Web bengali.cri.cn   
নতুন 'রেশম পথের' নতুন বাণিজ্যিক সুযোগ:চীন ও ভারতের ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা
  2014-08-11 17:11:30  cri

চীনের সদ্যসমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় গণকংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশনে সরকারি কার্যবিবরণীতে ২০১৪ সালের গুরুত্বপূর্ণ কাজ প্রসঙ্গে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খে চিয়াং বলেন:¡°রেশম পথ অর্থনৈতিক অঞ্চল, একবিংশ শতাব্দীর সামুদ্রিক রেশম পথ এবং বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমার এবং পাক-চীন অর্থনৈতিক করিডোর নির্মাণকাজ জোরদার করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, নতুন 'রেশম পথ' নির্মাণ এ অঞ্চলের বাণিজ্যের জন্য নতুন সুযোগ বয়ে আনবে।

ভারতের বিখ্যাত যন্ত্রপাতি আমদানি-রপ্তানি শিল্পপ্রতিষ্ঠান --- মেহালা গ্রুপের চেয়ারম্যান এস. ভরথ চীনের সংস্কৃতিকে ভালোবাসেন। তিনি চীনে এম.বি.এ করেছেন এবং অনর্গল চীনা ভাষা বলতে পারেন। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খে ছিয়াংয়ের 'রেশম পথ অর্থনৈতিক অঞ্চল' প্রতিষ্ঠার কথা শোনার পর তিনি বলেন, চীন সরকারের নীতিগত সমর্থনে চীনের সাথে বাণিজ্য থেকে তাঁর কোম্পানি আরো বেশি উপকৃত হবে। তিনি বলেন, "চীনের প্রধানমন্ত্রীর ধারণা প্রশংসনীয়। চীন ও ভারত প্রতিবেশী রাষ্ট্র। আমি বিশ্বাস করি, তাঁর এ ধারণা অবশ্যই চীন ও ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো উন্নত করবে। দু'দেশের দ্বিপাক্ষিক বিনিময় ও বাণিজ্যওএতে আরো লাভবান হবে।"

২১০০ বছর আগে চীনের দূত চাং ছিয়েন দু'বার পশ্চিমাঞ্চল সফর করেন এবং ইউরোপ ও এশিয়াকে সংযুক্তকারী এক স্থলভিত্তিক 'রেশম পথ' উন্মোচন করেন। ৭০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ রেশম পথ হচ্ছে তত্কালীন চীনের সভ্যতার প্রতীক। 'রেশম পথ' সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় আদান-প্রদানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, সুদূরপ্রসারী বাণিজ্যিক মূল্যও সৃষ্টি করেছে। এ পথ প্রাচ্য ও পশ্চিমের বিনিময়ের বাধা দূর করেছে।

সম্প্রতি 'ইন্ডিয়ান টাইমস' ও 'দ্য হিন্দুস্তান টাইমস' সহ ভারতের বিভিন্ন তথ্যমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, চীন আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হয়েছে। ভারতের পাঞ্জাব-হরিয়ানা-দিল্লি বণিক সমিতির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩থেকে ২০১৪ অর্ধবছরের প্রথম নয় মাস চীন ও ভারতের বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল ৪৯৫০কোটি মার্কিন ডলার, যা ভারতের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের ৮.৭ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে এস ভরথ বলেন, "সম্প্রতি ভারতে প্রকাশিত উপাত্ত অনুযায়ী, চীন এখন ভারতের শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হয়েছে। ভারতে চীনের বাণিজ্যিক মর্যাদা স্পষ্ট। আমি বিশ্বাস করি, আন্তর্জাতিক বাজারে চীন দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান করতে থাকবে।"

