হিসেবে ওয়ান সিং ২০০৪ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে ৬ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ করে এবং এ শহরের কোংচিয়াচোং গ্রামসহ চারটি গ্রামে মোট ১০ হাজার মু এলাকাজুড়ে আদা চাষ করার মানসম্পন্ন কেন্দ্র গড়ে তোলে। তা ছাড়া, কোম্পানিটি ৩০ হাজার মু জমি আছে এমন স্থানীয় তিনজন কৃষকের সঙ্গে আগাম ক্রয়চুক্তিও স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুসারে, বাজারে আদার দাম ভালো না-হলেও, ওয়ান সিং কোম্পানি নির্ধারিত দাম দিয়ে কৃষকদের উত্পাদিত আদা ও রসুন ক্রয় করবে।

কোম্পানিটির সাথে চুক্তির ফলে স্থানীয় আদা চাষীরা যেমন উপকৃত হয়েছেন, তেমনি ওয়ান সিংও দ্রুত আদা ও রসুন চাষ, ক্রম, মজুদ, প্রতিক্রিয়াকরণ ও রপ্তানিসহ সংশ্লিষ্ট সকল কাজ করা চীনের প্রথমশ্রেণীর কৃষি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তবে ওয়ান সিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে আদাভিত্তিক পণ্য উত্পাদন ও গবেষণা খাতে তেমন কোনো কাজ হয়নি। এ কোম্পানির মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক ছিন ইউয়ান ইউয়ান বলেন, "১৯৯৮ সালে এখানে একটি প্রক্রিয়াকরণ কারখানা ভাড়া করা হয়েছিল। তখন এ কারখানায় প্রধানত আদা ও রসুনের প্রাথমিক প্রক্রিয়াকরণ কাজ করা হতো, যেমন টাটকা আদার শিকড় কেটে ফেলা, ধুঁয়ে পরিষ্কার করে প্যাক করা ইত্যাদি।"

২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে কৃষিপণ্য হিসেবে রপ্তানি করা আদা টন প্রতি দাম ছিল ৬০০ মার্কিন ডলার। অথচ একই সময় যুক্তরাষ্ট্রের সুপার মার্কেটগুলোতে টুকরো করে কাটা প্রতি টন আদার দাম পরতো ৩০০০ মার্কিন ডলার। দামের এ বিরাট ব্যবধান দেখে ওয়ান শিং কোম্পানি উপলব্ধি করলো যে, কৃষিপণ্যের যথাযথ প্রক্রিয়াকরণ করে বিদেশি বাজারের দখল নেওয়ার মাধ্যমে অনেক বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব। এখন এ কোম্পানির উত্পাদিত উচ্চমানের আদাজাতীয় পণ্য জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার খাবার টেবিলগুলোর শোভা বাড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। ওয়ান সিং কোম্পানির কর্মকর্তা বি সি ছিয়াং জানান, সুসি আদার মতো পণ্য বাগান আর কৃষক পরিবারের জমি থেকে গ্রহণের পর কারখানায় নিয়ে ধারাবাহিক প্রক্রিয়াকরণের পর বিদেশে রপ্তানি করা হয়। তিনি বলেন, "কৃষক পরিবার হোক বা আমাদের নিজস্ব উত্পাদনকেন্দ্র হোক, সে সব স্থান থেকে সংগ্রহ করা আদা প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় প্রবেশের পর প্রথমে নমুনা বাছাই করে তৃতীয় পক্ষের কাছে যাচাই করার জন্য পাঠানো হয়। নমুনা চূড়ান্ত হলে আদায় লবণ দেওয়া হয়। তারপর তা টুকরো টুকরো করে কাটা হয়। কাটার পর আদা থেকে লবণ ও অ্যাসিড বের করতে হয়। তারপর তাতে কিচু রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হয়। অবশেষে সুসি আদা প্যাক করে বিক্রি করা হয়। এক কন্টেনার আদা প্রক্রিয়াকরণ করতে আমাদের দু'দিন সময় লাগে। প্রক্রিয়াকরণের পর পাঁচদিনব্যাপী ব্যবসা যাচাই করতে হয়। যাচাই করার পর কেবল পণ্য বিক্রি করা যায়।"

পণ্য প্যাক করার পর সংশ্লিষ্ট পণ্য আমদানিকারক দেশে পাঠানো হয়। দক্ষিণ কোরিয়া হচ্ছে এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমদানিকারক দেশ। শানতুং প্রদেশের ইয়ানথাই চিয়াসু আন্তর্জাতিক পণ্য স্থানান্তর লিমিটেড কোম্পানির দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বড় আন্তর্জাতিক ফ্লাইট নেটওয়ার্ক আছে। এ কোম্পানির প্রধান ব্যবস্থাপক চাং খাই ঈ সংবাদদাতাকে বলেন, "কৃষিপণ্য রপ্তানির পদ্ধতি একটু ভিন্ন। সাধারণত খরিদ্দার আমাদের জানান, নির্ধারিত দিন সকালে কী পরিমাণ কন্টেনার তাদের দরকার। জানার পরপরই আমরা প্রথম রাতেই ইয়ানথাই থেকে কন্টেনার গাড়ি পাঠাই। পরের দিন সকালে তা নির্ধারিত স্থানে পৌঁছায় এবং পণ্য বোঝাই করে বিকেল সাড়ে চারটা বা পাঁচটায় বন্দরে পৌঁছায়। বন্দরে সব প্রক্রিয়া শেষ করে পণ্যগুলো জাহাজে উঠিয়ে দিই। পরের দিন সকালে পণ্য পৌঁছে যায় দক্ষিণ কোরিয়ায়।"

চাং খাই ঈ মনে করেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পন্যের মান নিশ্চিত করা সবচে জরুরি। তা ছাড়া, পণ্য যথাসময়ে ক্লায়েন্টের হাতে পৌঁছানোও জরুরি। এক্ষেত্রে শৈথিল্য বা অদক্ষতা পণ্যের প্রতিযোগিতার শক্তি কমিয়ে দেবে। তিনি উল্লেখ করেন, চলতি বছরের জুলাই মাসে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং দক্ষিণ কোরিয়া সফর করার আগে চীনের ইয়ানথাই থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার পিয়োংতায়েক পর্যন্ত যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচল আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। এ জাহাজ চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা জোরদার করেছে। তা ছাড়া, প্রেসিডেন্ট সি চলতি বছরের মধ্যে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবও দিয়েছেন। চাং খাই ঈ মনে করেন, অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হলে দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের পণ্য রপ্তানি আরো বাড়বে। (ইয়ু/আলিম)

মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040