প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনছেন। আমি --- পেইচিং থেকে আপনাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
আজকের সুরের ধারা আসরে আপনাদের চীনের কয়েকটি প্রাচীন সুর শোনাবো। আশা করি, সুরগুলো আপনাদের ভালো লাগবে।
সাধারণত প্রাচীনকালের হান জাতির বিখ্যাত সুরকে চীনের প্রাচীন সুর বলা হয়। এ প্রাচীন সুরগুলো বেশির ভাগ ছিল যন্ত্র সংগীত। এর মধ্যে অনেক সুর প্রাচীনকালের কবিরা সৃষ্টি করেছেন। এই সুরগুলো হচ্ছে হান জাতির সাংস্কৃতিক সম্পদ এবং হান জাতির সংগীতের শিকড়।
প্রথমে শুনুন 'উচু আকাশের চাঁদ' নামের সুরটি। এ সুরটি পিপা দিয়ে বাজানো একটি বিখ্যাত সুর। এর সুরকারের নাম ও সৃষ্টির সাল আজো কেউ জানে না। তবে চীনারা মনে করেন, এ সুরটি হচ্ছে যন্ত্র সংগীতের মাধ্যমে চাঁদের রূপ বর্ণনা করার একটি শ্রেষ্ঠ কাজ। এ সুরটিতে চাঁদ ওঠা থেকে পশ্চিমে ঢুবে যাওয়া পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হয়েছে। সুরটি শুনতে শুনতে নৃত্যের অনুভূতি হবে আপনার মনে। এই সুরের মধ্যে থাং রাজবংশের সংগীতের ভাব রয়েছে।
বন্ধুরা, প্রাচীনকালে মধ্য চীনে অবস্থানরত হান জাতির কেন্দ্রীয় সরকার আর প্রত্যন্ত অঞ্চলের সংখ্যালঘু জাতির স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে প্রায়ই সংঘর্ষ ঘটতো। এই ধরনের সংঘর্ষ নিরসনের প্রধান উপায় ছিলো যুদ্ধ। সুন্দরী মেয়েকে সংখ্যালঘু জাতির সর্দারের সঙ্গে বিয়ে দেয়াও সংখ্যালঘু জাতিগুলোর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বাস্তাবায়নের একটি উপায় ছিলো। ওয়াং চাও জুন ছিলেন হান রাজবংশের একজন অতি সুন্দরী মেয়ে। তিনি হান সম্রাটের মেয়ে বা কন্যার মর্যাদায় সংখ্যালঘু জাতির সর্দারকে বিয়ে করেন। এবার শুনুন তাঁর কাহিনী বর্ণীত সুর 'ওয়াং চাও জুন'।
হান রাজবংশের সঙ্গে বংশানুক্রমে বন্ধুত্ব বজায় রাখার জন্য খৃষ্টপূর্ব ৩৩ সালে দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সংখ্যালঘু সিউননু জাতির সর্দার হুহানসিয়ে হান রাজবংশের রাজধানী ছানআনে আসেন। তিনি রাজার কাছে তাঁর একটি মেয়েকে বিয়ে করার অনুরোধ জানান। রাজা হুহানসিয়ে এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেন। কিন্তু তিনি নিজের মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজী নন। তাই রাজা রাজপ্রাসাদের পরিসেবার কাজে নিয়োজিত সহচরীদের জানান, তাদের মধ্যে যিনি সিউননুর সর্দারকে বিয়ে করতে রাজী হবেন, তাকে রাজা রাজকুমারী হিসেবে গণ্য করবেন।
এ খবর জেনে, নিজের সুখি জীবন আর হান রাজবংশ ও সিউননু জাতির শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কথা বিবেচনা করে ওয়াং চাও জুন সিউননুর সর্দারকে বিয়ে করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। রাজা এই খবর পেয়ে খুবই খুশি হন এবং রাজধানী ছানআনে যথাযোগ্য মর্যাদায় সর্দার হুহানইয়ে ও ওয়াং চাও জুনের বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
ওয়াং চাও জুন সুন্দর লাল জামা পরে একটি সাদা রঙের ঘোড়ার পিঠে বসে হান রাজবংশ ছেড়ে সিউননুর লোকদের সাথে রাজধানী ছানআন ত্যাগ করেন। প্রথম দিকে ওয়াং চাও জুন সিউননু জাতির জীবন ও রীতিনীতি সম্বন্ধে অভ্যস্ত ছিলেন না। কিন্তু পরে তিনি এই অসুবিধা দূর করার চেষ্টা করেন এবং সিউননু জাতির লোকদের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক স্থাপন করেন।
ওয়াং চাও জুন সিউননু জাতির সাথেই তার বাকী জীবন কাটান। তিনি সেখানে হান জাতির সংস্কৃতি প্রচার করেন। তার ছেলেমেয়েও তার মতো হান জাতি ও সিউননু জাতির মৈত্রীময় সম্পর্ক প্রসারের প্রয়াস চালান। বর্তমানে চীনের অন্তর্মঙ্গলিয়ার হুহোহাওটে শহরের উপকন্ঠে ওয়াং চাও জুনের সমাধিস্থল আছে। প্রাচীনকালের সিউননু জাতির জনগণ হান জাতির এই মৈত্রী দূতের স্মৃতি রক্ষার জন্য এই সমাধিস্থল তৈরি করেন। চীনের ইতিহাসে ওয়াং চাও জুনের কাহিনী বিখ্যাত।
শ্রোতাবন্ধুরা, এতোক্ষণ আপনারা সুরের তালে তালে চীনের হান রাজবংশের সৌন্দরী ওয়াং চাও জুনের কাহিনী শুনলেন।
এবার শুনুন 'সবুজ পদ্ম' নামের একটি মিষ্টি সুর। এ সুরটি ছিং রাজবংশের শেষ দিকে কয়েকটি জনপ্রিয় পিপা সুর দিয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। বিংশ শতাব্দীর ৩০'র দশকে মি: সুন ইয়ু দে এ সুরকে নতুন করে সাজিয়েছেন। সুরটিতে চাঁদের আলোয় বসে বন্ধুদের সঙ্গে মদ্যপান করে গল্প করা, নৃত্য করা আর গাছপালা দেখার দৃশ্য বর্ণনা করা হয়েছে।
বন্ধুরা, অনুষ্ঠানের শেষে শুনুন 'সিয়াও শিয়াং সুই ইয়ুন'নামের সুরটি। এ সুরটি হচ্ছে সোং রাজবংশের সুরকার কুও ছুন ওয়াংয়ের প্রতিনিধিত্বশীল কর্ম। সুরটি সিয়াও নদীতে মেঘের ছায়া বর্ণনা করার মাধ্যমে দেশের নদনদী ও পাহাড়ের প্রতি সুরকারের ভালোবাসা প্রতিফলিত হয়েছে। এই সুর চীনের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র গুছিন দিয়ে বাজানো হয়। শুনুন তাহলে।
শ্রোতাবন্ধুরা, এতোক্ষণ আপনারা চীনের কয়েকটি প্রাচীন সুর শুনলেন। আশা করি, আপনাদের ভালো লেগেছে। এ পর্বের সুরের ধারা আসর এ পর্যন্তই। আমি বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। (ইয়ু/মান্না)
| ||||