দু'হাজার বছর আগে চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যকার সামুদ্রিক 'রেশম পথ'-এর সূচনা হয়েছিল। চীনের প্রাচীন গ্রন্থ 'হানসু'তে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ চীন সাগর ও ভারত মহাসাগরের গমনপথের অপেক্ষাকৃত সম্পূর্ণ রেকর্ড উল্লেখ করা হয়। এ গ্রন্থে 'হুয়াং চি কুও' নামের যে জায়গার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেটি বর্তমান ভারতের তামিলনাডু রাজ্যের রাজধানী চেন্নাই। চীনা ব্যবসায়ী ইয়াং লি মিন গত বছরের জুন মাসে চেন্নাইয়ে গিয়ে এক আন্তর্জাতিক নির্মাণশিল্পের প্রদর্শনীতে অংশ নেন। ইয়াং লি মিনের নেতৃত্বাধীন চেচিয়াং চিনহুও গোষ্ঠি চেচিয়াং প্রদেশের উচ্চ ও নতুন প্রযুক্তি শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিসেবে তার প্রযুক্তিগত প্রাধান্য আর শ্রেষ্ঠ পরিসেবা দিয়ে ধাপে ধাপে ভারতের বাজারে প্রবেশ করেছে। ভারতীয় ক্রেতাদের চাহিদা অনুসারে এ কোম্পানি পণ্য উত্পাদন করে এবং দিনে দিনে কোম্পানিটি ভারতীয় ক্রেতাদের কাছে আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ গোষ্ঠির প্রধান ইয়াং লি মিন ভারতের বাজার নিয়ে আশাবাদী। তিনি জানালেন, প্রধানমন্ত্রী লি খে চিয়াংয়ের সরকারি কার্যবিবরণী তাঁকে আরো বেশি আস্থাবান করেছে; তার প্রত্যাশা বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, "সরকার অনুমোদন প্রক্রিয়ার জটিলতা হ্রাস করেছে। আমাদের পণ্য রপ্তানির জন্য এর ইতিবাচক তাত্পর্য রয়েছে। অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজ করলে বাণিজ্যিক লেনদেন অবশ্যই আরো গতিশীল হবে। এ ছাড়া, সরকার বিদেশে বিনিয়োগনীতি সুসম্পন্ন করেছে। এটা চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও বিদেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিনিময় প্রক্রিয়াকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। রেশম পথের মাধ্যমে আমরা ভারতের বাজারে প্রবেশ করতে সক্ষম হবো।"

ভারতের তথ্যমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, গত দশ বছর চীন ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল গড়ে ৪০ শতাংশ। এ হার চীনের সাথে অন্যান্য দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধির হারের প্রায় দ্বিগুণ। চীন হচ্ছে ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। আর ভারত হচ্ছে চীনের দশম বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। বিশ্বের এ দুটি বৃহত্তম নবোদিত অর্থনৈতিক সত্তার সহযোগিতা দু'দেশের ২৫০ কোটি মানুষের জন্য কল্যাণ সৃষ্টি করবে।

চীন ও ভারতের বাণিজ্য খাতের ভবিষ্যত চাহিদা প্রসঙ্গে এস ভরথ বলেন, "আমি আশা করি, চীন আরো বেশি উচ্চ প্রযুক্তি, গুণগত মানসম্পন্ন ও উপযুক্ত দামের পণ্য উত্পাদন করবে। এটা চীনের বাণিজ্যিক অবস্থার জন্য ভালো এবং আমার মতো আমদানিকারকরা এতে উপকৃত হবে। এটা ভারতের বাজারের জন্যও ভালো।"

চীনের নেতাদের প্রস্তাবিত 'রেশম পথ অর্থনৈতিক অঞ্চল' এবং 'বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর' প্রতিষ্ঠার ধারণা পশ্চিম এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ওদক্ষিণ এশিয়ার বহু দেশের কাছ থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং নয়াদিল্লীতে চীনের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলার ইয়াং চিয়ে ছির সঙ্গে বৈঠককালে বলেন, ভারত ও চীনের উচিত অব্যাহতভাবে দু'দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার সম্পর্ককে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। ভারত সক্রিয়ভাবে 'বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর' এবং 'রেশম পথ অর্থনৈতিক অঞ্চল' নির্মাণকাজে অংশ নেবে বলেও তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, এ অর্থনৈতিক করিডোরের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ভারত নতুন ভূমিকা পালন করবে এবং চীন ও ভারতের ব্যবসায়ীরা এ নতুন বাণিজ্যিক সুযোগ থেকে উপকৃত হবেন। (ইয়ু/আলিম)

মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040