চীনের 'আমদানি ও রপ্তানি পণ্য মেলা' তথা 'কুয়াংচৌ মেলা' দক্ষিণ চীনের কুয়াংচৌ শহরে শুরু হয় গত ১৫ অক্টোবর; চলবে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত।
কুয়াংচৌ মেলার তথ্য মুখপাত্র লিউ চিয়ান জুন বলেন, এবার কুয়াংচৌ মেলায় অংশগ্রহণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং দর্শকের সংখ্যা আগেরবারের তুলনায় বেড়েছে। প্রিয় শ্রোতা, এখন শুনুন মেলাসম্পর্কিত একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন।
রাষ্ট্রীয় শুল্ক প্রশাসনের উপাত্ত অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে চীনের আমদানি ও রপ্তানির মোট পরিমাণ ছিল ৭ ট্রিলিয়ন ইউয়ান রেনমিনপি, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭.২ শতাংশ বেশি। সেপ্টেম্বর মাসে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৫.১ শতাংশ, যা চলতি বছরের একটি নতুন রেকর্ড। এ থেকে বোঝা যায়, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ধাপে ধাপে উন্নত হচ্ছে। কুয়াংচৌ মেলার মুখপাত্র, চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য কেন্দ্রের উপ-পরিচালক লিউ চিয়ান চুন বলেন, 'এবার কুয়াংচৌ মেলা বসেছে ১১ লাখ ৮০ হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে। মেলায় মোট ৬০,২২২টি স্টল আছে, অর্থাত আগের মেলার তুলনায় ৫১৪টি বেশি স্টল আছে এবারের মেলায়। মোট ২৪,৭৫১টি দেশি-বিদেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠান এ মেলায় অংশ নিচ্ছেন। আগের মেলার তুলনায় এবার ১৭০টি বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে । উল্লেখ করা যেতে পারে, আগের কুয়াংচৌ মেলায় অংশগ্রহণকারী শিল্প-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯০ শতাংশই এবারের মেলায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করেছে।'
আকার, পণ্যের বৈচিত্র্য, অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা ইত্যাদি বিচারে চীনের সবচেয়ে বড় এই বিশ্ব বাণিজ্য মেলাটি প্রতি বছর বসন্ত ও শরত্কালে কুয়াংচৌ শহরে অনুষ্ঠিত হয়। এ মেলার প্রায় ৬০ বছরের ইতিহাস রয়েছে। চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের উন্নতি এবং চীনকে বিশ্বের সবচে বড় বাণিজ্যের দেশ থেকে অন্যতম শক্তিশালী দেশে পরিণত করার প্রক্রিয়ায় কুয়াংচৌ মেলা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে।
এবারের কুয়াংচৌ মেলায়ও আগের মতো তিনটি পর্যায়ে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রাখা হয়। খাদ্য, আসবাবপত্র থেকে যন্ত্রপাতি পর্যন্ত ৬০টিরও বেশি পণ্য মেলায় প্রদর্শিত হয়। প্রথম পর্যায়ের প্রদর্শনীতে নতুন যোগ দিয়েছে জ্বালানি আর দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রদর্শনীতে নতুন যোগ দিয়েছে পোষা প্রাণী সংশ্লিষ্ট পণ্য।
সৌর শক্তি, ভূগর্ভস্থ তাপ, বায়ুশক্তি আর সামুদ্রিক শক্তি সম্পর্কিত অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান নতুন জ্বালানি প্রদর্শনীতে অংশ নেয়। ছাংচৌ থিয়ান হো আলোক শক্তি কোম্পানির উত্তর চীনের বিক্রি বিষয়ক প্রধান তত্ত্বাবধায়ক চাও নেং বলেন, এবারের কুয়াংচৌ মেলায় নতুন জ্বালানির প্রদর্শনী বিশ্বে চীনের নতুন জ্বালানি শিল্পের প্রভাব বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন, 'কুয়াংচৌ মেলায় এ প্রথমবার নতুন জ্বালানির প্রদর্শনী হয়। এর দুটি উদ্দেশ্য আচ্ছে। প্রথমত, নতুন জ্বালানির ব্যাপারে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়ানো; দ্বিতীয়ত, চীনের নতুন জ্বালানির সহযোগী অংশীদার ও কারখানাগুলোকে একই প্লাটফর্মে নিয়ে আসা এবং বিশ্বকে জানানো যে, নতুন জ্বালানির উত্পাদনকেন্দ্র থাকবে চীনে।'
সর্বশেষ উপাত্ত অনুযায়ী, গতবছরের জুলাই মাস থেকে চীনের ফোটোভোল্টেক শিল্প লোকসান কাটিয়ে মুনাফা করছে। চাও নেং বলেন, 'চলতি বছরে তৃতীয় ও চতুর্থ প্রান্তিকে চীনের সৌরশক্তি শিল্পের চাহিদা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। এখন এ শিল্পখাত উত্সাহব্যঞ্জকভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে। আমরা কুয়াংচৌ মেলার মাধ্যমে সৌরশক্তিসংশ্লিষ্ট পণ্যের বিক্রি বাড়ানোর ব্যাপারে আস্থাবান।'
বর্তমান বিশ্বের প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্রমাগত অবনতি ঘটছে। সবুজ পরিবেশ সুরক্ষার উপলব্ধিও তাই দিন দিন গভীরতর হচ্ছে। রুইফেং থোং দা শিল্প লিমিটেড কোম্পানির বোর্ডের চেয়ারম্যান মাং হাও ফেই বলেন, সবুজ জ্বালানি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার শক্তি অর্জন করতে চাইলে পণ্য রপ্তানির পরিমাণ বাড়ানোর পাশাপাশি পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে এবং নবায়ন ও উদ্ভাবনের সামর্থ্যও বাড়াতে হবে। তাদের কোম্পানির উত্পাদিত বায়ুশক্তি চালিত ছোট বিদ্যুত্ উত্পাদন যন্ত্র মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ আমেরিকা আর ইউরোপীয় বাজারে বিক্রয় হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
মাং হাও ফেই বলেন,'যদিও দেশের গোটা অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব সামান্যই, নতুন পণ্য ও প্রযুক্তি থাকলে এ খাতের ভবিষ্যত উজ্জ্বল। আমাদের পণ্যের রপ্তানি ক্রমাগত বাড়ছে।'
এবারের কুয়াংচৌ মেলায় চীনের ডজনখানেক প্রদেশের ৮০টি নতুন জ্বালানি শিল্প-প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। নতুন জ্বালানি প্রদর্শনীর প্রথম দিনেই সহস্রাধিক দেশি-বিদেশে ব্যবসায়ী এসব শিল্প-প্রতিষ্ঠানের স্টলগুলো পরিদর্শন করেন এবং নতুন জ্বালানির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। (ইয়ু/আলিম)
| ||||